কাছ থেকে দেখা মীর কাশেম আলী
লিখেছেন লিখেছেন আবু আদিনা ০৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:১৩:৪৭ সকাল
লেখালেখির অভ্যাসটি আগে থেকেই কম ছিল। আর এখনতো ছেলে-মেয়ে সংসার সবকিছু সামলিয়ে তেমন সময় পাওয়া যায় না। এরপরেও মাঝে মাঝে মনে হয় লিখি। আর ব্লগে লেখার তেমন আগ্রহ নাই। এর প্রধান কারন হল লেখাটা যদি কারো মতের বিপক্ষে যায় তখনি কিছু সংখ্যক মন্তব্যকারির অসভ্য মন্তব্য দেখলে আর লিখতে ইচ্ছে করেনা। অবশ্য ঐ সমস্ত বাজে মন্তব্যকারিদের অবস্থা এমন যে যাদের কাছে সত্যকে সত্য বলে গ্রহন করা এবং মিথ্যাকে প্রত্যাখান করার মত মানসিকতা আশা করাই যেন হলো অরন্য রোদন। অবশ্য আল্লাহ যদি কাউকে সত্য গ্রহন করার মতো জ্ঞান বা বুঝ দান করেন সেটা অবশ্যই আলাদা কথা।
বেশ কিছুদিন যাবত মীর কাশেম আলী সাহেবকে নিয়ে খুব কাছে থেকে দেখার যে সুযোগ হয়েছিল সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখব ভাবছিলাম। কিন্ত আবার সেই ব্যস্ততায় আর লেখা হয়ে ওঠেনি। কিন্ত প্রাক্তন সংসদ সদস্য মি: গোলাম মাওলা রনির "মীর কাশেম আলীর মন খারাপ!" লেখাটি পড়ে ঘটনার সাথে মিলিয়ে দেখলাম সে যেন মীর কাশেম আলী সাহেবের ব্যপারে আমার অভিজ্ঞতা বা মনের কথাগুলি হুবহু লিখে দিয়েছেন। আমি সে লেখাটির সাথে কিছু কথা সংযোজন করতে চাই।
সময়টা August 2010, মীর কাশিম আলী সাহেব USA ভ্রমন করেন। উদ্দেশ্য ছিল দিগন্ত মিডিয়ার শেয়ার হোল্ডার সংগ্রহ এবং দিগন্ত tv র সম্প্রসার। সে জন্যে তিনি Michigan এ আসেন। আর তখনি বাংলা মিডিয়ায় তাকে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনি প্রচার হতে থাকে। দেশে ফিরে যাবার আগ পর্যন্ত তিনি head line news ছিলেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলনা, টক শো টকার সহ। এ ব্যপারে বিস্তারিত সকল পাঠকেরই জানা থাকার কথা।
Michigan এ বাংলাদেশি অধ্যুষিত একটি এলাকা আছে যার নাম Hamtramck আর Detroit এর কিছু অংশ। ভাল আর দুষ্ট লোক সব জায়গায় বাস করে। সংখ্যায় কম আর বেশি এই যা পার্থক্য। মীর কাশেম সাহেবের উদ্দেশ্য যাতে ব্যঘাত না ঘটে সে আলোকেই স্থানীয় পুরান শেয়ার হোল্ডারগন এবং এক সময়ে যারা বাংলাদেশে ইসলামি আন্দলনের সংস্পর্শে ছিলেন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় তার থাকার ব্যবস্থা করা ঠিক হবে না। কারন হলো তাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা শুরু হয়ে যাবে এবং তিনি যে উদ্দেশ্যে এসেছেন তা ব্যহত হবে।
আমি যেহেতু উপরেল্লিখত এলাকা থেকে একটু দূরে অন্য একটি সিটিতে থাকি তাই কিছু ভাইয়েরা আমার কাছে প্রস্তাব করলেন আমি তাকে ২/৩ দিন এর জন্য মেহমানদারি করতে পারব কিনা? আমি আমার স্ত্রীর সাথে আলাপ করে জানাব বলেছি। যেহেতু আমার স্ত্রীর স্কুলের ছুটি চলছিল সে খুব খুশি হয়ে বল্ল এটাতো আমদের সৌভাগ্য যে, আমরা কাউকে মেহমানদারি করার সুযোগ পাব।
শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের মেহমান হলেন। জীবনে এই প্রথম বারই আমি তাকে সন্মুখ থেকে দেখলাম। এর আগে শুধু মিডিয়াতে দেখেছি। আমার শ্বশুর ও শ্বাশুরী এর কিছু দিন পূর্বে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী এবং আমার শ্বাশুরী মিলে মেহমানের আতিথিয়তার জন্য যত প্রকার আইটেম আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল করার চেষ্টা করেছি। খাবারের মেন্যুর সংখ্যা বলতে পারব না তবে এতটুকু অবশ্যই বলতে পারব যে আমার এমেরিকার আঠার বছরের জীবনে এতগুলি আইটেম একসাথে রান্না করার সুযোগ এবং সময় হয়নি।
Detroit এবং Hamtramck থেকে আরো অনেক ভাই বোনদেরকে আমন্ত্রন করা হলো। সবাই আসলেন। খাওয়া-দাওয়া হলো। আমার মনে হলো সবাই তৃপ্তি সহকারে খেলেন এবং প্রশংসা করলেন। কিন্ত যে শিক্ষাটা মীর কাশেম আলী সাহেব আমাকে দিয়ে গেলেন তা কোনদিনই হয়ত ভুলব না। শুধু তাই নয়, যখন এই ধরনের বহু আয়জনের কোন জায়গায় মেহমান হই তখন সাথে সাথে সেই কথাটি মনে পড়ে যায়। তিনি আমাদের ঘরে তিনদিন মেহমান ছিলেন। আমরা চেষ্টা করেছি সাধ্যমত আপ্যায়ন করতে। তিনি চলে যাবার আগের রাতে তার সাথে কথা হচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গ এ উনি বল্লেন, তোমাদের আতিথিয়তায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। এত আইটেম কেন করতে গেলে? উনি আমাকে যেন বুঝাতে চাইছিলেন যে, কত মানুষ দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পায়না সেখানে এত আয়জন করা কি ঠিক? পাছে আমি আবার মনে কষ্ট না পাই সেদিক বিবচনা করে এমন অসাধারনভাবে আমাকে বল্লেন খাবারের আইটেম করতে হয় ২/৩টা। তাহলে খেয়ে বেশি মজা পাওয়া যায়।
ওনাকে আমার আরো দুই বন্ধুসহ ফোর্ড মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। সেখানকার থিয়েটার তখন স্পেস এর উপর একটা ডকুমেন্টারি চলছিল। সেটি ছিল মহাকাশ বিজয়ের উপরে। থ্রিডি চশমা পরে হলে প্রবেশ করতে হয়। আবার বের হবার সময় চশমা ফেরত রেখে দেয়। এই চশমা দিয়ে দেখলে মনে হয় সবকিছুই যেন জীবন্ত। হল থেকে বের হবার পরে আমরা তাকে বল্লাম বাংলাদেশে এমন প্রেক্ষাগৃহ নির্মান করে এই ধরনের জ্ঞান আরোহনমূলক মুভি প্রদর্শন করতে পারলে মানুষ অনেক কিছু খুব সহজে জানতে পারত। বাংলাদেশে এমন সব দর্শক আছেন যারা নোংরামির জন্য সিনেমা হলের কাছেও যান না। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বল্লেন দেশের রাজনিতি যদি স্থিতিশিল হয় এবং তা মানুষের কল্যানের জন্য করা হয় তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
এরপর দিন মীর কাশেম আলী সাহেব নিউইর্য়ক যাবেন। জানতে পারলাম নিউইর্য়ক এ ওনার এক ভাই এবং নিউজার্সিতে আরেক ভাই বসবাস করেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গাসা করলাম, আপনি কেন আমেরিকার গ্রীন কার্ড নিচ্ছন না? আপনার ভাইয়েরা যেহেতু অনেক বছর এখানে থাকেন তারা এপ্লাই করলে তো আপনার অনেক আগেই এখানে চলে আসার কথা। উনি খুব সরলভাবে বল্লেন আমি কখনোই আমেরিকায় থাকব না। এমন কি যদি এখানকার বড় পদমর্যদাও দেয়া হয়।
এরপর মেহমানের যাবার পালা। আমার অন্য প্রোগ্রাম থাকার কারনে এয়ারপোর্ট ওনাকে নিয়ে যেতে পারিনি। আমার এক বন্ধু ওনাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবেন। উনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরপর আমার কাছে একটি কেচি চাইলেন। বাথরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়ি-মোচ ঠিক করতে ছিলেন। আর আমি বাথরুমের সামনের দরজায় দাড়িয়ে তার সাথে কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে আমি তাকে বল্লাম মিডিয়ার এত প্রপাগান্ডার পরেও দেশে যাবেন? অবস্থা দেখে মনে হয় আপনাকে তো এয়ারপোর্ট থেকেই গ্রেফতার করবে। এরপর আরো অনেক কিছুই হতে পারে। যা গোলাম মাওলা রনি উল্লেখ করেছেন। উনি খুব সহজভাবে বল্লেন, আপনি ভয় পান? আর জিবন মৃত্যুর ফয়সালা তো আসমানে হয় জমিনে নয়। আর এমন কোন অন্যায় করিনি যে জন্য আমি ভয় পাব। এরপর এ ব্যপারে আর কোন কথা হয় নি। শুধু আমার নিজের মনের কাছে একটা প্রশ্ন বারবার উদয় হচ্ছিল। নিজের প্রতি কতটা স্বচ্ছ এবং নিষ্পাপ হলে এ ধরনের উত্তর দেয়া যায়। যারা পাপ করে অথবা কখনো কোন অন্যায়কাজে লিপ্ত থেকে থাকে তাদের থেকে এ ধরনের জবাব কখনই আশা করা যায় না।
এর উদাহরন অনেক দেয়া যাবে। শুধুমাত্র একটি উদাহরন দিয়েই আজকের লেখার ইতি টানব। বিজ্ঞানের ছাত্র থাকার কারনে উচ্চমাধ্যমিকের পরে আমার বাংলা ছিল না। কিন্ত এরপরও বন্ধুদের থেকে নিয়ে ডিগ্রী ক্লাসের বাংলা গল্প সংগ্রহ বইটার সবগুলো গল্পই পড়েছিলাম। তার মধ্যে একটা গল্পের নাম ছিল প্রাগৈতিহাসিক। গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম ছিল ভিক্ষু। তার পেশা ছিল ডাকাতি, খুন, এবং নারী ধর্ষন। সে খুবই জঘন্য ছিল যেখানেই ডাকাতি করত তার প্রধান আকর্ষন ছিল নারী ধর্ষন। কোন একদিন ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহকর্তার আক্রমনে পায়ে ভিষন আঘাতপ্রাপ্ত হল। একপর্যায়ে তার এক পা কেটে ফেলতে হল। তদপুরি সেখানে পচন ধরেছিল। এরপর তার আর্থিক অবস্থা শোচনিয় আকার ধারন করল। যে কারনে তাকে ভিক্ষার পথ বেছে নিতে হল। বয়সের শেষ প্রান্তে উপনিত হয়ে এত অধপতনের পরেও তার সেই পুরানো দিনের অভ্যাস নারির প্রতি তার কুদৃষ্টির কোন পরিবর্তনই হল না। যদিও কোন উপায়ে তার নোংরামি চরিতার্থ করার মত তার কোন সামর্থ্য ছিলনা তারপরেও তার সেই কুৎসিত মনের লালসা চরিতার্থ করার জন্য যখন নদীর ঘাটে মেয়েরা গোসল করতে যেত আর তখন ভিক্ষু তাদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।
এই খানে এই ঘটনার উল্লেখ এ জন্যই করলাম যে মানুষের স্বভাব যায় না মরলে যেমন কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। যে সমস্ত মানুযগুলির ব্যপারে ধর্ষন, হত্যাসহ এত সব জঘন্য কার্যকলাপের অভিযোগ আমাদের তথাকথিত মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবিরা সদা সর্বদা যিকির তুলেন আমি তাদের কাছে challenge রাখতে চাই, ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে গত তেতাল্লিশ বছরে নারি নির্যাতন থেকে শুরু করে মানুষের অধিকার এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন কোন আচরন তার কোন শত্রুও দেখাতে পারবেন? তবে হ্যাঁ, ঐ সমস্ত নিন্দুকের সাথে এ ব্যপারে আমি একমত যে তারা আল্লাহর জমিনে তাঁরই বিধান প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের জিবনে দুনিয়ায় শান্তি এবং আখেরাতে মুক্তির জন্য নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। আর এটাই তাদের অপরাধ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁদের উত্তম প্রতিদান দিবেন।
জাজাকাল্লাহ।
শুকরান।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
এই ব্লগ পড়ার এবং জবাব দেওয়ার অনুরোধ থাকল
nullClick this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন