যে আমলে জান্নাত ওয়াজিব হয়
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৯:২৩:৫৩ রাত
যে আমলে জান্নাত ওয়াজিব হয়।
১. দিন-রাতে (সকালে ও সন্ধ্যায়) সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পাঠ।
সাইয়্যেদুল ইসতেগফার তথা শ্রেষ্ঠতম ইস্তিগফার হলো-
اللَّهُمَّ أنْتَ رَبِّي لا إلَهَ إلَّا أنْتَ، خَلَقْتَنِي وأنا عَبْدُكَ، وأنا علَى عَهْدِكَ ووَعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ، أعُوذُ بكَ مِن شَرِّ ما صَنَعْتُ، أبُوءُ لكَ بنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وأَبُوءُ لكَ بذَنْبِي فاغْفِرْ لِي، فإنَّه لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إلَّا أنْتَ
হাদীসে এসেছে-যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (বুখারী:৬৩০৬) তিরমিযীতে এসেছে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (তিরমিযী: ৩৩৯৩) অপর বর্ণনায় এসেছে- এ দু‘আ পড়ার পর সে যদি ঐ দিন বা রাতে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ:৫০৭০)
২. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করলে। হাদীসে এসেছে-
مَن قاتَل في سبيلِ اللهِ فَواقَ ناقةٍ وجَبتْ له الجنَّةُ
যে লোক আল্লাহ তা'আলার পথে উষ্ট্রীর দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী (সময়ের পরিমাণ) সময় জিহাদ করল তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। (সহীহ ইবনে হিব্বান:৪৬১৮, আবু দাউদ:২৫৪১)
৩. মৃত্যুর সময় ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’’ বলা। হাদীসে এসেছে-
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (مَن كان آخِرُ كلامِهِ لا إلهَ إلَّا اللهُ دخَل الجَنَّةَ)
যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ:৩১১৬) দারা কুতনীতে এসেছে জান্নাত ওয়াজিব হবে।
অর্থ্যাৎ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসীরা শাস্তিযোগ্য অপরাধের সাজা ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
জাবির (রা.) বলেন যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াজিবকারী (অবশ্যম্ভাবী) দু'টাে বিষয় কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কোন কিছু শারীক না করে যে ব্যক্তি মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শারীক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম:৯৩)
অপর বর্ণনায় এসেছে- منْ شهدَ أنْ لا إلهَ إلا اللهُ دخلَ الجنةَ (জামিউস সগীর:৮৭৫২, সহীহাহ:২৩৪৪) সহীহ
مَنْ قال : لا إلهَ إلَّا اللهُ مُخْلِصًا دخلَ الجنةَ (সহীহাহ:২৩৫৫)
৪. আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন ও মুহাম্মাদ (স.)কে নবী-রাসূল হিসেবে সন্তুষ্ট হলে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) রূপে, ইসলামকে দ্বীনরপে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীরূপে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। (সহীহ মুসলিম:১৮৮৪)
رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِالإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً বললে।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। (আবু দাউদ:১৫২৯)
৫. আল্লাহর রাস্তায় তিনটি সন্তান মারা গেলে।
مَن أَثْكَلَ ثلاثةً من صُلْبِهِ في سبيلِ اللهِ ، فاحْتَسَبَهُمْ على اللهِ ، وَجَبَتْ له الجنةُ
উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যার তিনটি সন্তান আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় আর সে আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (তাবারানীর মু'জামুল কাবীর:৮২৯, সহীহুল জামে': ৫৯৪৯) বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে-
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ النَّاسِ مِنْ مُسْلِمٍ يُتَوَفَّى لَهُ ثَلاَثٌ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে (মা-বাপকে) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারী:১২৪৮)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
যে স্ত্রী লোকের তিনটি সন্তান মারা যায়, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে। তখন এক মহিলা প্রশ্ন করলেন, দু’টি সন্তান মারা গেলে? তিনি বললেন, দু’টি সন্তান মারা গেলেও। (বুখারী:১২৪৯)
পুনশ্চ: যদি ঋণগ্রস্থ বা কবীরা গোনাহগার হয়, তাহলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে-
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি (নাবালিগ) সন্তান মারা গেল, তবুও সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, এমন হবে না। তবে কেবল কসম পূর্ণ হবার পরিমাণ পর্যন্ত। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন : ‘‘তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে।’’ (বুখারী:১২৫১, মুসলিম:২৬৩২)
৬. উত্তমরূপে ওযু করে দু' রাকাআ'ত সালাত আদায়।
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
উকবা ইবনু আমির জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি উত্তমরূপে ওযু করে তারপর দু’রাকাত সালাত আদায় করে নিষ্ঠার সাথে (দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (নাসাঈ:১৫১) হাদীসটি ভিন্ন শব্দে আছে সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে। মুসলিম:২৩৪, আবু দাউদ:৯০৬, সহীহুল জামে':৬১৬৬
৭. ফযরের সালাতের পর আল্লাহর যিকর করা সূর্যোদয় পর্যন্ত।
مَن صلَّى صلاةَ الفجرِ ثمَّ قعَد يذكُرُ اللهَ تعالى حتَّى تطلُعَ الشَّمسُ وجبَتْ له الجنَّةُ
যে ব্যক্তি ফযরের সালাত আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার যিকর করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ:১৬৯৪৫, তারগীব ওয়া তারহীব) আল্লামা মুনযিরির মতে হাদীসটি হাসান, আলবানীর মতে দূর্বল
৮. কোনো মুসলমান সম্পর্কে তিনজন/চারজন লোকের সাক্ষ্যদান
ما من مسلمٍ يشهدُ له ثلاثةٌ ، إلا وجبت له الجنَّةُ ، قيل و اثنان ؟ قال : و اثنانِ
যে কোনো মুসলমান সম্পর্কে তিনজন ভালো বলে সাক্ষ্য দিলে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। বলা হলো, দুই জন সাক্ষ্য দিলে? তিনি বললেন: দুইজন হলেও। (সহীহুল জামে':৫৭৫৯)
বুখারীতে এসেছে- উমার (রা.) সুত্রে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো মুসলিম সম্পর্কে চারজন ব্যক্তি ভালো সাক্ষ্য দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আর তিনজন সাক্ষ্য দিলে? তিনি বললেন, তিনজন সাক্ষ্য দিলেও। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, দু’জন সাক্ষ্য দিলে? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। অতঃপর আমরা একজনের সাক্ষ্য সম্পর্কে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করি নি। (বুখারী:১৩৬৮)
অপর বর্ণনাগুলোতে জানাযার কথা এসেছে-
জানাযায় তিন কাতার মুসলমান বা একশো মুসলমান সালাত পড়লে। তিরমিযীতে এসেছে তিন কাতারের কথা আর হিলইয়াতুল আউলিয়াতে এসেছে একশো মুসলমানের কথা।
(من صلَّى عليهِ مائةٌ منَ المسلمينَ وجبت لهُ الجنَّةُ) দ্রষ্টব্য: তিরমিযী: ১০২৮, হিলইয়া:৭/২৬৭
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেলে। তখন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আরয করলেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেনঃ এ (প্রথম) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীতে আল্লাহ্র সাক্ষী। (বুখারী:১৩৬৭, মুসলিম:৯৪৯)
৯. তিনটি দোষমুক্ত অবস্থায় মারা গেলে।
مَنْ فَارَقَ الرُّوحُ الْجَسَدَ وَهُوَ بَرِيءٌ مِنْ ثَلاَثٍ دَخَلَ الْجَنَّةَ مِنَ الْكِبْرِ وَالْغُلُولِ وَالدَّيْنِ "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুক্তদাস সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিনটি দোষ থেকে মুক্ত অবস্থায় যার দেহ থেকে তার প্রাণবায়ু বের হয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ অহংকার, আত্মসাৎ ও ঋণ। (তিরমিযী: ১৫৭২, আহমাদ: ২১৮৬৪, ২২৩৯০, দারেমী:২৫৯২, ইবনে মাজাহ:২৪১২, সহীহাহ:২৭৮৫)
১০. ইয়াতিমকে পানাহারে শরীক করা
من ضمَّ يتيمًا بين أبوَينِ مسلمَين إلى طعامِه وشرابِه حتى يستغنيَ عنه ؛ وجبَتْ له الجنَّةُ
মালিক ইবনে হারিস (রা.) থেকে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত মুসলিম পিতা-মাতার ইয়াতিম সন্তানকে তার পানাহারে শরীক করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (মুসনাদে আহমাদ:১৮৫৪৬, তাবারানীর মু'জামুল কাবীর: ৬৬৮, সহীহ আততারগীব:১৮৯৫) সহীহ লিগাইরিহী
তাবারানীর অন্য বর্ণনায় আছে-
من كفل يتيما له أو لغيره وجبت له الجنة إلا أن يكون عمل عملا لا يغفر (যে ব্যক্তি নিজে বা পরের মাধ্যমে ইয়াতিমের দায়িত্ব গ্রহণ করলো, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব, যদি না সে ক্ষমার অযোগ্য আমল করে।) দ্রষ্টব্য: মু'জামুল কাবীর:১১৮১৬
বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে এসেছে-
সাহল (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে নিকটে থাকবে। এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং এ দু’টির মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক রাখলেন। (বুখারী:৫৩০৪)
১১. সূরা ইখলাস পাঠ করলে
عن أبي هريرةَ عن النبيِّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم أنَّهُ سمع رجلًا يقرأُ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ إلى آخرِها فقال : وجبت له الجنةُ
আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে। নবী সাল্লাল্লাহু. একব্যক্তিকে কুলহুয়াল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) পাঠ করতে শুনলেন। তার পাঠ শেষে নবী সা. বললেন: তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। ( আহমাদ, তামহীদ:৭/২৫৪) একটু ভিন্ন শব্দে- তিরমিযী:২৮৯৭, নাসাঈ:৯৯৪, মিশকাত: ২১০১
এটা সূরা ইখলাসের বিশেষ মর্যাদা ও ফযিলত।
১২. বারো বছর আযান দিলে।
" مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلاَثُونَ حَسَنَةً "
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি বারো বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়। (ইবনে মাজাহ:৭২৮, সহীহাহ: ৪২, সহীহ তারগীব: ২৪২, সহীহুল জামে':৬০০২)
১৩. দুই/তিনটি কন্যা সন্তান উত্তমরূপে লালন-পালন করলে।
مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ، يُؤْوِيهِنَّ، وَيَكْفِيهِنَّ، وَيَرْحَمُهُنَّ، فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ الْبَتَّةَ،
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তাদের ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের সাথে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যায়। লোকজনের মধ্য থেকে একজন বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কারো যদি দুটি কন্যা সন্তান থাকে? তিনি বলেনঃ দুইটি কন্যা সন্তান হলেও। (আদাবুল মুফরাদ:৭৮, সহীহাহ:১০২৭)
অপর বর্ণনায় বোনদের কথাও আছে-
لاَ يَكُونُ لأَحَدٍ ثَلاَثُ بَنَاتٍ، أَوْ ثَلاَثُ أَخَوَاتٍ، فَيُحْسِنُ إِلَيْهِنَّ، إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনটি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে মমতাপূর্ণ ব্যবহার করে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে। (সহীহ আদাবুল মুফরাদ:৫৯, সহীহ আত তারগীব:১৯৭৩)
১৪. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করলে।
مَنْ حافَظَ على الصلواتِ الخمسِ ، رُكُوعِهِنَّ ، و سُجُودِهنَّ ، و مَوَاقِيتِهنَّ ، و عَلِمَ أنَّهُنَّ حقٌّ من عِنْدِ اللهِ دخلَ الجنةَ ، أوْ قال : وجَبَتْ لهُ الجنةُ ، أوْ قال : حَرَّمَ على النارِ
যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে উত্তমরূপে রূকু, সাজদাহর সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সংরক্ষণ করবে, এবং জানবে এটা আল্লাহর পক্ষে ফরয, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (অথবা বলেছেন)-তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। অথবা তিনি বলেছেন- তার জন্য জাহান্নাম হারাম। (সহীহ আত তারগীব: ৩৮১)
আবু দাউদের হাদীসে এসেছে-
আবূ দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু ও রুকু' সিজদা্ সহকারে নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সার্মথ্য থাকলে হজ করবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবূ দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কি? তিনি বলেন, জুনুবী হলে গোসল করা। (আবু দাউদ:৪২৯)
مَن لم يشرِكْ باللَّهِ شيئًا بعدَ أن آمنَ وأقامَ الصَّلاةَ المَكْتوبةَ وأدَّى الزَّكاةَ المفروضةَ وصامَ رمضانَ وسمعَ وأطاعَ فماتَ علَى ذلِكَ وجبت لهُ الجنَّةُ
যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে নি, ফরয সালাত আদায় করে, ফরয যাকাত আদায় করে, রমাদানের রোযা রাখে, শোনে ও আনুগত্য করে (মুসলিম শাসকের) সে এই অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (কিতাবুস সুন্নাহ:১০৪৭) আলবানী:সহীহ
অপর বর্ণনায় আছে- مَنْ عَلِمَ أنَّ الصلاةَ عليه حقٌّ واجبٌ دخلَ الجنةَ (জামিউস সগীর:৮৮৪০) সুয়ূতী: সহীহ
জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা-
১৫. সুন্নাহর অনুসরণ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (বুখারী:৭২৮০, সহীহুল জামে':৪৫১৩)
১৬. আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম সংরক্ষণ করলে:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ لِلهِ تِسْعَةً وَتِسْعِيْنَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশ’টি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে (সংরক্ষণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী:২৭৩৬, মুসলিম:২৬৭৭)
মুসলিমের বর্ণনায় (مَنْ أَحْصَاهَا) (مَنْ حَفِظَهَا) রয়েছে। গণনা করা বা মুখস্ত করা বা সংরক্ষণ করা।
আল্লাহর এই গুণগুলোর উপর বিশ্বাস ও অন্তরে সংরক্ষণ।
১৭.
ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়লে-
مَن قرأَ آيةَ الكرسيِّ دبُرَ كلِّ صلاةٍ مَكْتوبةٍ ، لم يمنَعهُ مِن دخولِ الجنَّةِ ، إلَّا الموتُ
আবু উমামাহ বাহালী (রা.) সূত্রে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু তার জান্নাতে প্রবেশে বাঁধা হবে না। (নাসাঈর সুনানুল কুবরা: ৯৯২৮,তাবারানীর মু'জামুল কাবীর:৭৫৩২, মু'জামুল আওসাত:৮০৬৪)
১৮. দুই ঠান্ডার সময় সালাত পড়লে
مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবূ বাকর ইবনু আবূ মূসা আশআ'রি (রহ.) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও ‘আসরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী:৫৭৪, মুসলিম:৬৩৫)
১৯.
দুধপানের জন্য কাউকে বকরী/ছাগল/কোনো পশু দেয়া:
" أَرْبَعُونَ خَصْلَةً أَعْلَاهُنَّ مَنِيحَةُ الْعَنْزِ مَا يَعْمَلُ رَجُلٌ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا وَتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا إِلَا أَدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الْجَنَّةَ " .
‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, চল্লিশটি স্বভাবের(বা সৎকর্মের) মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল দুধ পান করার জন্য কাউকে বকরী দেয়া। কোন বান্দা যদি সওয়াবের আশায় এবং পুরস্কার দানের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রেখে উক্ত চল্লিশ স্বভাবের যে কোন একটির উপরে আমল করে তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাস্সান (রহ.) বলেন, দুধেল বকরী মানহি দেয়া ব্যতীত আর যে কয়টি স্বভাব আমরা গণনা করলাম, সেগুলো হল সালামের উত্তর দেয়া, হাঁচি দাতার হাঁচির উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইত্যাদি। কিন্তু আমরা পনেরটি স্বভাবের অধিক গণনা করতে পারলাম না। (বুখারী: ২৪৮৮/২৬৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান:৫০৯৫)
২০. যে প্রসন্ন হৃদয়ে মসজিদে যায়
আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। অতঃপর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গানীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মসজিদে যায়, আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। এমন কি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গানীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ তার জিম্মাদার। (আবু দাউদ:২৪৯৪)
২১. মুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে:
(নিষিদ্ধ বা অনর্থক কথা বা অধিক কথা থেকে বিরত থাকা)
من حفِظ ما بين لَحيَيه دخل الجنَّةَ
যে তার দুই ঠোঁটের মাঝখানকে হেফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ আত তারগীব:২৮৫৭)
মুখ ও লজ্জাস্থানকে হেফাযত করলে-
" مَنْ وَقَاهُ اللَّهُ شَرَّ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَشَرَّ مَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ "
আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যে ব্যক্তিকে তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ হতে মুক্ত করেছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী:২৪০৯)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ ".
সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (বুখারী:৬৪৭৪)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
من حفظ ما بين فَقْمَيه وفرجِه ؛ دخل الجنَّةَ (সহীহ আত তারগীব:২৮৬০)
اثنتانِ تُدخِلانِ الجنَّةَ : من حفِظ ما بين لَحْيَيْه و رِجلَيْه دخل الجنَّةَ (সহীহুল জামে':১৪০)
২২. জুমআ'র দিনে পাঁচটি কাজ করলে-
خمسٌ من عمِلهنّ في يومٍ كتبهُ اللهُ من أهلِ الجنةِ : من عادَ مريضًا ، وشهدَ جنازةً ، وصامَ يوما ، وراحَ يومَ الجمعةِ ، وأعتقَ رقبةً
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: পাঁচটি কাজ জুমআ'র দিনে করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতী লিখে দেন। অসুস্থ লোককে দেখতে গেলে, জানাযায় উপস্থিত হলে, রোযা রাখলে, মসজিদে গিয়ে নিখুঁত সালাত আদায় করলে এবং দাস মুক্ত করলে। (সহীহ ইবনে হিব্বান:২৭৭১) বর্তমানে দাস মুক্তির পরিবর্তে দান-সদাকাহ করলে। এই হাদীসটির সাক্ষী স্বরূপ সহীহ মুসলিমের বর্ণনা পাওয়া যায়-
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজ তোমাদের মধ্যে কে রোযা রেখেছে? আবূ বাকর (রাযিঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে জানাযার সাথে গেছে? আবূ বাকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে মিসকীনকে খাবার দিয়েছে? আবূ বাকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেছে? আবূ বাকর (রাযিঃ) বললেন, আমি। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তির মধ্যে এসব কাজের সমাবেশ ঘটে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। (মুসলিম:১০২৮)
২৩. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করলে
من رفع حجرًا من الطريقِ ؛ كُتِبتْ له حسنةٌ ، ومن كانت له حسنةٌ ؛ دخل الجنَّةَ
মুআ'য ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যে রাস্তা থেকে পাথর সরাবে, তার জন্য নেকী লেখা হবে, আর যার একটি নেকী কবুল হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তাবারানীর মু'জামূর কাবীর: ১৯৮, সহীহ আত তারগীব: ২৯৭৩)
এর স্বপক্ষে হাদীস রয়েছে, আদাবুল মুফরাদ:৫৯৩, তাবারানী:৫০২
مَرَّ رَجُلٌ بِغُصْنِ شَجَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ طَرِيقٍ فَقَالَ وَاللَّهِ لأُنَحِّيَنَّ هَذَا عَنِ الْمُسْلِمِينَ لاَ يُؤْذِيهِمْ . فَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলার সময় একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের শাখা দেখে বলে, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই মুসলিমদের যাতায়াতের পথ থেকে এটা সরিয়ে ফেলব, যাতে তা তাদের কষ্ট না দেয়। ফলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (সহীহ মুসলিম, সদ্ব্যবহার অধ্যায়, হা:১৯১৪)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
আমি এক লোককে একটি গাছের কারণে জান্নাতে আনন্দ ফুর্তি করতে দেখেছি। এ গাছটি সে রাস্তার উপর হতে দূর করেছিল, যেটি মানুষকে কষ্ট দিত।(মুসলিম:১৯১৪, ইফাবা নঃ৬৪৩৩) অপর বর্ণনায়-
একটি গাছ মুসলিমদের (পথ গমন করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সে গাছটি কেটে ফেললো, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। (মুসলিম: ঐ)
২৪. প্রিয়দুটি বস্তু হারানোর পর ধৈর্যধারণ করলে
إِنَّ اللهَ قَالَ إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضْتُه“ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ
আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দু’টি বস্ত্ত সম্পর্কে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তাতে ধৈর্য ধরে, তাহলে আমি তাকে সে দু’টির বিনিময়ে জান্নাত দান করব। আনাস বলেন, দু’টি প্রিয় বস্ত্ত হল সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। (বুখারী, রুগী অধ্যায়, হা:৫৬৫৩) অপর বর্ণনায় আছে-
আবু উমামা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! আমি যখন তোমার প্রিয় জিনিস দু’টি নিয়ে নেই (চোখের জ্যোতি হরণ করি) এবং তুমি সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করো ও সওয়াবের আশা করো, আমি তোমাকে সওয়াবের পরিবর্তে জান্নাত না দেয়া পর্যন্ত খুশি হই না। (আদাবুল মুফরাদ:৫৩৫)
২৫. বিপদের প্রথম আঘাতে ধৈর্যধারণে
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَقُولُ اللهُ سُبْحَانَهُ ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُونَ الْجَنَّةِ.
আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ হে বনী আদম! যদি তুমি সওয়াবের আশায় প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করো তাহলে আমি তোমাকে সওয়াবের বিনিময় হিসাবে জান্নাত দান না করে সন্তুষ্ট হবো না। (ইবনে মাজাহ:১৫৯৭, মিশকাত:১৭৫৮)
২৬. আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত চাওয়া
مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ . وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ النَّارِ
আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক জান্নাতের জন্য আল্লাহ তা'আলার নিকট তিনবার প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোন লোক তিনবার জাহান্নাম হতে পানাহ (আশ্রয়) চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ তা'আলার নিকট বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। (তিরমিযী:২৫৭২, নাসাঈ:৫৫২১, ইবনে হিব্বান:১০৩৪ )
২৭. শেষ আমল উত্তম হওয়া তথা সৎকর্মরত অবস্থায় মৃত্যু:
مَن قال : لا إلهَ إلا اللهُ خُتِمَ له بِها دخل الجنةَ ، و من صامَ يومًا ابْتغاءَ وجْه اللهِ خُتِمَ له به دخلَ الجنةَ ، ومَن تصدَّقَ بصدقةٍ ابْتغاءَ وجْهِ اللهِ خُتِمَ له بِها دخل الجنةَ
(সহীহ আত তারগীব:৯৮৫)
জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: احْتَجَّتِ النَّارُ وَالْجَنَّةُ، فَقَالَتِ النَّارُ: يَدْخُلُنِي الْمُتَكَبِّرُونَ وَالْمُتَجَبِّرُونَ. وَقَالَتِ الْجَنَّةُ: لاَ يَدْخُلُنِي إِلاَّ الضُّعَفَاءُ الْمَسَاكِينُ. فَقَالَ لِلنَّارِ: أَنْتِ عَذَابِي، أَنْتَقِمُ بِكِ مِمَّنْ شِئْتُ، وَقَالَ لِلْجَنَّةِ: أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ شِئْتُ
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দোযখ ও বেহেশত বিতর্কে লিপ্ত হলো। দোযখ বললো, অহংকারী ও পরাক্রমশালী স্বৈরাচারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বেহেশত বললো, দুর্বল ও নিঃস্বরাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা দোযখকে বলেন, তুই হলি আমার আযাব। যার থেকে ইচ্ছা আমি তোর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিবো। তিনি বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার রহমত, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার মাধ্যমে অনুগ্রহ করবো। (আদাবুল মুফরাদ:৫৯২)
সংকলন ও সম্পদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন