ছোটদের সহজ হাদীস পাঠ
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৮:৩১:৩১ রাত
#ছোটদের_সহজ_হাদীস_পাঠ (প্রথম পর্ব)
১.
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ "
বাংলা উচ্চারণ: বুনিয়াল ইসলামু আ'লা খামছিন, শাহাদাতি আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অআন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহি ওয়া ইকামিস সলাতি ওয়া ঈতায়িয যাকাতি ওয়াল হাজ্জে ওয়া সাওমি রমাদনা।
অর্থ: (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-) ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত- আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সালাত কায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ সম্পাদন করা এবং রমাযানের সিয়াম পালন করা। (বুখারী:৮)
ইসলামের স্তম্ভ বা খুঁটি হলো পাঁচটি। ১.আল্লাহর একত্ববাদ ও আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া। সংক্ষেপে তা হলো- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাসনা বা ইবাদতের যোগ্য) নেই, একমাত্র তারই ইবাদত করা, তার কাছেই চাওয়া। মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল, তার শেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করা।
২. সালাত তথা নামাজ আদায় করা (ওয়াক্তমত)।
৩. যাকাত আদায় করা (আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে ফরয দান/সদাকাহ)
৪. আল্লাহর ঘরে হাজ্জ পালন করা। সামর্থ্যবান সম্পদশালী ব্যক্তির উপর হাজ্জ ফরয
৫. রমাদানে সিয়াম তথা রোযা রাখা।
টিকা:
হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।(বুখারী:৮, মুসলিম:১৬, তিরমিযী:২৬০৯, নাসাঈ:৫০০১, আহমাদ সহ অনেক গ্রন্থে)
২.
" مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَيُعْطِي اللَّهُ "
বাংলা উচ্চারণ: মাইঁয়ুরিদিল্লাহু বিহী খইরান ইউফাক্কিহহু ফীদ্দিন অইন্নামা আনা ক্বসিমুন ওয়া ইউত্বিল্লাহু।
অর্থ: "আল্লাহ তা'আলা যার কল্যাণ চান তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করেন। আমি বণ্টনকারী আর আল্লাহ্ তা দান করে থাকেন। (বুখারী:৭৩১২, মুসলিম:১০৩৭)
দ্বীন তথা ইসলামের জ্ঞান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জ্ঞান এই জাতির মাঝে বন্টন করে গিয়েছেন। ইসলামী শিক্ষায় যতো গভীরতা ও প্রাজ্ঞতা অর্জন করবে সে ততো কল্যাণের মাঝে থাকবে। তাই বেশি বেশি কুরআন ও হাদীস অধ্যায়ন করতে হবে। বেশি বেশি এই দু'আ করবো-
(رَّبِّ زِدۡنِیۡ عِلۡمًا) রব্বি যিদনী ইলমা, ‘হে আমার প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’
টিকা: হাদীসটি মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফইয়ান (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী:৭১, মুসলিম:১০৩৭, মুসনাদে আহমাদ সহ অন্যান্য গ্রন্থে।
৩.
الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ
বাংলা উচ্চারণ: আত্বতুহূরু শাতরুল ঈমান
অর্থ: পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। (মুসলিম:২২৩)
শরীর ও মনকে যাবতীয় অপবিত্রতা বা নাপাকি থেকে দুরে রাখতে হবে। পবিত্রতা হলো- দেহ, কাপড় ও ‘ইবাদাতের স্থানকে প্রকাশ্য নাপাকি তথা পায়খানা-পেশাব ও বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা হতে মুক্ত রাখা। তেমনি মনকে খারাপ চিন্তা-ভাবনা থেকে দুরে রাখা, বিশেষ করে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে। এই জন্যই আমরা নামাজের আগে ওযু করি।
টিকা: হাদীসটি বিস্তারিতভাবে এসেছে আবু মালিক আশ'আরী (রা.) সূত্রে সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য গ্রন্থে। মুসলিম:২২৩, তিরমিযী:৩৫১৭, নাসাঈ:২৪৩৭, আহমাদ:২২৯০৯
৪.
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
বাংলা উচ্চারণ: খইরুকুম মান তা'আল্লামাল কুরআনা ওয়া আ'ল্লামাহু
অর্থ: তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়। (বুখারী:৫০২৭)
কুরআন শিক্ষা দেয়া এবং কুরআন শেখা দুটোই উত্তম কাজ। যারা কুরআন শিখে এবং কুরআন শিক্ষা দেয় তারা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান আল্লাহর কাছে। আমরা কুরআন পড়বো, অর্থ জানবো, কুরআনের আলোকে জীবন গড়বো।
টিকা: হাদীসটি উসমান (রা.) সুত্রে বর্ণিত হয়েছে বুখারী সহ অন্যান্য গ্রন্থে। বুখারী:৫০২৭, আবু দাউদ:১৪৫২, তিরমিযী:২৯০৭
৫.
مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
বাংলা উচ্চারণ: মান সল্লাল বারদাইনি দাখালাল জান্নাতা
অর্থ: যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা সময়ের সালাত আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী:৫৭৪) ঠান্ডার সময়ের সালাত বলতে ফজর ও ‘আসরের নামাজ বুঝায়।
দিনের দু’ প্রান্তের ঠাণ্ডা সময় যখন মনোরম বাতাস প্রবাহিত হয় এবং গরমের ভাব দূরীভূত হয়, এটা দ্বারা ফজর এবং ‘আসরের সালাতের সময়কে বুঝানো হয়েছে। এই সময় মানুষ আলস্যভরে এই নামাজকে ত্যাগ করে বিশেষ করে ফযরের নামাজকে মানুষ কষ্টকর মনে করে। এই সময়ে নামাজ পড়া কঠিন বলে এই দুই সময়ের নামাজের এতো গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
টিকা: হাদীসটি আবূ মূসা (রা.) সূত্রে বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী:৫৭৪, মুসলিম:৬৩৫
৬.
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتْ الشَّيَاطِيْنُ
বাংলা উচ্চারণ: ইযা দাখালা রমাদানু ফুত্তিফাত আবওয়াবুল জান্নাতি ওয়া গুল্লিকত আবওয়াবু জাহান্নামা ওয়া সুলসিলাতিস শায়াতীন
অর্থ: যখন রমাযান মাস আরম্ভ হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।(বুখারী:৩২৭৭)
আরবি মাস তথা চন্দ্রমাসের নবম মাস হলো রমাদান/রমাযান। এই মাসেই আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন এবং এই মাসে রোযা রাখা ফরয। এই মাস উপস্থিত হলে আল্লাহ রহমতের দরজা খুলে দেন, শাস্তির দরজা বন্ধ করে দেন এবং শয়তানদের বন্দী করে রাখা হয়। তাই এই মাসকে বলা হয় রহমত, বরকত, ক্ষমা এবং মুক্তির মাস।
টিকা: হাদীসটি আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন। বুখারী, মুসলিম সহ হাদীসের সকল গ্রন্থেই এসেছে। বুখারী: ১৮৯৯, ৩২৭৭, মুসলিম:১০৭৯
৭.
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ
বাংলা উচ্চারণ: আদ্দুআ'য়ু হুআল ই'বাদাহ
অর্থ: দু‘আ (করাটাই) ‘ইবাদাত।
যাবতীয় ইবাদতই দু'আ এবং দু'আ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। দু'আর মানে হলো আল্লাহকে ডাকা বা তার কাছে কিছু চাওয়া। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেওয়ার নেই। এতে আল্লাহর প্রতি বান্দাহ চুড়ান্তভাবে বিনীত হয়। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)
আমরা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে চাইবো, প্রার্থনা করবো, দু'আ করবো। দু'আ করবো নিজের জন্য, পিতামাতার জন্য, স্বজনদের জন্য, সকল মুসলমানদের জন্য।
টিকা: হাদীসটি নু‘মান ইবনু বাশীর (রা.) সূত্রে বর্ণিত। আবূ দাঊদ: ১৪৭৯, তিরমিযী: ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ: ৩৮২৮, সহীহ আত্ তারগীব: ১৬২৭
৮.
خَيْرُ دِينِكُمْ الوَرَعُ
বাংলা উচ্চারণ: খইরু দ্বীনিকুমল ওয়ারা
অর্থ: তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধার্মিকতা হলো পরহেযগারী। (ফাইযুল কাদীর:৪০৬৯)
পরহেযগারিতা হলো আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা। সব সময় অন্তরকে রাখতে হবে কোমল ও নরম। সত্য-মিথ্যা, পাপ ও গোনাহ সম্পর্কে জানতে হবে। সন্দেহজনক বিষয় থেকে দুরে থাকতে হবে। এটাই তাকওয়া বা আল্লাহভীতির রূপ। আমরা পাপ কাজ করবো না, সব সময় মনে আল্লাহর ভয় রাখবো।
টিকা: হাদীসটি সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রা.) ও হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.)সূত্রে বর্ণিত আছে। দ্রষ্টব্য: ফাইযুল কাদীর:৪০৬৯, বাযযার:২৯৬৯, আল মুসতাদরাক:৩২৩, তাবারানী, ইবনে হিব্বান, সহীহুল জামে':৩৩০৮, সহীহ আত তারগীব:৬৮
৯.
الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ
বাংলা উচ্চারণ: আদ্দুনইয়া সিজনুল মু'মিনি ওয়া জান্নাতুল কাফিরি
অর্থ: দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।(মুসলিম:২৯৫৬)
পৃথিবীর জীবন হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী বান্দাহ তথা মুমিনের জন্য পরীক্ষাগার। এখানে সে নানা রকম দুঃখ, কষ্ট, যাতনা, প্রলোভন আর পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। সে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর বিধানের কাছে সমর্পণ করবে। এক কথায়, সে মনগড়া জীবনে চলবে না। কাফির তো আল্লাহর বিধানকে মানে না, সে মনখুশি জীবন চালায়, এই জীবনকেই সে প্রকৃত জীবন মনে করে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।
টিকা: হাদীসটি আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত আছে। দ্রষ্টব্য: মুসলিম: ২৯৫৬, সহীহ ইবনে হিব্বান:৬৮৭,৬৮৮
১০.
لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ
বাংলা উচ্চারণ: লাইসাল গিনা আ'ন কাসরতিল আ'রাদি ওয়ালা কিন্নাল গিনা গিনান নাফসি
অর্থ: ধন-সম্পদ, অর্থ-কড়ি বেশি হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী। (বুখারী:৬৪৪৬)
অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় ও তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস না থাকে, তাহলে সে যতোই সম্পদশালী হোক, টাকা-পয়সার মালিক হোক সে সম্পদ কমে যাওয়ার ভয়ে দান করতে চায় না। যার অন্তর বড়, মনটা ধনী সে গরীব হলেও দান করতে ভয় পায় না। আমাদের মন বড় করতে হবে।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত আছে বুখারী, মুসলিম সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে। বুখারী: ৬৪৪৬, মুসলিম:১০৫১
ছোটদের সহজ #হাদীস_পাঠ (দ্বিতীয় পর্ব)
১১.
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ
বাংলা: উচ্চারণ: কুল্লু মা'রুফিন সদাকাহ
অর্থ: প্রতিটি ভালো কাজই সদাকাহ! (বুখারী:৬০২১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি সৎকাজই আল্লাহর রাস্তায় দান করার মতো। আল্লাহর রাস্তায় দান করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনি প্রতিটি ভালো কাজে সওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন- মানুষের সাথে ভালো কথা বলা, মানুষকে সাহায্য করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, সকল প্রকার ফরয, নফল ইবাদত ইত্যাদি।
টিকা: হাদীসটি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। (বুখারী:৬০২১, মুসলিম:১০০৫)
১২.
مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا
বাংলা উচ্চারণ: মান সল্লা আ'লাইয়্যা ওয়াহিদাতান সল্লাল্লাহু আলাইহি আশরা
অর্থ: (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-) "যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষন করেন।" (মুসলিম:৪০৮)
আমাদের রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ আমাদের উপর দশবার অনুগ্রহ করবেন। অপর হাদীসে এসেছে- "আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (নাসায়ী:১২৯৭) তাই আমরা বেশি বেশি নবীর উপর দরূদ পড়বো।
একটি দরূদ-
اللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’
টিকা: হাদীসটি আবু হুরাইরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সহীহ মুসলিম: ৪০৮, আবু দাউদ:১৫৩০, তিরমিযী:৪৮৫
১৩.
لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়ারহামুল্লাহু মান লা ইয়ারহামুন নাস
অর্থ: আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না। (বুখারী:৭৩৭৬)
আল্লাহর তার প্রতি দয়া করেন না যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না। আমরা বেশি করে আল্লাহর রহমত পেতে চাইলে আল্লাহর সকল সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া দেখাবো। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ এমনকি গাছ-গাছালিকেও বিনা কারণে আঘাত করবো না, তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করবো না।
টিকা: হাদীসটি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়, হা:৭৩৭৬, মুসলিম:২৩১৯
১৪.
رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ
বাংলা উচ্চারণ: রিদার রব্বি ফী রিদাল ওয়ালিদি ওয়া সাখাতুররব্বি ফী সাখাতিল ওয়ালিদি
অর্থ: বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই রবের সস্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই রবের অসন্তুষ্টি। (আল মুসতাদরাক:৭৩৩১)
পিতামাতা সন্তুষ্ট হলে আল্লাহ তাআলাও সন্তুষ্ট থাকেন, পিতামাতা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন। সুতরাং কোনোভাবেই আমরা পিতামাতাকে কষ্ট দেবো না। তাদের মনে আঘাত দিয়ে তাদেরকে অসন্তুষ্ট করবো না। সব সময় তাদের আনুগত্য করবো, খেদমত করবো। এক হাদীসে এসেছে- "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত"।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। ইমাম হাকেমের আল মুসতাদরাক:৭৩৩১, তিরমিযী:১৮৯৯, মুসনাদে বাযযার:২৩৯৪, সহীহ আল জামে':৩৫০৬
১৫.
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা ক্ব-ত্বিউ'ন
অর্থ: (আত্মীয়তার সম্পর্ক) ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী:৫৯৮৪)
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। তাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে আল্লাহ রহমত থেকে বঞ্চিত করেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে, তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুললে নিজেদের মাঝে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং আয়ু বাড়ে। (তিরমিযী:১৯৭৯)
টিকা: হাদীসটি যুবাইর ইবনু মুত‘ইম (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী: ৫৯৮৪, মুসলিম:২৫৫৬ সহ প্রায় সকল হাদীসের গ্রন্থে এসেছে।
১৬.
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِى يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ
বাংলা উচ্চারণ: লাইসাল মু'মিনুল্লাযী ইয়াশবায়ু' ওয়া জারুহু জায়ি'উন ইলা জাম্বিহি
অর্থ: সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে। (সহীহ আত তারগীব:২৫৬২)
আমাদের আশেপাশে যারা বসবাস করে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। সব সময় তাদের খোঁজ খবর রাখতে হবে। প্রতিবেশী যদি অনাহারে থাকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যে নিজে পেট ভরে খায়, আর পাশের জন খেতে পায় না, সে ভালো মুসলমান হতে পারে না।
টিকা: হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। ইমাম বুখারীর আদাবুল মুফরাদ: ১১২, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:১৯০৪৯, আল মুসতাদরাক:৭৩৮৭, তবারানীর মু'জামুল কাবীর: ১২৭৪১
১৭.
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা মান কানা ফী ক্বলবিহী মিসক্বলু যাররাতিন মিন কিবরি
অর্থ: যার অন্তরে অণুপরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম:৯১)
অহঙ্কার হচ্ছে নিজেকে বড় মনে করা। মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা, হেয় করা ও তাদের ঘৃণা করা। নিজের মাঝে বড়ত্ব, দাম্ভিকতা, ঔদ্ধত্য, অহম কিংবা গর্ব থাকা হলো বিনয়ের অভাব, সুন্দর চরিত্রের ঘাটতি। মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না, তাদেরকে ঘৃণা করা যাবে না। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন- অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মুসলিম: ৯১, তিরমিযী:১৯৯৮-৯৯,আবু দাউদ:৪০৯১ সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে।
১৮.
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
বাংলা উচ্চারণ: সিবাবুল মুসলিমি ফুসূকুন ওয়া ক্বিতালুহূ কুফরুন
অর্থ: মুসলমানকে গালি দেয়া পাপচারি এবং তার সাথে মারামারি করা কুফরী। (বুখারী:৪৮)
আমাদের আশেপাশে যারা আছে সবার সাথে ভালো আচরণ করবো। সবাইকে ভালোবাসবো। কখনো কাউকে গালি দেবো না। গালি দেয়া কিংবা মারামারি করা খারাপ কাজ। কেননা গালি দেয়া গুনাহের কাজ এবং মুসলমানদের সাথে লড়াই করা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বুখারী, মুসলিম সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে এসেছে। বুখারী, ঈমান অধ্যায়, হা:৪৮, মুসলিম: ৬৪
১৯.
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ
বাংলা উচ্চারণ: লা তাদখুলুল মালাঈকাতু বাইতান ফিহী কালবুন ওয়ালা সু-রাতুন
অর্থ: যে ঘরে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি/মূর্তি থাকে তাতে রহমতের ফেরেশতামন্ডলী প্রবেশ করেন না। (বুখারী: ৩৩২২)
কুকুর একটি নাপাক প্রাণি। মানুষ অথবা যে কোনো প্রাণির ছবি বা মূর্তি বানানো বৈধ নয়। আমরা আমাদের ঘরে সৌন্দর্যের নামে প্রাণির ছবি অথবা মূর্তি রাখবো না। কুকুরের মতো নোংরা প্রাণিকেও নিজেদের ঘরে রাখবো না। কেননা ঘরে প্রাণির ছবি বা কুকুর থাকলে রহমত-বরকতের ফেরেশতারা আসে না।
টিকা: হাদীসটি আবূ তালহাহ্ (রা.) সূত্রে বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে। বুখারী, সৃষ্টির সুচনা অধ্যায়, হা:৩৩২২, মুসলিম:২১০৬
২০.
إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللَّهِ الأَلَدُّ الْخَصِمُ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না আবগদার রিজালি ইলাল্লাহি আলাদ্দুল খসিমু
অর্থ: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো 'কঠিন ঝগড়াটে' (বেশি বেশি তর্কপ্রিয়)
যারা মানুষের সাথে বেশি বেশি তর্ক-বিতর্ক করে, ঝগড়াঝাটি করে, বাক-বিতণ্ডা করে তারা আল্লাহর কাছে খুবই নিকৃষ্ট। আমরা কারো সাথে অযথা তর্ক করবো না, ঝগড়া-বিবাদে করবো না।
টিকা: হাদীসটি আয়িশাহ (রা.) সূত্রে বুখারী: ২৪৫৭, মুসলিম: ২৬৬৮ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে।
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
১৯০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন