বংশধারা সংরক্ষণ ও অজ্ঞাত/অপরিচিত বংশে নিজের পরিচয় দেয়া হারাম
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪:৩৪ রাত
#নিজ_পিতাকে_অস্বীকার_করার_পরিণতি (বংশধারা সংরক্ষণের গুরত্ব)
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُفْرٌ بِاللَّهِ تَبَرُّؤٌ مِنْ نَسَبٍ وَإِنْ دَقَّ أَوْ ادِّعَاءٌ إِلَى نَسَبٍ لَا يُعْرَفُ
বাংলা: আমর ইবনে শুয়াইব (রহ.) যথাক্রমে পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিজ বংশ হীন-নীচ হলে তা পরিত্যাগ করা এবং নিজেকে কোনো অজ্ঞাত বংশের বলে দাবী করা আল্লাহর সাথে কুফরি করার শামিল।” (মুসনাদে আহমাদ:৬৯৮০, সহীহ আততারগীব:১৯৮৭)
#আলোচনা: নিজের বংশ ছেড়ে অপরিচিত/অজ্ঞাত অন্য বংশের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করা এবং বংশ নীচ হলে তা অস্বীকার করা কুফরির শামিল। জেনে-শুনে আপন পিতা ছাড়া অন্য কারোর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা এবং আপন বংশের পরিচয় অস্বীকার করা বিরাট পাপ এবং তা কুফরির দিকে নিয়ে যায়।
এর মূল অর্থ হলো- নিজের জন্মদাতা পিতাকে অস্বীকার করা এবং অন্য কাউকে নিজের পিতা দাবি করা কুফরি। আল্লাহ বলেন-
"তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাকো; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব, ৩৩:৫)
সা‘দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: যে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবি করে অথচ সে জানে যে সে তার পিতা নয়, জান্নাত তার জন্য হারাম। (বুখারী:৬৭৬৬, মুসলিম:৬৩) অপর বর্ণনায় এসেছে-
"তোমরা তোমাদের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না (অর্থাৎ অস্বীকার করো না)। কারণ যে লোক নিজের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় (অর্থাৎ পিতাকে অস্বীকার করে) তা কুফরী।" (বুখারী:৬৭৬৮, মুসলিম:৬২)
হাদীসে এসেছে- "যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচ শত বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে।" (সহীহুল জামে':৫৯৮৮)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে দাবী করে অথবা তার (স্বাধীনকারী) প্রভু ছাড়া অন্য প্রভুর প্রতি সম্বন্ধ জুড়ে, সে ব্যক্তির উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অবিরাম অভিশাপ। (আবু দাউদ:৫১১৫)
বংশধারা এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস সংরক্ষণ রাখতে শরীয়াত উৎসাহ দেয় কেননা বংশধারা ভুলের কারণে অধিকার লুন্ঠিত হয়। নিজ বংশ ছাড়া অন্য বংশের প্রতি সম্পৃক্ত করা সুষ্পষ্ট মিথ্যা এবং বিরাট পাপ। কেননা এর সাথে মীরাস (সম্পদের উত্তরাধিকার), অভিভাবকত্ব ও মাহরামের (নারী-পুরুষের সাথে পর্দার বিধান) বিষয় জড়িত।
পুনশ্চ:
হাদীসটির ভিন্নরূপ-
(" كُفْرٌ بِامْرِئٍ ادِّعَاءُ نَسَبٍ لاَ يَعْرِفُهُ أَوْ جَحْدُهُ وَإِنْ دَقَّ ")
"নিজেকে কোনো অজ্ঞাত বংশের বলে দাবী করা এবং নিজ বংশ হীন-নীচ হলে তা অস্বীকার করা কুফরী’ করার শামিল।” (সুনানে ইবনে মাজাহ:২৭৪৪)
আবূ বাকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু বলেছেন, ‘নিজেকে কোনো অজ্ঞাত বংশের বলে দাবী করা আল্লাহর প্রতি কুফরী’র শামিল এবং (নিজ) বংশের সাথে সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাও আল্লাহর প্রতি কুফরী’র শামিল, যদিও তা নীচ-হীন হয়।’ (দারেমী:২৮৬১, সহীহ আত তরগীব:১৯৯১)
#বর্ণনাকারী: আমর ইবনে শুয়াইব (রহ.) এর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), আবু বকর (রা.)
#মান: হাসান,সহীহ
#গ্রন্থ: মুসনাদে ইমাম আহমাদ, (মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হা: ৬৯৮০, সুনানে ইবনে মাজাহ:২৭৪৪, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত: ৭৯১৫, মু'জামুস সগীর:১০২৮, মুসনাদে বাযযার:৭০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ:৩৪৮, সহীহ আত তারগীব: ১৯৮৭,সহীহুল জামে':৪৪৮৬, জামিউস সগীর:৬২৪৪
#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন