দ্বীন_সহজ (দরসে হাদীস)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:২৫:১৮ রাত
#দ্বীন_সহজ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيْءٍ مِنْ الدُّلْجَةِ
বাংলা: আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই দীন সহজ, যে কেউ দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পন্থা অবলম্বন করবে, সে দ্বীন পালনে ব্যর্থ হয়ে যাবে। অতএব তোমরা সোজা পথে চলো, পরিপূর্ণতার কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করো, সুসংবাদ দাও, সহজ পন্থা অবলম্বন করো, সকাল সন্ধ্যা এবং কিছু রাত পর্যন্ত ইবাদতে থেকে সাহায্য প্রার্থনা করো। (বুখারী:৩৯)
#আলোচনা: দ্বীন সহজ। এখানে কোনো বাড়াবাড়ি নেই, কঠোরতা নেই এবং সামর্থ্যের বাইরে কোনো কাজ নেই। দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা, চরমপন্থা অবলম্বন করলে দ্বীন পালনে ব্যর্থ হবে। দ্বীনের বিষয়গুলো মানুষের কাছে যেমন সহজভাবে উপস্থাপন করতে হবে তেমনি দ্বীন পালনেও সহজপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন হল, যা (পালন করা) সবচেয়ে সহজ। (আহমাদ:১৮৪৯৭, সহীহুল জামে’:৩৩০৯) অপর বর্ণনায় এসেছে-
"আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তাত্থেকে বেঁচে থাকো। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চলো।" (বুখারী:৭২৮৮, মুসলিম:১৩৩৭)
আল্লাহ বলেন-
فَاتَّقُوا اللّٰہَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ وَ اسۡمَعُوۡا وَ اَطِیۡعُوۡا وَ اَنۡفِقُوۡا خَیۡرًا لِّاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِہٖ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, শ্রবণ করো, আনুগত্য করো এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় করো, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম। (সূরা তাগাবুন, ৬৪:১৬)
আমাদেরকে সাধ্য মতো আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়েছে। এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, কঠোরতা আরোপ করো না, কেননা তাতে দ্বীন পালনে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। বরং সহজপন্থা অবলম্বন করে যথাসাধ্য পরিপূর্ণতার দিকে যেতে হবে। কেননা আমরা কখনোই আমলের পরিপূর্ণতায় যেতে পারবো না আর তাই আমলের মাধ্যমে মুক্তি পাবো না যদি না আল্লাহর অনুকম্পা আমাদের উপর না থাকে। যেমন হাদীসে এসেছে-
لَنْ يُنَجِّيَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهُ قَالُوا وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَاغْدُوا وَرُوحُوا وَشَيْءٌ مِنْ الدُّلْجَةِ وَالْقَصْدَ الْقَصْدُ تَبْلُغُوا
কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দেবে না। তাঁরা বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ তা'আলা আমাকে রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল করো, নিকটবর্তী হও (পরিপূর্ণতার দিকে)। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর কাজ করো। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো। আকড়ে ধর মধ্যমপন্থাকে, অবশ্যই সফলকাম হবে। (বুখারী:৬০৮০, মুসলিম:২৮১৬)
#সাধ্যের_বাইরে_কর্ম_নয়
আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে।" (সূরা বাকারা, ২.২৮৬)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের উপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেনঃ তার কী হয়েছে? তারা বললেন, তিনি পায়ে হেঁটে হাজ্জ করার মানত করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা‘আলার এর কোনো দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন। (বুখারী:১৮৬৫, ৬৭০১)
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَنْبَغِي لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يُذِلَّ نَفْسَهُ " . قَالُوا وَكَيْفَ يُذِلُّ نَفْسَهُ . قَالَ " يَتَعَرَّضُ مِنَ الْبَلاَءِ لِمَا لاَ يُطِيقُ "
হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মু'মিন ব্যক্তির জন্য নিজেকে অপমানিত করাটা শোভনীয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, সে নিজেকে কিভাবে অপমানিত করে? তিনি বললেনঃ এমন কঠিন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া যার সামর্থ্য তার নেই। (তিরমিযী:২২৫৪)
‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের যখন কোন কাজের নির্দেশ দিতেন, তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দেশ দিতেন। একবার তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল্! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ তা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্ন ফুটে উঠল। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের চেয়ে আমিই আল্লাহ্কে অধিক ভয় করি ও বেশী জানি। (বুখারী:২০)
জাবের বিন আব্দুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتًا وَلاَ مُتَعَنِّتًا وَلَكِنْ بَعَثَنِي مُعَلِّمًا مُيَسِّرًا "
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও অত্যাচারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় শিক্ষাদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (মুসলিম:১৪৭৮, সহীহুল জামে':১৮০৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন দ্বীন মহামহিম আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলেনঃ সহজ সরল দ্বীন (আদাবুল মুফরাদ:২৮৭)
#দ্বীন_প্রচার ও #শাসনের_মূলনীতি-
يَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا وَبَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا
"তোমরা সহজ কর, কঠোর করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও এবং তাদের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’ (বূখারী:৬৯)
#বর্ণনাকারী:আবু হুরাইরাহ (রা.)
#মান:সহীহ
#গ্রন্থ: সহীহ বুখারী, ঈমান অধ্যায়, হা:৩৯, নাসাঈ:৫০৩৪
#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
৬৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন