সর্বশ্রেষ্ট ও পরিপূর্ণ মুমিন

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৪৯:৫৭ রাত

#চরিত্রবান_ব্যক্তিই_সর্বোত্তম_ও_পরিপূর্ণ_মুমিন

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا ‏"

বাংলা: আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলিম হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের নারীদের নিকট চরিত্রে উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (তিরমিযী:১১৬২)

#আলোচনা: ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ণ মুমিন হতে হলে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। অন্য হাদীসে এসেছে-( إنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحَاسِنُكُمْ أَخْلَاقًا) "তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর" (বুখারী:৫৬৮৮) চরিত্রহীন ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হাদীসের পরবর্তীর অংশ হলো, যারা নারীদের/ স্ত্রীদের কাছে কাছে সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী তারাই মুমিনদের মাঝে সর্বোত্তম। নারী বলতে, স্বীয় পরিবারের স্ত্রী, কন্যা, বোন ও নিকটাত্মীয় তথা অধিনস্থ নারী উদ্দেশ্য। যারা স্বীয় অধীনস্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দয়ার্দ্র নয়, যারা তাদের প্রতি খারাপ আচরণ করে তারা বাইরে যতোই ভালো হোক প্রকৃতপক্ষে তারা প্রকৃত মুমিন নয়। পরিবারের লোকেরাই বলতে পারবে তার প্রকৃত চরিত্রের কথা। অন্য বর্ণনায় এসেছে-

(" أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ، وَخَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ ") "ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ণ মু’মিন ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সুন্দর এবং তারাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যারা স্বীয় পরিবারের কাছে উত্তম।" (মু'জামুল আওসাত:৪৪১৭, সহীহ আত তারগীব:২৬৬০)

অপর বর্ণনায় এসেছে-

(أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهِ) "ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ণ মু’মিন ব্যক্তি হল সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সুন্দর এবং যে ব্যক্তি স্বীয় পরিবারের প্রতি অধিক দয়ার্দ্র (হাকেম:১৭৮, আহমাদ:২৬৬৭৭, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ)

সব মানুষের চেয়ে বেশি উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (বুখারী:৬২০৩, মুসলিম:২৩১০)

#উত্তম_চরিত্র: ভালো চরিত্র বলতে, মানুষের সাথে সদাচরণ করা, নম্র ও ভদ্রতার সাথে কথা বলা, কাউকে কষ্ট/বিপদে না ফেলা, ক্রোধকে প্রশমিত রাখা, বিপদে ধৈর্যধারণ করা, কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করা, লজ্জাশীলতা, বেহায়াপণা সহ সকল পাপ ও অনিষ্ট থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।

হাসান বাসরী (রহ.) বলেন: উত্তম চরিত্রের হাক্বীকাত হলো সৎ কাজ করা, কাউকে কষ্ট না দেয়া এবং হাসিমুখে কথা বলা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হা: ৪৬৮২)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রত্যেক ধর্মে চরিত্র আছে, ইসলামের সচ্চরিত্রতা হল লজ্জাশীলতা। (সহীহ আত তারগীব:২৬৩২)

উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস এসেছে। যেমন-

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো-বান্দাকে/মুসলিমকে যা কিছু দেয়া হয় তার মধ্যে উত্তম জিনিস কী? তিনি বলেনঃ সচ্চরিত্র। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:২৫৭০২/২৫৭০৩)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার নিকট প্রিয়তর এবং কিয়ামতের দিন আমার নিকটবর্তী আসনে উপবিষ্ট হবে তোমাদের মধ্যকার এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করবো না? লোকজন চুপ থাকলো। তিনি দুই অথবা তিনবার কথাটি বললেন। লোকজন বললো, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি (মুসনাদ আহমাদ:৬৭৩৫, ইবনে হিব্বান:৪৮৫, আদাবুল মুফরাদ:২৭২)

হাদীসে এসেছে সর্ব প্রথম মীযানের পাল্লায় নেক চরিত্রের ওজন নেয়া হবে। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:২৫৩৩৭)

আবূদ দারদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে মুমিনের দাড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযী:২০০২) অপর বর্ণনায় এসেছে-

সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লায় সবচাইতে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চরিত্র মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোযাদার ও নামাযীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়। (তিরমিযী:২০০৩, সহীহ আল জামে':৫৭২৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর (রা.)কে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় করো, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ করো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করো। (তিরমিযী:১৯৮৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম বান্দা হল সেই, যার চরিত্র সুন্দর। (সহীহ আল জামে':১৭৯)

পুনশ্চ: হাদীসটির ভিন্ন ভাষ্য-

أَكْمَلُ النَّاسِ إيمَانًا وَأَفْضَلُ الْمُؤْمِنِينَ إيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ، وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:৩৪৮৭/৫)

#বর্ণনাকারী: আবু হুরাইরা, আয়িশাহ, আনাস ইবনে মালিক (রা.)

#মান:সহীহ

#গ্রন্থ: তিরমিযী, শিশুর দুধপান অধ্যায়, হা:১১৬২, মুসনাদে আহমাদ:৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:৩৪৮৭, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:২০১৭৫, সহীহ ইবনে হিব্বান:৪১৭৬, সহীহ আততারগীব:১৯২৩, ২৬৬০, সহীহাহ:২৮৪, সহীহুল জামে':১২৩২, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৪৪১৭, মাযমাউয যাওয়ায়েদ:৭৬১৫

শুধু প্রথমাংশ আছে- আল মুসতাদরাক:১, ২, সুনানে দারেমী: ২৭৯২, আবু দাউদ:৪৬৮২, আহমাদ:১০৪৩৬/৭৪০২,১০৮১৭, সহীহ ইবনে হিব্বান:৪৭৯, সহীহ আততারগীব:২৬৪৬, সহীহ আল জামে':১২৩০

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (নীল মুসাফির)

#দরসে_হাদীস

বিষয়: বিবিধ

৬৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File