ঈমানকে নবায়ন করা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ০৭:১৬:০৭ সন্ধ্যা
দরসে হাদীস
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَخْلَقُ فِي جَوْفِ أَحَدِكُمْ كَمَا يَخْلَقُ الثَّوْبُ الْخَلِقُ، فَاسْأَلُوا اللَّهَ أَنْ يُجَدِّدَ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِكُمْ
#বাংলা: আব্দুল্লাহ বিন আ'মর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "অবশ্যই তোমাদের হৃদয়ে ঈমান জীর্ণ হয়; যেমন জীর্ণ হয় কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করো, যাতে তিনি তোমাদের হৃদয়ে তোমাদের ঈমান নবায়ন করে দেন।" (আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন:৫)
#আলোচনা: আনুগত্যের দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ দ্বারা ঈমান হ্রাস পায়। গোনাহ ও মুনাফিকীর ফলে প্রথমে অন্তরে একটি কাল দাগ পড়ে। তারপর পাপাচার ও কুফরীর তীব্রতার সাথে সাথে সে কাল দাগটিও বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর কালো হয়ে যায়। মুমিনকে তার ঈমানকে নবায়ন/জাগরণ ও বৃদ্ধি করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। আলোচ্য হাদীসে এই বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। নিচে আলোচনা করবো কী ভাবে ঈমানকে নবায়ন ও বৃদ্ধি করা যায়-
১.ঈমান বৃদ্ধি ও নবায়নের প্রথম কর্মপন্থা হলো বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা।
আল্লাহ বলেন-
"আর যখনই কোন সূরা নাযিল করা হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটি তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করল’? অতএব যারা মুমিন, নিশ্চয়ই তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়।" (সূরা তাওবাহ, ৯:১২৪)
“মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, এবং যখন তাঁর আয়াত সমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বর্ধিত করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।” (সূরা আনফাল, ৮: ২)
২. বেশি বেশি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা: পাপের কারণে অন্তরে দাগ পড়ে, ঈমানের মৃত্যু ঘটতে থাকে। অন্তরের মরিচা দুর করার জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার করার কথা হাদীসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "আমার অন্তরে (কখনো কখনো) আবরণ পড়ে যায়, তাই আমি প্রতিদিন একশ বার ইসতিগফার পাঠ করে থাকি।" (মুসলিম:২৭০২)
৩. আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে ঈমান নবায়ন: বেশি বেশি আল্লাহর যিকর, তথা বেশি বেশি নফল সালাত, নফল রোযা, সদাকাহ করা ও তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদের মাধ্যমে ঈমানকে নবায়ন ও বৃদ্ধি করা যায়।
আল্লাহ রাসূল সা. আমাদের ঘুম থেকে ওঠার দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي فِي جَسَدِي وَرَدَّ عَلَىَّ رُوحِي وَأَذِنَ لِي بِذِكْرِهِ
“সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার যিনি আমার দেহকে হিফাযাত করেছেন এবং আমার জান আবার আমাকে ফেরত দিয়েছেন এবং তাকে স্মরণ করারও অনুমতি (তাওফীক) দান করেছেন”। (তিরমিযী:৩৪০১)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: শয়তান আদম সন্তানের কলবের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস্ওয়াসা দিতে থাকে। (মিশকাত:২২৮১)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঈমানকে পুনরায় সতেজ করে নাও। বলা হলোঃ কিভাবে আমাদের ঈমানকে পুনরায় সতেজ করে নিব হে রাসূলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশি বেশি পাঠ করো। (হাকেম:৭৭৩১) হাদীসটিকে আলবানী (রহ.) দূর্বল বলেছেন। ইমাম হাকেম, হাইসামী সহ অন্যদের মতে হাদীসটি হাসান বা সহীহ। যেহেতু হাদীসে এসেছে সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হচ্ছে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" সুতরাং এই কালিমা বেশি বেশি অন্তরে ও মুখে পাঠ করা উচিত। তবে অবশ্যই এককভাবে ও লোকদেখানো বর্জিত হতে হবে।
৪. চরিত্রের সংশোধন ও উন্নয়ণ: আচার-আচরণ তথা চরিত্রকে যতো সুন্দর করা হবে ঈমান ততোই পরিপূর্ণ হবে। চরিত্রহীন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলিম হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। (তিরমিযী:১১৬২)
ঈমানের স্বাদ:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। (মুসলিম:৩৪)
#ঈমানকে_সতেজ ও দৃঢ় রাখার জন্য দু'আ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু'আগুলো করতেন-
" اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
“কলব সমূহের পরিচালক হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কলব সমূহকে তোমার বশ্যতার উপর স্থির রাখুন।” মুসলিম:২৬৫৪)
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত (দৃঢ়) রাখো। (তিরমিযী:২১৪০)
তাছাড়া কুরআনের এই দু'আটিও বেশি বেশি পড়া উচিত-
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ ہَدَیۡتَنَا وَ ہَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَہَّابُ
হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা আলে ইমরান, ৩:৮)
#বর্ণনাকারী: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস(রা.)
#মান:হাসান,সহীহ
#গ্রন্থ: হাকেমর "আল মুসতাদরাক",ঈমান অধ্যায়, হা:৫ ; সহীহ আল জামে':১৫৯০, জামিউস সগীর:১৯৫১, সহীহাহ:১৫৮৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ:১/৫৭
#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (নীল মুসাফির)
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন