দু'আ ও দাওয়াই: মুসলমানদের_ব্যাপারই_বিস্ময়কর
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৭ মার্চ, ২০২০, ০২:২৬:৪২ রাত
কথিত "নাস্তিকদের"বিরুদ্ধে কিছু বলা বা তাদের জবাব দেয়ার মতো রূচি আমার নেই। তবুও সাধারণ মানুষের মাঝে ভেসে বেড়ানো বিভ্রান্তি দুর করার জন্যই লিখতে হচ্ছে। কথিত বললাম এই কারণে যে, এরা বিশেষ করে মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া নাস্তিক বলে দাবিদারগুলো ঠিকই বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকে। (মনোবিজ্ঞানীদের বই পড়লেই জানতে পারবেন!)
১.ইসলাম বলে না যে বৈশ্বয়িক/পার্থিব সফলতাই চুড়ান্ত সফলতা। অর্থ্যাৎ ধন-সম্পদে ঐশ্বর্যশীল হওয়াই সফলতা নয়, বরং পরকালের বিচারে (জাহান্নামের শাস্তি থেকে) মুক্তি পাওয়াটাই সফলতা। (সূরা আলে ইমরান:১৮৫) আল্লাহর কাছে পৃথিবীটা মূল্যহীন না হলে কোনো কাফিরকে একঢোক পানিও পান করতে দিতেন না (তিরমিযী:২৩২০)
২. পার্থিবজীবনটা পরীক্ষাক্ষেত্র। এই পরীক্ষায় কৃতকার্যরা পরকালে ফলভোগ করবে। যেহেতু পৃথিবীটা পরীক্ষাকেন্দ্র তাই এখানে ভালো-মন্দ, আলো-অন্ধকার, রোগ-শোক-জরা-ব্যধি, সুখ-দুঃখ, সুন্দর-কুৎসিত, পবিত্র-নোংরায় ভরপুর। আল্লাহ সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, যেমন- ভালো.মন্দ, রাত-দিন, সুস্থ্যতা-অসুস্থ, ধনাঢ্যতা-দারিদ্রতা, হালাল-হারাম, আনুগত্য-অবাধ্যতা, হেদায়েত-গোমরাহী ইত্যাদি পরীক্ষার সামগ্রী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। (দ্র. সূরা মূলক:২, আলে ইমরান: ৩৫)
৩. যেহেতু পার্থিবজীবন পরীক্ষাকেন্দ্র, তাই দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য। (দ্রষ্টব্য: সহীহ মুসলিম:২৯৫৬)
৪. যেহেতু পৃথিবীতে আমাদের নির্দিষ্ট কিছুদিন অবস্থান করতে হবে, পার্থিব জীবন সুশৃঙ্খলময় ও কল্যাণকর রাখতে জাগতিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের কিছু মূলনীতি শুধু ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, বাকি বিধান ও নীতি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিবর্তনশীল ও পরিবর্দ্ধনশীল।
৫. ইসলাম এসেছে পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় ও সুন্দরভাবে বাস করে পারলৌকিক জীবনের সফলতা অর্জনের পথ দেখাতে। সুতরাং এখানে জাগতিক সব বিধান বর্ণনা করা হয় নি, কিন্তু পারলৌকিক তথা ইবাদতের সব বিধান বিবৃত রয়েছে।
৬. কুরআনে পার্থিবজীবনের বিধান থাকলেও এটা শুধু জীবনবিধানের জন্য নয়, এখানে লেনদেন-ব্যাবসায়ের মূলনীতি আলোচনা করা হলেও এটা কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের গ্রন্থ নয়, এখানে কৃষিবিধান থাকলেও এটা কোনো কৃষিবিজ্ঞান নয়, এখানে চিকিৎসার মূলনীতি আলোচনা করা হলেও এটা কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞান নয়, এখানে গ্রহ-নক্ষত্রের আলোচনা থাকলেও এটা জ্যোতির্বিজ্ঞান নয়, এখানে শাসননীতি, বিচারনীতি থাকলেও এটা কোনো সংবিধান বা দণ্ডবিধির গ্রন্থ নয়; এটা তো আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত, জাহান্নামের পথ থেকে মানুষকে জান্নাতের পথ দেখানোর জন্য। (আল কুরআন- বাকারা ২:২, ১০,আলে ইমরান ৩:১৩৮, ইউনুস ১০:৫৭, লুকমান ৩১:৩)
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের সফলতা শেখানো তথা পৃথিবীতে ঐশ্বর্য কামানোর তরীকা নিয়ে আসেন নি, তিনি এসেছেন পারলৌকিক জীবনের সফলতার পন্থা নিয়ে। (সহীহ মুসলিম:২৩৬২,২৩৬৩) তিনি বলে গেছেন-দুনিয়াবী বিষয়ে তোমরাই আমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখো।
৮. রোগ-ব্যধি, বিপদাপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। মুমিনদের জন্য এতে গোনাহ-মুক্তি ও অন্তর-পরিশুদ্ধি হয়ে সাফল্যার্জনের সুযোগ নিয়ে আসে। (তিরমিযী:৯৬৫-৯৬৬)
৯. আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ নাযিল করেন না যার প্রতিষেক তিনি নাযিল করেন নি,(মিশকাত:৪৫১৫) রাসূলুল্লাহ সা. রোগাক্রান্ত হলে কখনো দুআ পড়তেন, কখনো ঝাড়-ফুঁক করতেন, কখনো চিকিৎসাও করতেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি ঔষধ ব্যবহার করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। হে আল্লাহর বান্দাগণ! চিকিৎসা করো। কেননা বার্ধক্য রোগ ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময় সৃষ্টি করেননি। (মিশকাত:৪৫৩২)
১০. মহামারী: আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বললেন, তা একটি আযাব। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাগণের উপর তা রহমত করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন মহামারী আক্রান্ত জায়গায় সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ্ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে তাহলে সে একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে। (বুখারী:৩২৮৭)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্বা‘ঊন (মহামারী)’র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত:১৫৪৫)
১১. কাফিরদের উপর মুমিনদের বিজয় জাগতিক বিষয় নিয়ে নয়, দুনিয়ার নয় বরং দ্বীনের বিজয়। দ্বীন হিসেবে আমরা সব সময়ই বিজয়ী। আমাদের কুরআনের দিকে তাকিয়ে দেখো, আজো অপরিবর্তনীয় ও কার্যকর। মক্কা ও মদীনার দিকে তাকিয়ে দেখো।
১২.পরিশেষে বলতে চাই, ওহে নাস্তিকরা নিজেদের চরকায় তেল দাও, আমাদের নিয়ে ভাবতে হবে না। আমরা তো দুনিয়াকে বিশ্রামাগার হিসেবে নিয়েছি, মুসাফিরের মতো আছি। আমাদের ব্যাপারটাই অন্যরকম!!
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম:২৯৯৯)
#সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
৭১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন