ভালো কথা সদ্বাকা স্বরূপ : বাক_বাগ্মীতা ও কথাবলার আদব-৪
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০১ মার্চ, ২০২০, ০৩:২১:৫৪ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ভাল কথা সদাকাহ স্বরূপ:
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে-
(الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ )"সুমিষ্ট ভাষাও সদাকাহ"। (বুখারী:৫৬৭৭)1
সাধারণভাবে সকল ভালো কথা অর্থ্যাৎ মানুষের সাথে ভালো কথা বলা সদাকার সমপরিমাণ সওয়াব বয়ে আনে। যেমন অপর হাদীসে এসেছে 'প্রত্যেক ভালোকাজই সদাকাহ'। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত:১৮৯৩)
ভালো কথা বা উত্তম কথা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
আর আমার বান্দাদেরকে বলুন, তারা যেন এমন কথা বলে যা উত্তম। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্ৰকাশ্য শত্ৰু। (সূরা ১৭ ইসরা:৫৩)
আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, মুমিনরা পরস্পরে কথা বলার সময় জিহ্বাকে যেন সাবধানে ব্যবহার করে। যেন ভালো কথা বলে। অনুরূপ কাফের, মুশরিক এবং কিতাবধারীদেরকে সম্বোধন করার প্রয়োজন দেখা দিলে, তাদের সাথে করুণাসিক্ত কণ্ঠে ও নরমভাবে কথা বলবে।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন-
'আপনি কি লক্ষ্য করেন না আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎবাক্যের(১) তুলনা উৎকৃষ্ট গাছ যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা উপরে বিস্তৃত।' ( সূরা ১৪ ইবরাহীম:২৪)
“কালেমা তাইয়েবা”র শাব্দিক অর্থ “পবিত্র কথা।” পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এ কালেমা। (তাফসীরে বাগভী)এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ (كَلِمَةً طَيِّبَةً) হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেয়া আর (كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ) হলো মু'মিন। (তাফসীরে ইবন কাসীর)
আল্লাহ আরো বলেন-
যে কেউ সম্মান-প্রতিপত্তি চায়, তবে সকল সম্মান-প্রতিপত্তির মালিক তো আল্লাহই। তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ হয় সমুত্থিত এবং সৎকাজ, তিনি তা করেন উন্নীত। আর যারা মন্দ কাজের ফন্দি আঁটে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আর তাদের ষড়যন্ত্র, তা ব্যর্থ হবেই। (সূরা ৩৫ ফাতির:১০) আলোচ্য আয়াতে কালিমায়ে তয়্যিবাহ বা উত্তম কথা হলো- আল্লাহর তাসবীহ ও তাহমীদ (পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা), কুরআন তেলাওয়াত, ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ। ‘আরোহণ করে’ (উপরে চড়ে বা উঠে) এর অর্থ হলঃ কবুল বা গ্রহণ করা।( দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে কাসীর) ইবন আব্বাস রা. বলেন, ভাল কথা হচ্ছে, আল্লাহর যিকির। (তাফসীরে তাবারী)
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তাত্থেকে আশ্রয় চাইলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আবার জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন, তারপর তাত্থেকে আশ্রয় চাইলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিলেন। শু‘বাহ (রহ.) বলেনঃ দু’বার যে বলেছেন, এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচ এক টুক্রা খেজুর দিয়ে হলেও। আর যদি তা না পাও, তবে সুমিষ্ট ভাষার বিনিময়ে। (বুখারী:৫৬৭৭, মুসলিম:১০১৬)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। শুভ আলামতই আমার নিকট পছন্দনীয়, আর তা হল উত্তম বাক্য বা সুন্দর কথা।(বুখারী: ৫৪২৪, ৫৪৪০; মুসলিম: ২২২৪)2
টিকা:
1. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদাকাহ রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সদাকাহ, ভাল কথাও সদাকাহ, সালাত আদায়ের উদ্দেশে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সদাকাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদাকাহ। (সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়, হা: ২৮২৭, সহীহ মুসলিম: ১০০৯)
2.
عَنْ أَنَسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ عَدْو‘ى وَلاَ طِيَرَةَ وَيُعْجِبُنِي الْفَأْلُ الصَّالِحُ الْكَلِمَةُ الْحَسَنَةُ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। শুভ আলামতই আমার নিকট পছন্দনীয়, আর তা হল উত্তম বাক্য। (বুখারী, চিকিৎসা অধ্যায়, হা: ৫৪২৪, ৫৪৪০; মুসলিম: ২২২৪, আবু দাউদ:৩৯১৬, তিরমিযী: ১৬১৫, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ১৬০১৮, মুসনাদে আহমাদ:১১৯১৪)
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
৬৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন