পথভ্রষ্ট_নেতৃবৃন্দ_ও_মূর্খতার_ছড়াছড়ি: আলেমদের_বাড়াবাড়ি

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৩:০০ রাত

পথভ্রষ্ট নেতৃবৃন্দ ও মূর্খতার ছড়াছড়ি: আলেমদের বাড়াবাড়ি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

#পথভ্রষ্টকারী_নেতৃবৃন্দ_প্রসঙ্গে:

عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ يَخْذُلُهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ

সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদেরকেই ভয় করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ আমার উম্মাতের এক দল লোক আল্লাহ তা'আলার হুকুম (কিয়ামাত) আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সর্বদা বিজয়ীবেশে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের অপমানিত করতে চাইবে তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

সূত্র: তিরমিযী: ২২২৯, সুনানে দারেমী:২১৫/২৭৯০,মুসনাদে আহমাদ: ২১৮৮৮)



সাওবান (রা)এর হাদীসের বিস্তারিত রূপ-

সাওবান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ (অথবা) আমার রব পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর যুতটুকু আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছে, ততটুকুতে অচিরেই আমার উম্মাতের রাজত্ব বিস্তার লাভ করবে। আমাকে লাল ও সাদা (স্বর্ণ ও রূপার) দু’টি ধনভান্ডার দেয়া হয়েছে। আর আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট আমার উম্মাতের জন্য এই কথার আবেদন করছি যে, তিনি তাদের সবাইকে যেন দুর্ভিক্ষে ধ্বংস না করেন এবং তাদের নিজেদের ব্যতীত কোনো শত্রু যেন তাদের উপর কর্তৃত্ব করতে না পারে যারা তাদের ধ্বংস করে দিবে।

নিশ্চয়ই আমার রব আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আমি যা ফায়সালা করি, তা বাতিল হয় না। তবে আমি তাদের সবাইকে একসঙ্গে দুর্ভিক্ষে ধ্বংস করবো না এবং তাদের নিজেদের ছাড়া দিকবিদিক থেকে আগত তাদের সমূলে বিনাশকারী বিধর্মী শত্রুকে তাদের উপর কর্তৃত্ব করতে দিবো না, তবে তাদের কতক অপরদের ধ্বংস করবে এবং কতক অপরাধে বন্দী করবে।

আর আমি আমার উম্মাতের পথভ্রষ্ট নেতাদের ব্যাপারে শঙ্কিত। আমার উম্মত যখন পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে, তখন কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা বিরত হবে না। আর আমার উম্মাতের কিছু সংখ্যক মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আমার উম্মাতের কতিপয় গোত্র মূর্তি পূজায় লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে না।

অবিলম্বে আমার উম্মাতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে, তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী এবং আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। তবে আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের উপর অটল থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, এমন কি এ অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামাত) এসে যাবে। (আবু দাউদ: ৪২৫২,তিরমিযী:২১৭৬, ইবনে মাজাহ:৩৯৫২, ইবনে হিব্বান:৭২৩৮,আহমাদ: ২১৯৪৭, মুসলিম: ২৮৮৯ সংক্ষিপ্তাকারে, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:৪৬৬৩, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:১৮০৪৯, আল মুসতাদরাক: ৩৪৭৩, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৮৩৯২)

কাইস ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ বাকর (রাঃ) আহমাস গোত্রের যায়নাব নামের এক নারীর নিকট গেলেন। তিনি গিয়ে দেখতে পেলেন, নারীটি কথাবার্তা বলছে না। তিনি (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করলেন, নারীটির এ অবস্থা কেন, কথাবার্তা বলছে না কেন? তারা তাঁকে জানালেন, এ নারী নীরব থেকে থেকে হাজ্জ পালন করে আসছেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে বললেন, কথা বল, কেননা এটা হালাল নয়। এটা জাহিলীয়্যাত যুগের কাজ। তখন নারীটি কথাবার্তা বলল। জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? আবূ বাকর (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমি একজন মুহাজির লোক। মহিলাটি জিজ্ঞেস করল, আপনি কোন গোত্রের মুহাজির? আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, কুরাইশ গোত্রের। মহিলাটি জিজ্ঞেস করলেন, কোন কুরাইশের কোন শাখার আপনি? আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, তুমি তো অত্যধিক উত্তম প্রশ্নকারিণী। আমি আবূ বকর। তখন মহিলাটি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, জাহিলীয়্যা যুগের পর যে উত্তম দ্বীন ও কল্যাণময় জীবন বিধান আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন সে দ্বীনের উপর আমরা কতদিন সঠিকভাবে টিকে থাকতে পারব? আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, যতদিন তোমাদের ইমামগণ তোমাদেরকে নিয়ে দ্বীনের উপর অটল থাকবেন। মহিলা জিজ্ঞেস করল, ইমামগণ কারা? আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, তোমাদের গোত্রে ও সমাজে এমন সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোক কি দেখনি যারা নির্দেশ দিলে সকলেই তা মেনে চলে। নারীটি উত্তর দিল, হাঁ। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, এরাই হলেন জনগণের ইমাম। (বুখারী: ৩৮৩৪)

#মূর্খতার_ছড়াছড়ি:



عَنْ شَقِيقٍ، قَالَ كُنْتُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ وَأَبِي مُوسَى فَقَالاَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ لأَيَّامًا يَنْزِلُ فِيهَا الْجَهْلُ، وَيُرْفَعُ فِيهَا الْعِلْمُ، وَيَكْثُرُ فِيهَا الْهَرْجُ، وَالْهَرْجُ الْقَتْلُ ‏"‏‏.‏

শাকিক (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ও আবূ মূসা (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। তাঁরা বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ইল্‌ম উঠিয়ে নেওযা হবে। সে সময় 'হারজ' ব্যাপকতর হবে। আর 'হারজ' হল (মানুষ) হত্যা।

(বুখারী: ৬৬৫৩, মুসলিম:২৬৭২) তাছাড়া বর্ণিত আছে তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ,মুসনাদে বাযযার,মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, তাবারানীর মু'জামুল কাবীরে।

#আলেম_কম#বক্তা_বেশি:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنْ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার অন্তর থেকে ইল্‌ম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইল্‌ম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে। (বুখারী:১০০, মুসলিম:২৬৭৩)

আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-'তোমাদের এ যুগে অনেক বিদ্বান কিন্তু কম বক্তা, এ সময়ে নির্দেশিত বিষয়ের (কর্তব্যকর্মের) এক-দশমাংশ পরিমাণও ত্যাগ করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর এমন এক যুগ আসবে যখন আলেম হবে কম বক্তা হবে বেশি, তখন কোন ব্যক্তি যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশ পরিমাণও পালন করে তাহলে সে মুক্তি লাভ করবে। (দ্রষ্টব্য: সিলসিলাতুল সহীহাহ: ২৫১০)

#আলিমদের_পদস্খলন:

عَنْ زِيَادِ بْنِ حُدَيْرٍ، قَالَ: قَالَ لِي عُمَرُ: «هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الْإِسْلَامَ؟» قَالَ: قُلْتُ: لَا، قَالَ: يَهْدِمُهُ زَلَّةُ الْعَالِمِ، وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ

যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলতে পারো, ইসলাম ধ্বংস করবে কোন্ জিনিসে? আমি বললাম, আমি বলতে পারি না। তখন তিনি [‘উমার (রাঃ)] বললেন, ‘আলিমদের পদস্খলন, আর আল্লাহর কিতাব কুরআন নিয়ে মুনাফিক্বদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে। (সুনানে দারিমী: ২১৪, মিশকাত:২৬৯)

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল_আলম (#নীল_মুসাফির)

বিষয়: বিবিধ

৬৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386794
১৪ জানুয়ারি ২০২০ সকাল ০৮:৪৪
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ জনাব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সমস্ত প্রকার শিরক, শয়তান এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File