#আত্মসংশোধনই_কর্তব্য: সংশোধন হৌক নিজের থেকে
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৫ মার্চ, ২০১৯, ০৯:৫০:৪০ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
মাগরিবের সময় আমার রুমমেট এসে বললো, ওরা আমাদের পিছনে নামায পড়বে না। আমি বললাম, কেন? তাহলে আমরা তাদের পিছনে পড়বো। ওরা বলতে আমাদের পাশের রুমমেটরা (এ্কই বাসার) রুমমেট বললেন-
: আমরা নাকি নামায পড়ি আবার ইউটিউব দেখি। খুব একটা সুবিধার লোক না আমরা। ( আসলে আমরা বলতে আমাকেই বুঝিয়েছেন তিনি, কেননা নামাযে আমাকেই ইমামতি করতে হয়।)
আমি অবাক হবার ভান করে বললাম, আমার পিছনে যদি নামায পড়তে অসুবিধা হয় তাহলে আমি উনাদের পিছনে পড়বো, নামায পড়া বাদ দিবে কেন?
তিনি বললেন- তারা তো নামায পড়াতে জানে না।
আসলে আমি জানি, উনারা নামায না পড়ার নানা বাহানা আবিষ্কার করেন। আগে বলতেন, আগে ঈমান ঠিক করুন, তারপর আ'মল। আমি বলতাম: তা তো অবশ্যই। আমাদের ঈমান এবং আ'মল দুটোই সংশোধন করতে হবে। অপেক্ষা করা যাবে না। কারণ আমরা কেউ জানি না আমাদের আয়ু কতদিনের।
তারপর উনাদের কেউ কেউ বলতেন, শরীর পাক না, জামা পাক না, গোসল করি নি। এখন আবার বলা শুরু করছেন- হুজুরদেরই ঠিক নাই। কার পিছনে নামায পড়বো?
আমি বললাম, কে কী ধরণের লোক বা কার আ'মল কেমন তা নিয়ে আপনার চিন্তা কেন? আপনি নিজেকে আগে সংশোধন করুন। নিজেকে আগে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করুন, তারপর অপরের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। তখন তারা চুঁপ হয়ে যায়। অন্য কোনো বাহানার কথা বলে।
উনাদের যুক্তি হলো, নিজেকে আগে পরিপূর্ণ মুমিন বানিয়ে তারপর নামায পড়া শুরু করবে। অর্থ্যাৎ আগে যাবতীয় খারাপ কাজ বিরত থাকবে, তারপর নামায রোযা শুরু করবে। অথচ নামায ত্যাগ করাও যে একটা বড় ধরণের খারাপ কাজ সেটা ভুলে যায়। নামায হলো ঈমান আর কুফরের মাঝে পার্থক্য সেটা তারা ভুলে যায়!
এই ধরণের লোকদের সংশোধনের দাওয়াত দেয়া যায় না, তাদের কিছু শেখাতে পারি না। যদি বলি, আসুন কুরআন শিক্ষা করি। তারা বাহানা তোলে- আপনার কাছ থেকে শিক্ষা করা যাবে না, আপনি নামাযও পড়েন আবার আমাদের মতো টিভি ( বর্তমানে ইউটিউব, ফেসবুক) দেখেন। যদি বলি, ঠিক আছে। আমার কাছ থেকে শিখতে হবে না, যার কাছ থেকে আপনি ভালো মনে করেন তার কাছ থেকেই শিখুন। তখন বলে, যামানা খারাপ হয়ে গেছে, এখন ভালো মানুষই নাই। বলি- আপনি নিজেই ভালো হয়ে যান, কেননা আপনাকে তো জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে। তখন লম্বা নিশ্বাস নিয় বলে-
দেখি! আল্লাহ যদি চায়.......
আমাদের মুল সমস্যা হলো, কেউ যখন আমাদের সংশোধনের পথে দাওয়াত দেয়, তখন আমরা পরের ভুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ আগে নিজেকে সংশোধন করতে হবে, তারপর অপরকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
আল্লাহ বলেন-
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে,... ( সূরা তাহরীম, ৬৬:৬)
কেউ কারো ভার বহন করবে না:
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ। ( সূরা মুদ্দাসসির, ৭৪:৩৮)
مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولً
যারা সৎপথ অবলম্বন করবে, তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্যই সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে, তারা নিজেদেরই ধ্বংসের জন্যই হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না। আর আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। ( সূরা ইসরা, ১৭:১৫)
"প্রত্যেকেই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না"।... ( সূরা আনআম, ৬:১৬৪)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন- "যে কেউ পরিশুদ্ধ হয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য"। (সূরা ফাতির, ৩৫:১৮)
প্রত্যেকে আত্মসংশোধনই কর্তব্য:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
'হে বিশ্বাসীগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহরই দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যা করতে, তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন।' (সূরা মায়িদা, ৫:১০৫)
পুনশ্চ: এর মানে এই নয় যে, নিজেকে সংশোধন করে নেওয়াই যথেষ্ট। আর সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং আয়াতের সঠিক ভাবার্থ এই যে, তাদের বুঝানো সত্ত্বেও যদি তারা পাপ থেকে বিরত না থাকে এবং সৎপথ অবলম্বন না করে, তাহলে এই অবস্থায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না; বরং তোমরা সৎপথে আছ এবং পাপ করা হতে বিরত আছ।
যেমন আল্লাহ বলেন-
আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভাল উপার্জন করবে সে তার (প্রতিদান পাবে) এবং যে মন্দ উপার্জন করবে সে তার (প্রতিফল পাবে)। (২:২৮৬)
আবূ উমাইয়্যা আশ-শাবানী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি আবূ সালাবা আল-খুশানী (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে বললাম, এ আয়াত প্রসঙ্গে আপনি কি করণীয় বলে ঠিক করেছেন? তিনি বললেনঃ কোন আয়াত? আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে বিপথগামী হয়েছে সে তোমাদের কোন লোকসান করতে পারবে না" (সূরাঃ আল-মায়িদাহ– ১০৫)।
আবূ সালাবা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জেনেছে এমন একজনকে প্রশ্ন করেছ। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেনঃ বরং তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিতে থাক এবং খারাপ কাজ হতে বিরত করতে থাক। অবশেষে যখন দেখবে কৃপণতার বশ্যতা করা হচ্ছে, নাফসের অনুসরণ করা হচ্ছে, দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতকে সর্বোত্তম মনে করছে, তখন তুমি শুধুমাত্র নিজেকে রক্ষায় নিয়োজিত থেকে এবং সাধারণের ভাবনা ছেড়ে দিও। কারণ তোমাদের পর এমন যুগ আসবে, যখন (দীনের উপর) সবর করে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতের মুঠোয় ধারণ করে রাখার মত (যন্ত্রণাদায়ক) হবে। ঐ সময় দীনের উপর আমলকারীর প্রতিদান হবে তোমাদের মত পঞ্চাশজন আমলকারীর প্রতিদানের সমান।
আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রাহঃ) বলেনঃ উতবা ছাড়া অপরাপর রাবীর রিওয়ায়াত আরো আছে, প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন না তাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন আমলকারীর সমান? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজনের সমান তার সাওয়াব হবে। (দ্রষ্টব্য: তিরমিযী: ৩০৫৮, সুনানুল কুবরা: ১৯৫৬৪, আল মুসতাদরাক লিল হাকেম: ৭৯৮২, আবু দাউদ:৪৩৪১)
দাওয়াত: নামাযের দাওয়াত দিতে গিয়ে অনেকের গালমন্দ শুনতে হয়। অনেকে পিছনে নানা সমালোচনা করে, দোষ চর্চা করে। তারপরও তাদের নামাযের জন্য ডাকতে হয়। যদি দেখি দাওয়াতে তাদের ভালোর পরিবর্তে ক্ষতি হচ্ছে বেশি তখন চুপ হয়ে যাই, এটাই নিয়ম। যেমন- একজনকে জোর করে নামায পড়িয়ে শুনি, সে বলছে আমি তার হাঁটুতে ব্যথা বাড়িয়েছি। কেউ আমার প্রতি কঠোর হয়ে বলছে, নামাযই পড়বে না (আগে হয়তো কিছু পড়তো)। সুতরাং মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে হেকমতের সাথে। অনুনয় ,বিনয় করে এবং তাদের মর্জি বুঝে। কেননা আমরা কেউ কাউকে হেদায়াতের পথে আনতে পারবো না যতক্ষণ না আল্লাহ চান।
শয়তানের দোষ দেয়া যাবে না: শয়তানের কোনোশক্তি নাই, বরং আমরাই তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিপথগামী হই।
যখন সব কিছুর ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম; কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিনি; আমার তো তোমাদের উপর কোনো আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতিই দোষারোপ করো।... ( সূরা ইবরাহীম, ১৪:২২)
মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকুন নিজের স্বার্থেই:
'যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, ‘আমি তো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)’ তার অপেক্ষা কথায় উত্তম আর কোন্ ব্যক্তি?
ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত করো; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান। (সূরা ফুসসিলাত, ৪১: ৩৩-৩৫)
সংকলন ও সম্পাদনায়: #সামসুল_আলম
বিষয়: বিবিধ
৭০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন