বেহেশতে যাওয়ার দুইটি পথ: খ্রীষ্টানদের প্রতারণা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৯:০০ রাত
কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা বই এসেছে " কোরানে বেহেশতে যাওয়ার দুইটি পথ পাওয়া যায়" শিরোনামে খৃষ্টান এক বুড়ার মাধ্যমে। ছোট্টবেলায় খ্রিষ্টান মিশনারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বই ( নবীদের জীবনী, মুক্তির পথ বা উপায় ) এবং মাসিক পত্রিকা পেতাম। ঐ সমস্ত বইয়ের বিষয়গুলো ইসলামী পরিভাষায় লিখিত ছিলো। ওরা এই সমস্ত বইয়ের মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত নানা সমস্যায় জর্জরিত মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিতদের মগজ ধোলাই করে খ্রীষ্টান বানানোর চেষ্টা করতো। এখনো তারা সারা বিশ্বে এই কাজটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে করে যাচ্ছে। নানান ভাষায় তাদের তাবলীগের কাজ চলছে- বই রচনা করে এবং অর্থ দিয়ে মগজ ধোলাই করে।
আলোচ্য বইয়ের সারমর্ম হচ্ছে, কুরআনে নাকি বেহেশতে যাবার দুইটি পথের কথা বলেছেন; এর একটি হলো "সৎকর্ম" করা। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে নাকি প্রমাণিত এই নেক আমলের মাধ্যমে কারো নিশ্চিত নাযাতের আশা নাই! কেউ বলতে পারবে না সে জান্নাতে যেতে পারবে কিনা এমনকি স্বয়ং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলতে পারবেন না আল্লাহ তার সাথে কী আচরণ করবেন_? তাদের দলীল হলো-
১. কুরআনের ৪৬ নং সূরা আল কাহফের ৯ নম্বর আয়াত
২. বুখারী শরীফের ৫ম খন্ডের ১৮৩ পৃষ্টার ১৭ নম্বর হাদীস
তারপর তারা মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত বিশ্বাস "সকল নবী জান্নাতী" এর একটা ব্যখ্যা দাঁড় করালেন।
তারপর বেহেশতে যাওয়ার দ্বিতীয়টি পথের কথা আলোচনা করলেন কুরআনের আয়াত দিয়ে,
'
আমি তাদের (নবীগণের) পরে পরেই মারয়্যাম-তনয় ঈসাকে তার পূর্বে অবতীর্ণ তওরাতের সমর্থকরূপে প্রেরণ করেছিলাম এবং সাবধানীদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাকে ইঞ্জীল (ঐশীগ্রন্থ) দিয়েছিলাম, ওতে ছিল পথ-নির্দেশ ও আলো। ইঞ্জীল-ওয়ালাদের উচিত, আল্লাহ ওতে (ইঞ্জীলে) যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেওয়া। আর যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয় না, তারাই পাপাচারী। ( সূরা ৫ মায়িদা: ৪৬-৪৭)
তারপর এই আয়াতের নিজেদের মত করে তাফসীর পেশ করলেন তাদের বানানো আসমানী গ্রন্থ ইঞ্জিল তথা বাইবেল দিয়ে। যার সারমর্ম হলো-
আল্লাহর সাথে জান্নাতে থাকতে হলে আল্লাহ যেমন নিষ্পাপ তেমনি নিষ্পাপ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আদম সন্তানদের কেউই নিষ্পাপ নয় তাই আল্লাহ বিশেষ উপায়ে ঈসা মাসীহ আ.কে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন মানবজাতিকে নিষ্পাপ করে বেহেশতে নেওয়ার জন্য। ঈসা আ.-এর পূর্ববতী নবীদের নাকি নিষ্পাপ করতে পশু কুরবানীর ব্যবস্থা করেছিলেন কিন্তু সেই পদ্ধতি নাকি পুরোপুরি ঠিক ছিলো না তাই নিজের রূহ থেকে মারইয়ামের গর্ভে ফুঁ দিয়ে ঈসা (আ.)কে নিজের সন্তান হিসেবে পাঠালেন মানুষ জাতির পাপ বইতে যারা তার আনুগত্য করবে।
সকল নবী যে পাপমুক্ত ছিলেন না তার দলীল হিসেবে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত (৭: ১৫০-১৫১, ২০: ১২১, ২৮: ১৫-১৬, ৩৭: ১৩৯-১৪৪, ৩৮: ৩০-৩৫, ৭১: ২৫-২৮) পেশ করার পর আমাদের নবী সা. এর ব্যাপারেও দলীল দেয়া হলো- কুরআনের সূরা ৪৭ মুহ্ম্মাদ: ১৯ আয়াতটি থেকে।
তারপর কুরআনের " কোনো বোঝা বহনকারী কারো বোঝা বহন করবে না" আয়াতের ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন- একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তিই পারে অপরের বোঝা বহন করতে। " তুমি তার নাম ঈসা রাখবে, কারণ তিনিই লোকদের গুণাহ্ হতে নাজাত দিবেন"। ( -ইঞ্জিল শরীফ, মথি ১: ২১)
হযরত ঈসা মৃত্যুর তিনদিন পর আবার জীবিত হয়ে ৪০ দিন থেকে বেহেশতে চলে গেলেন । যাওয়ার আগে তার সাহাবীদের বললেনঃ
" তোমরা সারা দুনিয়ায় যাও, সমস্ত লোকদের নিকটে সুখবর (ইঞ্জিল) তাবলিগ করো। যে তার উপর ঈমান আনে ও তরিকাবন্দী নেয়, সে নাজাত পাবে। কিন্তু যে তার উপর ঈমান আনে না সে তার শাস্তি পাবে।"
- #ইঞ্জিল শরীফ, মার্ক ১৬ঃ ১৫ আয়াত।
এখন দাবি করা হচ্ছে কোন পথটি আপনি ধরবেন, যেখানে নিশ্চিত বেহেশতে যাওয়ার কথা আছে নাকি যেখানে বেহেশতে যাওয়ার পুরোপুরি গ্যারন্টি নেই!
তারপর তাদের বানানো ইঞ্জিল শরীফের বিভিন্ন সংস্করণ " লুক" "মার্ক" "মথি" ইউহোন্না" থেকে ওবং প্রেরিত, রোমীয় নামক সংস্করণ থেকে বিভিন্ন আয়াত পেশ করে এক ধ্রুম্রজাল তৈরি করে মানুষদের বিভ্রান্ত করেন।
বিভ্রান্তি দূরিকরণ:
১. আল্লাহ আমাদের নাযাতের পথ হিসেবে যেটাকে আখ্যা দিয়েছেন সেটা হলো "সীরাতুল মুস্তাকিম"। আর সকল নবী-রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) সেই পথেরই সন্ধান দিয়েছেন। (সুরা আলে ইমরান, ৩:৫১, সুরা নিসা ৪: ৬৮-৬ , সূরা মারইয়াম ১৯:৩৬, সূরা যুখরূফ ৪৩:৬৪)
২. আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সীরাতে মুস্তাকীমের পথ দেখান: ( সূরা বাকারা, ২: ১৪২, ২১৩, ১০:২৫, ২৪:৪৬)
৩. মুশরিকরা (আল্লাহর সাথে শরীককারী) সীরাতে মুস্তাকীমের পথ পাবে না: ( সূরা আন'আম,৬:১৬১)
৪. আল্লাহ ঈমানদার সৎকর্মশীলদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর কাফিরদের জাহান্নামে। ( সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:১২)
৫. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের ক্ষমা ও পুরষ্কারের ঘোষণা করে আল্লাহ জানিয়েছেন তাদের মাহাত্ম্য লিখিত আছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে। ( দ্রষ্টব্য: সূরা আল ফাতহ, ৪৮: ২৯)
৬. খ্রীষ্টানদের লিখিত বা্ংলা পুস্তিকাগুলোতে যে ইঞ্জিল শব্দটি ব্যবহার করা হয় তা মূলত তাদের প্রতারণা মাত্র। কেননা ইঞ্জিলের কোনো অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে নেই। তারা যেটা করে সেটা হলো বাইবেলের শেষভাগ বা নতুন সংস্করণ (New Testament) এর সুসমাচার (Gospel) এর বিভিন্ন কথা যা চারজন ব্যক্তি মথি, মার্ক, লুক, জন (Matthew Mark Luke John) সংকলন করেছেন। এ গুলো লিখিত হয়েছে ৪৫ থেকে ১৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। একাধিক লেখক New Testament রচনা করেন।
৭. তারা মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ সৃষ্টি করার জন্য ইসলামী পরিভাষা গ্রহণ করে তাদের বই লিখে এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ করে।
(দ্রষ্টব্য: https://en.wikipedia.org/wiki/Gospel; https://en.wikipedia.org/wiki/New_Testament)
পরিশেষ:
যারা অর্থের লোভে, দারিদ্রের ভয়ে তাদের তাবলিগে বিশ্বাসী হয়ে বেঈমান হচ্ছে তাদের বলবো-
"পার্থিব জীবন তো শুধু খেল-তামাশা মাত্র। যদি তোমরা বিশ্বাস কর ও আল্লাহ-ভীরুতা অবলম্বন কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে পুরস্কার দেবেন। আর তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চান না।" ( সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:৩৬)
হে বিশ্বাসীগণ! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (৫:৫১)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর অটল রাখুন। আমীন।
#সামসুল_আলম (নীল মুসাফির)
বিষয়: বিবিধ
৮৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন