সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-১১
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০১:৩৪:৫৯ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহীম
দৃষ্টির হেফাযত:
মহান আল্লাহ তা'আলা সকল বস্তুরই জ্ঞান রাখেন; তাতে তা ছোট হোক বা বড়, সূক্ষ্ম হোক বা স্থুল, উচ্চ মানের হোক কিংবা তুচ্ছ। এই জন্য যখন আল্লাহর জ্ঞানের ও তাঁর (সবকিছুকে) পরিবেষ্টন করে রাখার অবস্থা হল এই, তখন মানুষের উচিত তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের অন্তরে প্রকৃতার্থে তাঁর ভয় সৃষ্টি করা।
ইসলামে বেগানা নারী এবং কোনো সুদর্শন বালকের দিকে শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া তাকানো হারাম। চোখের খিয়ানত হল, আড়চোখে দেখা। পথ চলার সময় কোন সুন্দরী মহিলাকে চোরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা। চোখের হেফাযত হলো, অন্যকারো সম্পদের দিকে লোভাতুর চোখে না তাকানো, যা তার জন্য হারাম এমন বিষয় বা বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত না করা। দৃষ্টির সংরক্ষণের মাধ্যমে নিজর প্রবৃত্তিরও সংরক্ষণ করা হয়। এতেই বান্দাহর কামিয়াবী।
আল্লাহ বলেন-
"বিশ্বাসীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে হেফাযতে রাখে; এটিই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। ( সূরা নুর, ২৪: ৩০)
নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। ( সূরা বনী ইসরাইল: ৩৬)
"চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত"। ( সূরা গাফির, ৪০:১৯)
রাস্তার হক:
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ওখানে আমাদের বসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আমরা [ওখানে] বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার হক আদায় করো।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি অবনত রাখা, [অপরকে] কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’ (বুখারী: ৫৮৭৫, মুসলিম: ২১২১)
প্রথম দৃষ্টি:
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আচমকা দৃষ্টি সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।’’ (মুসলিম: ২১৫৯)
গুপ্তাঙ্গে দৃষ্টি:
আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তা-ঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য নারীর গুপ্ত-স্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে যেন [উলঙ্গ] শয়ন না করে। [অনুরূপভাবে] কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন [উলঙ্গ] শয়ন না করে। (মুসলিম: ৩৩৮)
বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জনে একত্র হওয়া হারাম:
শরয়ী ভাবে যাদের সাথে পরস্পরে বিয়ে বৈধ (চিরস্থায়ী অবৈধ নয়) এমন নারী ও পুরুষ পরস্পরে নির্জনে মিলিত হওয়া যাবে না যদি না একজন মাহরাম এবং পর্দা থাকে।
যেমন কুরআনে এসেছে-
"তোমরা তাদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাও"। (সূরা আহযাব: ৫৩)
উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা [বেগানা] নারীদের নিকট [একাকী] যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ [এ কথা শুনে] জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?’ তিনি বললেন, ‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম [বিপজ্জনক]।’’ (বুখারী: ৫২৩২, মুসলিম: ২১৭২)
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’ (বুখারী: ৫২৩৩ ও মুসলিম: ১৩৪১)
নারী-পুরুষের পরস্পরের অনুকরণ হারাম:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ ( বুখারী: ৬৪৪৫)
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ (দ্রষ্টব্য: বুখারী: ৫৫৪৬, রিয়াদুস সালেহীন: ১৬৩১)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যে মহিলার পোশাক পরে এবং সেই মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।’ (আবূ দাঊদ: ৪০৯৮)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি [এখন পর্যন্ত] প্রত্যক্ষ করিনি [অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে]: এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা [এমন নগ্ন] পোশাক পরবে যে, [বাস্তবে] উলঙ্গ থাকবে, [পর পুরুষকে] নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও [পর পুরুষের প্রতি] আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’ (মুসলিম: ২১২৮)
শয়তান ও কাফেরদের অনুকরণ করা নিষেধ:
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন বাম হাত দিয়ে অবশ্যই আহার না করে এবং তা দিয়ে অবশ্যই পানও না করে। কেননা, শয়তান বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে।’’ (মুসলিম: ২০২০, তিরমিযী: ১৭৯৯, ১৮০০, আবূ দাউদ: ৩৭৭৬, আহমাদ: ৪৫২৩)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার কিছু অংশ নেড়া করতে ও কিছু অংশে চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারী:৫৯২০ ও মুসলিম: ২১২০)
আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধন:
নকল চুল বা পরচুলা লাগানো, উলকি উৎকীর্ণ করা [চামড়ায় ছুঁচ ফুটিয়ে দিয়ে তাতে রং ঢেলে নক্সা আঁকা বা নাম লেখা] সৌন্দর্যের জন্য দাঁত ঘষে সরু করা বা দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করা, ভ্রু তোলা নিষিদ্ধ।
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার মেয়ে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আর আমি তার বিয়েও দিয়েছি। এখন কি আমি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যার লাগানো হয় উভয় মহিলাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।’’ (বুখারী: ও মুসলিম: ২১২২, দ্রষ্টব্য: রিয়াদুস সালেহীন: ১৬৪২)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরচুলা যে মহিলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে ও যে উলকি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। (বুখারী: ৫৫৯৩, মুসলিম: ২১২৪)
আব্দুললাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে এবং যারা উৎকীর্ণ করায় এবং সে সব নারীদের উপর, যারা ভ্রূ চেঁছে সরু [প্লার্ক] করে, যারা সৌন্দর্যের মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তাঁর [ইবনে মাসঊদের] প্রতিবাদ করলে তিনি বললেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, ‘‘রাসূল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা গ্রহণ করো, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’’ (সূরা হাশর: ৭ , বুখারী ও মুসলিম, দ্রষ্টব্য: রিয়াদুস সালেহীন: ১৬৪৫)
ক্রমশ....
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন