সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-১০
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:০২:৪১ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
রিয়া বা লোক দেখানো কার্যক্রম:
ইবাদত বা যে কোনো সৎকর্ম করতে হবে বিশুদ্ধচিত্তে ও সওয়াবের নিয়তে। লোক দেখানো কর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহনীয় নয়। বর্তমানে আমরা খালেস নিয়তের পরিবর্তে বেশিরভাগ কর্মই করে যাচ্ছি সামাজিকতার চাঁপে বা লোকে কী বলবে বা কপটতায় কিংবায় খ্যাতির তাড়নায়। মনে রাখতে হবে, পরকে দেখানোর জন্য যে কর্ম করা হয়, তা পরকালের জন্য ব্যর্থ।
আল্লাহ বলেন-
'তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ-ভাবে তাঁর ইবাদত করতে'। (সূরা বাইয়িনাহ: ৫)
তিনি আরো বলেন-
'নিশ্চয়ই মুনাফিক [কপট] ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে'। (সূরা নিসা: ১৪২)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ‘‘কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর নিকটে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে ‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] আদেশ করা হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর নিকটে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে [পৃথিবীতে প্রদত্ত] তাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইলম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি-লাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইলম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর [দুনিয়াতে] তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর নিকটে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাবর্গকে] হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম: ১৯০৫)
জুন্দুব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুফয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি শোনাবে, আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি দেখাবে, আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন।’’ (বুখারী: ৬১৩৪, মুসলিম: ২৯৮৭)
পুনশ্চ: যে তার আমলের কথা মানুষের সামনে শুনিয়ে প্রকাশ করবে। ‘আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে [সৃষ্টির সামনে সে কথা জানিয়ে] তাকে লাঞ্ছিত করবেন। ‘যে ব্যক্তি দেখাবে’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষের সামনে স্বকৃত নেক আমল প্রকাশ করবে যাতে সে তাদের নিকট সম্মানার্হ হয়। ‘আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন’ অর্থাৎ সৃষ্টির সম্মুখে তার গুপ্ত উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত [করে অপমানিত] করবেন।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’ (আবু দাউদ: ২৬৬৪, ইবনে মাজাহ: ২৫২)
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি নির্বোধের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য অথবা তার প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জ্ঞানার্জন করে, সে জাহান্নামী। ( ইবনে মাজাহ: ২৫৩, তিরমিযী: ২৬৫৪)
আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল; বলুন, ‘যে মানুষ সৎকাজ করে, আর লোকে তার প্রশংসা করে থাকে [তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?]’ তিনি বললেন, ‘‘এটা মু’মিনের সত্বর সুসংবাদ।’’ (মুসলিম: ২৬৪২)
পুনশ্চ: আমলকারীর মনে সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে; লোক-সমাজে তার সুনাম হলেও তা ‘রিয়া’ বলে গণ্য হবে না। বরং তা হবে তার সওয়াবের একটি অংশ সত্বর প্রতিদান।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরী প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। (ইবনে মাজাহ: ২৫৪)
চলবে....
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
৫৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন