আলেম কম বক্তা বেশি: তামাশা আর হাসা-হাসি
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:২৬:৪৬ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বাংলাদেশে শীতকাল মানে ওয়াজের মওসুম। চারদিকে বিভিন্ন দরগাহ, দরবার, খানকাহ, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তি উদ্যোগে ওয়াজের আয়োজন। দিনে-রাতে বাহারী আয়োজনে চলে ওয়াজ। এসব ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য আবার ভিন্ন রকম। কখনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহ, কখনো খানকাহ বা দরবারের মুরীদ সংগ্রহ, কখনো সওয়াব রেসানী/ঈসালে সওয়াব নামে, কখনো ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠান, কখনো দাওয়াতের জন্য।
মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীনকে পৌছানো, হেদায়েতের কিছু কথা আলোচনা বা দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্যে এই আয়োজন নিঃসন্দেহে উত্তম। কিন্তু আফসোস! বর্তমানে যেভাবে এবং যাদের দ্বারা এই ওয়াজ/তাফসীর মাহফিল করা হয় তাতে এটা এক ধরণের লোক দেখানো বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের নামান্তর।
শিশু বক্তা, অন্ধবক্তা, নও মুসলিম-নওপুরুষ, যুক্তিবাদী, আবাদী/জিহাদী/জালালি/দালালী,অনলবর্ষী-তরুনবক্তা নানা নামের চটকদার ক্যানভাসার বক্তায় পুরো দেশ ভরপুর। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো টাকা কামানো।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ‘ইলম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (আহমাদ: ৮২৫২, আবূ দাঊদ: ৩৬৬৪)
আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-'তোমাদের এ যুগে অনেক বিদ্বান কিন্তু কম বক্তা, এ সময়ে নির্দেশিত বিষয়ের (কর্তব্যকর্মের) এক-দশমাংশ পরিমাণও ত্যাগ করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর এমন এক যুগ আসবে যখন আলেম হবে কম বক্তা হবে বেশি, তখন কোন ব্যক্তি যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশ পরিমাণও পালন করে তাহলে সে মুক্তি লাভ করবে। (দ্রষ্টব্য: সিলসিলাতুল সহীহাহ: ২৫১০)
উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা মানুষের অন্তর থেকে ইলম হঠাৎ করে ছিনিয়ে নেবেন না। তবে তিনি আলিম শ্রেনীকে তুলে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন। যখন কোন আলিম থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খ লোকদের নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে এবং তারা না জেনে ফাতওয়া দিবে। এতে তারা (নিজেরাও) পথভ্রষ্ট হবে এবং (লোকদেরও) পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী: ১০০, মুসলিম: ২৬৭৩)
বক্তাদের মাঝে প্রকৃত আলেমের বৈশিষ্ট্য হলো, মুত্তাকী (আল্লাহর ভয়ে কথা কম বলে ও সত্য বলে) আমলদার ও আমানতদার। তার চেহারা, কথা ও আ'মল/ইবাদতের নমুনা দেখে তাকে চিনতে হবে। আল্লাহ বলেন-
'নিশ্চয়ই তাঁর বান্দাদের আলেমগণই আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিশালি ও ক্ষমাশীল। ( সূরা আল-ফাতির, ৩৫:২৮)
পুনশ্চ:সুতরাং যার মধ্যে আল্লাহ-ভীতি নেই, জেনে রাখুন যে, সে সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত।
উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার বর্ণনা করেন: উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন: ইলমের অধিকারী কারা? তিনি জবাবে বলেন: যারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে। তিনি বললেন: আর কোন্ জিনিস মানুষের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? উত্তরে তিনি বলেন: লোভ-লালসা। (সুনানে দারেমী: ৫৭৫)
হাসান রাহিমাহুল্লাহ বলেন: আমি লোকদেরকে (এমন অবস্থায়) পেয়েছি, কোন ইবাদতগুজার লোক যখন ইবাদত করে, তাকে তার কথা দ্বারা চেনা যায় না; বরং তাকে চেনা যায় তার আমল দ্বারা। আর এটিই হলো উপকারী ইলম। (দারেমী: ৫৪১)
তাই চটকদার বক্তা ও তাদের বক্তব্য থেকে সাবধান থাকুন। আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন সঠিক পদ্ধতিতে সহীহ আমল করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আপনার আক্বীদা ও আমলকে যাচাই করুন সলফে সালেহীনদের ঈমান ও আমল দিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা গ্রহণ বা লেখাপড়া। কুরআন বুঝুন পূর্বতন তাফসীর( যেমন, তাবারী, কুরতবী বা ইবনে কাসীর) ও হাদীসকে বুঝুন পূর্বতন বিদ্বানদের দ্বারা। সাবধান! মাযহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। সকল মাযহাবই সঠিক, সুতরাং সহীহ হাদীসের নামে সাধারণ মুসুল্লীদের বিভক্তি না করে বরং সমাজে প্রচলিত ও প্রসারিত শিরক- বিদআ'ত দুর করার উদ্যোগ নিন।
নামে যাই হোক এই মাহফিলগুলোর মাধ্যমে ইসলামে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি। নিচে সংক্ষেপে মাহফিলের ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
১. হাস্য-রস ও বিনোদন:
সালাফদের দ্বীনি মাহফিল কখনো হাস্য রসাত্মক ছিলো না। বর্তমানে তারাই জনপ্রিয় বক্তা যারা শ্রোতাদেরদেরকে নানা অঙ্গ-ভঙ্গি করে, বিভিন্ন উদ্ভট কথা, মিথ্যা গল্প- কাহিনি, কৌতুক বলে হাসাতে পারে। এসব বক্তাদের অনেকেই ভাঁড়ের চেয়েও কুরূচিপূর্ণ। অশ্লীল কথা-বার্তা আর নানা রঙ-ঢঙের সাথে এরা পরিচিত। এদের থেকে জাতি কী হেদায়েত পাবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এমন ভাষণে বললেন, "যা আমি জানি তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।’’ (বুখারী, মুসলিম)
২. মূর্খ বক্তা:
বিনোদনমুলক এই মাহফিলগুলোর বক্তারাও হয় বিশেষ কিসিমের। নও মুসলিম, নও পুরুষ (আল্লাহই ভালো জানেন), শিশুবক্তা, অন্ধবক্তা, জিহাদী/যুক্তিবাদী/আবাদী/দরবারী/হেলিকপ্টারি,মক্কী-মাদানী ইত্যাদি। বেশির ভাগ বক্তা ভালো করে আরবী কিংবা বিদেশী কোনো ভাষা না বলতে পারলেও হয়ে যান আন্তর্জাতিক বক্তা। এই ধরণের মাহফিলও চরম বিনোদনে ভরপুর। তারা নানা কিসসা কাহিনি কখনো হাসিয়ে কখনো কাঁদিয়ে বয়ান করে জনগণকে বিনোদন দিয়ে ভর পকেটে খুশি হয়ে চলে যান।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের আলামত সমূহের অন্যতম হল ইলম উঠে যাওয়া, মুর্খতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া, মদ্যপান ও ব্যাভিচারের প্রসার ঘটা। ( বুখারী: ৮০, মুসলিম: ২৬৭১)
৩. বানোয়াট তাফসীর:
চরম আশ্চর্যের বিষয় হলো, এদের আল্লাহর প্রতি ভয় শূন্যের কোঠায়। তাই কখনো কুরআন নিয়ে কখনো হাদীস নিয়ে কখনো কিসসার নামে চরম মিথ্যাচার চালিয়ে যায়। কেউ কুরআনের আয়াত বানায়, কেউ হাদীস বানায়, কেউ মনগড়া তাফসীর করে, কেউ মনগড়া হাদীসের ব্যাখ্যা করে, কেউ ঈমান ও আমলের ব্যাপারে শরীয়াতের অপব্যাখ্যা করে।
নবীর নামে মিথ্যা বলার পরিণতি
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আমার নিকট থেকে একটি শিক্ষা (আয়াত) হলেও তা তা প্রচার করবে। বানূ ইসরাঈলের থেকে কথা বর্ণনা করতে পার, এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি আমার উপর স্বেচ্ছায় মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার আবাস-ঠিকানা জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী: ৩২৭৪, দারেমী:৫৪২, তিরমিযী: ২৬৬৯)
যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলতে পারো, ইসলাম ধ্বংস করবে কোন্ জিনিসে? আমি বললাম, আমি বলতে পারি না। তখন তিনি [‘উমার (রাঃ)] বললেন, ‘আলিমদের পদস্খলন, আর আল্লাহর কিতাব কুরআন নিয়ে মুনাফিক্বদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে। (সুনানে দারিমী: ২১৪, মিশকাত:২৬৯)
৪. পরচর্যা আর ফতোয়া:
বেশিরভাগ মাহফিল এখন প্রতিপক্ষ জামাত/সংগঠন বা বক্তাদের দোষ ধরে হেয় প্রতিপন্ন করতে তৎপর। তাই বেশিরভাগ সময় ধরে চলে পরচর্যা-পরনিন্দা (গীবত, তোহমত, ছিদ্রাণ্বেষণ, চুগলী) আর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ফতোয়া। তাই যে কথাটি বেশি শুনা যায় তা-হলো, "অমুক ইহুদী-খ্রীষ্টান-ভারতের দালাল বা কাফের"।
আমির আশ-শা’বী রাহি. বলেন: ইলমের সৌন্দর্যই হলো ইলমের ধারকের সহিষ্ণুতা/সহনশীলতা। ( সুনানে দারেমী: ৫৭৭)
৫. বিভেদ আর দলাদলি:
আমরা সবাই নিজেদের 'আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে'র অনুসারী দাবী করি, যেহেতু হাদীসের মাধ্যমে নাজাতপ্রাপ্ত দলের পরিচয় ও গুণাবলী সাব্যস্ত করে পূর্ববতী বিদ্বানরা মুসলমানদের সহীহ আকীদা ও আমলের অনুসারীদের এই নাম দিয়েছেন। অথচ প্রত্যেকে নিজেদের আকঁড়ে ধরা মত, দল, মাযহাব, তরীকাকে একমাত্র সহীহ দাবী করে বিরোধী মতের লোকদের কখনো- সালাফি, সুন্নী, ওয়াহাবী, কওমী/খারেজী, নজদী, লা-মাযাহাবী, লাহাবী বলছি আর পরস্পরে দ্বন্দ্ব-বিভেদ বাড়িয়ে চলছি।
এই সব মাহফিলে কুরআন ও সহীহ হাদীসের সঠিক শিক্ষা বাদ দিয়ে কিভাবে কুরআন ও হাদীস দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায় তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
৬. ইবাদতের বিঘ্নতা ও মানুষের দুর্ভোগ:
মাহফিলের উদ্দেশ্য হলো- দাওয়াত, ইলম শিক্ষা ও নসীহত। যাতে মানুষ ইবাদতমুখী হয়। অথচ এই মাহফিলের কারণে অনেক মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। এর কারণ হলো মাহফিলের কার্যক্রম/শব্দ সমাবেশস্থল ছাড়াও আশেপাশের অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। যারা এই মাহফিলের মুখাপেক্ষী নয় তারাও এর আক্রমণের শিকার। কখনো চিন্তাও করে দেখেনি, আশেপাশে আছে বয়স্ক, অসুস্থ্য, নানা প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী ও নিভৃতে আল্লাহর ইবাদতকারী। এর ফলে মাহফিল সঠিক ও সহীহ হলেও আয়োজক ও বক্তা উভয় পক্ষই গোনাহগর হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, মাহফিলের শব্দ যেন বিস্তৃত না হয়।
ইকরিমাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ হে ‘ইকরিমাহ্! প্রত্যেক জুমু‘আয় (সপ্তাহে) মাত্র একদিন মানুষকে ওয়ায-নাসীহাত শুনাবে। যদি একবার ওয়ায-নাসীহাত করা যথেষ্ট নয় মনে কর তাহলে সপ্তাহে দু’বার। এর চেয়েও যদি বেশী করতে চাও তাহলে সপ্তাহে তিনবার ওয়ায-নাসীহাত কর। তোমরা এ কুরআনকে মানুষের নিকট বিরক্তিকর করে তুলো না। কোন জাতি যখন তাদের কোন ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় ব্যাস্ত থাকে তখন তোমরা সেখানে পৌঁছলে তাদের আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের কাছে ওয়ায-নাসীহাত করতে যেন আমি কখনো তোমাদেরকে না দেখি। এ সময় তোমরা চুপ করে থাকবে। তবে তারা যদি তোমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার জন্য বলে তখন তাদের আগ্রহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে হাদীস শুনাও। কবিতার ছন্দে দু‘আ করা পরিত্যাগ করবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে দেখেছি, তারা এরূপ করতেন না। (বুখারী, মিশকাত: ২৫২
৭. অপচয় ও লোক-দেখানো:
আজকালকের বেশিরভাগ মাহফিলই লোকদেখানো ও অপচয়ের নমুনা। তাই মাহফিলের নামে তোরণ, গেইট, নানা ব্যানার, ফেস্টুন ও বাহারী মঞ্চ সজ্জায়নের মাধ্যমে প্রচুর অর্থের অপব্যবহার করা হয়। বক্তারাও আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে। মাহফিল যদি হয় মানুষের হেদায়েতের জন্য, তাহলে- বক্তা হবেন একজন অথবা দুই জন। আর তাতে থাকবে না সভাপতি, অতিথি/মেহমানের নামে মঞ্চ শোভায়িত দর্শক-শোষিত অর্থ যোগানদাতাদের উপস্থিতি।
আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বানী ইসরাঈল:২৭)
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে ‘আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (তিরমিযী: ২৬৫৪, সহীহুল জামি‘ ১০৬)
ইবরাহীম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: তাদের গোড়ালী পদদলিত করা হোক (লোকেরা দলে দলে তাদের অনুসরণ করুক) - এটাকে তারা অপছন্দ করতেন। (সুনানে দারেমী: ৫২৪)
আলকামাহ বলেন, যখন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুবরণ করলেন, তখন তাকে বলা হলো: আপনি যদি (লোকদের নিকট) বসতেন, তবে লোকদেরকে সুন্নাত (হাদীস) শিক্ষা দিতে পারতেন? তথন তিনি বললেন: তোমরা কি চাও যে, আমার গোড়ালী পদদলিত করা হোক (আমার পিছনে সবসময় লোকদের ভীড় লেগেই থাকুক)? (দারেমী: ৫২২)
ইবনু সীরীন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ (সানাদের) ‘ইলম হচ্ছে দীন। অতএব তোমরা লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের দীন কার নিকট হতে গ্রহণ করছো। (মুসলিম, মিশকাত: ২৭৩))
পরিশেষ:
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি (কাউকে) হেদায়েতের দিকে আহবান করে, তবে যে তার অনুসরণ করেছে, তার সমান সাওয়াব সেও পাবে। কিন্তু তাতে অনুসরণকারীর সাওয়াবের কোনো কমতি হবে না। আর যদি কেউ পথভ্রষ্টতার দিকে কাউকে আহবান করে তবে, যে তার অনুসরণ করেছে, তার সমান পাপ ঐ ব্যক্তির উপরও বর্তাবে। কিন্তু এতে অনুসরণকারীর নিজের পাপের কোনো কমতি হবে না। (মুসলিম: ২৬৭৪, আবু দাউদ:৪৬০৯, দারেমী: ৫১৩)
সহীহ বক্তার বৈশিষ্ট্য:
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোক সকল! যে যা জানে সে তা-ই যেন বলে। আর যে জানে না সে যেন বলে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। কারণ যে ব্যাপারে তোমার কিছু জানা নেই সে ব্যাপারে ‘‘আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত আছেন’’ এ কথা ঘোষণাই তোমার জ্ঞান। (কুরআনে) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীকে বলেছেনঃ ‘‘আপনি বলুন, আমি (দীন প্রচারের বিনিময়ে) তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না। আর যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই’’- (সূরাহ্ সোয়াদ ৮৮: ৮৬)। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত:২৭২))
ওয়াজ মাহফিল হোক মানুষের মাঝে হেদায়েতের পথে আহবান, মুসলমানদের জন্য নসিহত ও সংশোধনমুলক শিক্ষার। তাই-
মাহফিল হতে হবে অনাড়ম্বর, সংক্ষিপ্ত। বক্তারা (সহীহ ও সঠিক কথা বলতে) হাতে কাগজ নিয়ে প্রতিটি কথার রেফারেন্স দিয়ে এবং পূর্বতন বিদ্বানদের অভিমত সহ কথা বলবেন। ফিকহী মাসআলার ক্ষেত্রে যথা সম্ভব বিতর্ক এড়িযে চলবেন। যে সমাজে যেটা প্রচলিত, আমল সহীহ হলে সেই মতের বাইরে বক্তব্য দিবেন না। বরং শিরক ও বিদ'আত থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। দ্বীনের সঠিক বুঝ দান ও সহীহ আম'ল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!!
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
১৩৭১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন