সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৭
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:২৫:৫৪ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কাউকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ
আল্লাহ বলেন-
'যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে'। (সূরা আহযাব: ৫৮)
তিনি আরো বলেন-
"মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।" (সূরা ফাতহ: ২৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার মুখ ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মসমূহ ত্যাগ করে।’’ (বুখারী:১০ ও মুসলিম:৪০)
গালি-গালাজ ও অভিশম্পাত করা নিষেধ:
মুসলমান পরস্পরে এবং কাউকে অভিশাপ ও গালি দিয়ে কষ্ট দিতে পারে না। ইসলামে নির্দিষ্ট কাউকে গালি-গালাজ ও অভিশাপ দেয়া হারাম।
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’’ (বুখারী, মুসলিম: ৬৪)
আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি এ কথা বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন কোন মানুষ অন্য মানুষের প্রতি ‘ফাসেক’ অথবা ‘কাফের’ বলে অপবাদ দেয়, তখনই তা তার উপরেই বর্তায়; যদি তার প্রতিপক্ষ তা না হয়।’’ (বুখারী: ৫৬৯৮)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মহা-সত্যবাদীর জন্য অভিসম্পাত-কারী হওয়া সঙ্গত নয়।’’ (মুসলিম: ২৫৯৭)
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অভিসম্পাত-কারীরা কিয়ামতের দিনে না সুপারিশ-কারী হবে, আর না সাক্ষ্য-দাতা।’’ (মুসলিম: ২৫৯৮, আবূ দাউদ: ৪৯০৭, সুনানুল কুবরা: ২০১৮৪, আল মুসতাদরাক: ১৫৫)
অর্থ্যাৎ অভিশাপাকারীরা কিয়ামতের দিন কাউকে সুপারিশ করা ও সাক্ষ্য-দাতা হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হবে।
সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অন্যের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তাঁর গযব এবং জাহান্নামের আগুন দ্বারা অভিসম্পাত করো না।’’ (আবূ দাঊদ: ৪৯০৬, তিরমিযী:১৯৭৬)
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুমীন খোঁটা দানকারী, অভিশাপ-কারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল-ভাষী হয় না।’’ (তিরমিযী: ১৯৭৭)
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয় তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপ আকাশে উঠার পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যার্বতনের জন্য রওয়ানা হয়, কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেয়ায় সে ডানে বামে যাওযার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার নিকট ফিরে আসে। তখন সেই বস্তু যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার উপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর উপরই তা পতিত হয়। (আবু দাউদ: ৪৯০৫)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বাতাসকে অভিশাপ দিলো। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক ব্যক্তির চাদর বাতাসে ওলটপালট হয়ে গেলে সে বাতাসকে অভিশাপ দিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি বাতাসকে লানত করো না, কেননা সে নির্দেশপ্রাপ্ত। যা অভিশাপযোগ্য নয় কেউ তাকে অভিশাপ দিলে তা অভিশাপকারীর উপরই পতিত হয়। ( আবু দাউদ: ৪৯০৮)
এর দ্বারা বুঝা গেলো, মানুষ ছাড়াও যে কাউকেই অভিশাপ করা বৈধ নয়, তা প্রাণী হোক বা অন্যকিছু হোক।
জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজি করা হারাম
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের উপর অস্ত্র তোলে। আর যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয়, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (মুসলিম: ১০১)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [বাজারে] এক খাদ্যরাশির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাতে নিজ হাত ঢুকালেন। তিনি আঙ্গুলে অনুভব করলেন যে, ভিতরের শস্য ভিজে আছে। বললেন, ‘‘ওহে ব্যাপারী! এ কি ব্যাপার?’’ ব্যাপারী বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ওতে বৃষ্টি পড়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘ভিজেগুলোকে শস্যের উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকে দেখতে পেত? [জেনে রেখো!] যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (দ্রষ্টব্য: মুসলিম, তিরমিযী, রিয়াদুস সালেহীন: ১৫৭৯)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘[ক্রয় করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতার জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করে] দালালি করো না।’’ (বুখারী ও মুসলিম, রিযাদুস সালেহীন: ১৫৮০)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ [আবূ দাঊদ: ৫১৭০]
ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক লোক অভিযোগ করলো যে, সে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় প্রতারিত হয়। তিনি তাকে বললেনঃ যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন বলবে, ‘ধোঁকাবাজি করা চলবে না।’ অতঃপর লোকটি যখন ক্রয়-বিক্রয় করলো তখন বলতো, ‘যেন ধোঁকাবাজি না করা হয়।’ ( আবু দাউদ: ৩৫০০)
চলবে....
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
পূর্বতন আলোচনা:
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85200#386379
বিষয়: সাহিত্য
৫০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন