সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৬
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ০২:৩১:৫৯ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা নিষেধ:
কোনো রকম প্রমাণ ছাড়া এবং সন্দেহ বশতঃ কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা ইসলামে বৈধ নয়। মুসলমানদের পরস্পরের প্রতি কু-ধারণা তাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি করে শত্রুতায় বাড়ায়। আর এতে মুসলিম সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলে। নিজে ভালো থাকতে এবং অপরকে ভালো রাখতে নিরর্থক ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন-
'হে ঈমানদারগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ।' (সূরা হুজুরাত: ১২)
আবু হুরাইরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ তোমরা অনুমান করা হইতে বাঁচিয়া থাক। নিশ্চয়ই অনুমান বড় মিথ্যা। কাহারও ছিদ্রান্বেষণ করিও না, কাহারও সম্বন্ধে অনুমানভিত্তিক কথা বলিও না। দুনিয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করিও না। একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করিও না এবং অন্যের প্রতি পিঠ ফিরাইয়া থাকিও না। আল্লাহর বান্দা সকলে ভাই ভাই হইয়া যাও। (সহীহ বুখারী: ৫৭১৭, সহীহ মুসলিম: ২৫৬৩, মুওয়াত্তা: ১৬৮৪)
মুসলিমদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হারাম
আল্লাহ বলেন-
'হে ঈমানদারগণ! একদল পুরুষ যেন অপর একদল পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয় তারা উপহাসকারী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং একদল নারী যেন অপর একদল নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয় তারা উপহাস-কারিণী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা [এ ধরনের আচরণ হতে] নিবৃত্ত না হয়, তারাই সীমালংঘনকারী।' (সূরা হুজুরাত: ১১)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছভাবে।’’ দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। (দ্রষ্টব্য: মুসলিম: ২৫৬৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে জাহান্নামে যাবে না। তখন একজন বলল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, [তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?]’ তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হচ্ছে- "সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’ (সহীহ মুসলিম: ৯১, তিরমিযী: ১৯৯৯)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন- “যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না" শীর্ষক হাদীসের ব্যাখ্যায় একদল মুহাদ্দিস বলেন, সে জাহান্নামে স্থায়ী হবে না (আযাবের পর মুক্তি পাবে)।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ “যার অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমানও আছে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে”। (দ্রষ্টব্য: তিরমিযী: ১৯৯৯)
জুন্দুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একজন বলল, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না।’ আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বললেন, ‘কে সে আমার উপর কসম খায় এ মর্মে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না। আমি তাকেই ক্ষমা করলাম এবং তোর [শপথকারীর] কৃতকর্ম নষ্ট করে দিলাম!’’ (মুসলিম: ২৬২১)
মুসলমানদের সাথে শত্রুতা ও সম্পর্ক ত্যাগ করা হারাম
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করিও না এবং একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরাইয়া থাকিও না, বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হইয়া থাক; কোন মুসলমানের জন্য তাহার কোন মুসলমান ভাইকে তিন রাত্রির অধিক ত্যাগ করা বৈধ নহে। (বুখারী: ৫৭২৬, মুসলিম: ২৫৫৯, মুওয়াত্তা: ১৬৮৩)
আবু হুরাইরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলিলেনঃ সপ্তাহে দুইবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও সোমবার বান্দাদের আমল লেখা হইয়া থাকে। তখন প্রত্যেক মু'মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হইয়া থাকে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে স্বীয় ভ্রাতার সহিত শক্রতা পোষণ করে। বলা হয়, এই উভয়কে তাহাদের আপস না হওয়া পর্যন্ত ত্যাগ করো (ক্ষমা করিও না)। (মুসলিম: ২৫৬৫, মুওয়াত্তা: ১৬৮৬)
আতা ইবন আবদুল্লাহ খুরাসানী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ তোমরা পরস্পর মুসাফাহা (কর মর্দন) কর, তাহা হইলে তোমাদের মধ্যকার শক্রতা দূর হইয়া যাইবে। পরস্পর হাদিয়া তোহফা আদান-প্রদান কর, তাহা হইলে পরস্পর ভালবাসা সৃষ্টি হইবে এবং শক্রতা দূর হইয়া যাইবে। (মুওয়াত্তা: ১৬৮৫)
চলবে............................
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল
আলোচনার পূর্বতন ক্রমিক নম্বরের লিঙ্ক:
সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-১
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85164
সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-২
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85168#.XEogWPlKjIU
সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৩
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85172#.XEoggflKjIU
সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৪
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85175#.XEogj_lKjIU
সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৫
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85192#.XEogn_lKjIU
বিষয়: সাহিত্য
৫১২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রিয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন