সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-২

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ০১:১৭:২২ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

মানুষের সীমাহীন আকাঙ্খা:

মানুষের মনে সীমাহীন আকাঙ্খা (কামনা-বাসনা) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেহেতু দুনিয়াটা তাদের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। এখন দেখার বিষয়- কে তার প্রবৃত্তিকে লাগাম লাগিয়ে চাহিদাকে সীমিত রাখে এবং নিজেকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। জীবনে সুখী হতে হলে চাহিদাকে সীমিত করতে হবে।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন আদম-সন্তানের অধীনে যদি দুই উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ থাকে তবুও সে তৃতীয় একটি স্বর্ণভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। যে লোক তাওবাহ করে আল্লাহ তা'আলা তার তাওবাহ কুবুল করেন। (বুখারী: ৬০৭৫, মুসলিম: ১০৪৮)



আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়; কিন্তু দুটি ব্যাপারে যুবকই থাকে, বেঁচে থাকার লোভ এবং সম্পদের মোহ।" (তিরমিযী: ২৩৩৯)



অল্পতে তুষ্ট আর প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন:

পার্থিব জীবন সুখী সাফল্যময় আর বর্ণাঢ্য করতে আমাদের অল্পতে তুষ্ট আর প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করে দুনিয়াতে সাদামাটা জীবন-যাপন করতে হবে।

ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ সেই ব্যক্তি কতই না সৌভাগ্যবান যাকে ইসলামের পথে হিদায়াত দান করা হয়েছে এবং তার জীবিকা নুন্যতম প্রয়োজন মাফিক এবং সে তাতেই খুশি। (তিরমিযী: ২৩৪৯)



উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’ (তিরমিযী: ২৩৪৬)



আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ইসলাম কুবুল করেছে, এবং তার নিকট নূন্যতম রিযিক রয়েছে এবং তাকে আল্লাহ তা'আলা অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক দিয়েছেন, সে-ই সফলকাম হলো। (মুসলিম: ১০৫৪,তিরমিযী: ২৩৪৮, ইবনে মাজাহ:৪১৩৮)



ফাদ্বালাহ ইবনে ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’ (তিরমিযী: ২৩৬৮)



মিতাচারিতা ও মিতব্যয়িতার মাহাত্ম্য:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ: ৬)



মনের প্রশস্থতাই প্রকৃত ধনী:

আবূ-হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনাঢ্যতা নয়, প্রকৃত ধনাঢ্যতা হলো অন্তরের ধনাঢ্যতা।’’ (বুখারী: ৬৪৪৬, মুসলিম: ১০৫১)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’(তিরমিযী: ২৩২৬, আবূ দাউদ: ১৬৪৫)



পানাহারে মিতব্যায়ী:

আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘কোন মানুষ এমন কোনো পাত্র পূর্ণ করে নি, যা পেটের চেয়ে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’ (তিরমিযী: ২৩৮০)

অনাড়ম্বর জীবন-যাপন:



আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা। (আবু দাউদ:৪১৬১, ইবনে মাজাহ: ৪১১৮)



দ্রষ্টব্য: সাদাসিধা বেশভূষা ব্যবহার করা এবং জাঁকজমক তথা আড়ম্বরপূর্ণ লেবাস বর্জন করা। ঈমানের অঙ্গ তথা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।



মুমিন জীবনের সফলতা:

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কে আছে যে আমার নিকট হতে এ কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং সে মুতাবিক নিজেও আমল করবে অথবা এমন কাউকে শিক্ষা দিবে যে অনুরূপ আমল করবে? আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমি আছি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং গুনে গুনে এ পাঁচটি কথা বললেনঃ

তুমি হারাম সমুহ হতে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ বলে গণ্য হবে; তোমার ভাগ্যে আল্লাহ তা'আলা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে; প্রতিবেশীর সাথে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে; যা নিজের জন্য পছন্দ কর তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে এবং অধিক হাসা থেকে বিরত থাক। কেননা অতিরিক্ত হাস্য-কৌতুক হৃদয়কে মৃতবৎ করে দেয়। (তিরমিযী: ২৩০৫, সহীহাহ: ৯৩০)



'নিচের হাত হতে উপরের হাত উত্তম': দানের মহাত্ম্য:

হাত পাতার চেয়ে দানের হাত উত্তম। সুতরাং উপার্জন থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ সৎকাজে খরচ করা উত্তম। পোষ্যদের জন্য প্রয়োজনীয় মালের অতিরিক্ত জমা রাখা মঙ্গলজনক নয়, কেননা এই দুনিয়াটা আমাদের আসল ঠিকানা নয়, পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করাই পার্থিব জীবনের উদ্দেশ্য। দান-সদাকাতে সবচেয়ে বেশি নেকী পাওয়া যায়।

আল্লাহ বলেন-

“তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, তা নিজেদের উপকারের জন্যই। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তোমরা দান করো না। আর তোমরা যা দান কর, তার পুরস্কার পূর্ণভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।” (সূরা বাক্বারাহ: ২৭২)

তিনি আরো বলেন-

“তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা’: ৩৯)



আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’ (বুখারী: ১৩৫১, মুসলিম: ১০১৬)



‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইসলামের কোন্ কাজটি উত্তম?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘‘তুমি অন্নদান করবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম:৩৯)



হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী, মুসলিম: ১০৩৪)



আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ অতঃপর সেই মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষণ করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটি সেই পানির অনুসরণ করে কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক।’ এটি ছিল সেই নাম, যে নাম মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল।



বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, ‘আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ শুনলাম। তুমি কি এমন কাজ কর?’ বাগান-ওয়ালা বলল, ‘এ কথা যখন বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি। অতঃপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজন সহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।’’ (মুসলিম: ২৯৮৪, আহমাদ: ৭৮৮১)



আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। নিচের হাত হতে উপরের হাত উত্তম।’’ (সহীহ মুসলিম: ১০৩৬, তিরমিযী: ২৩৪৩)



ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী:১৩৪৩ ও মুসলিম: ৮১৬)



হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।) হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’

তারপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। (বুখারী: ১৪২৮, ১৪৭২, ৬৪৪১, মুসলিম:১০৩৪, ১০৩৫)

(বি.দ্র.: ‘ফাই’ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তুরমত যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে ‘মালে গনীমত’ বলা হয়।)

দানে মাল কমে না:

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সাদকাহ করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা (ক্ষমাকারীর) সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য বিনয়ী হলে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল তাকে উচ্চ করেন।’’ (মুসলিম: ২৫৮৮, তিরমিযী: ২০২৯)

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘কৃপণ ও দানশীলের দৃষ্টান্ত এমন দুই ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের বুক থেকে টুঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং দানশীল যখন দান করে, তখনই সেই বর্ম তার সারা দেহে বিস্তৃত হয়ে যায়, এমনকি (তার ফলে) তা তার আঙ্গুলগুলোকেও ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন (পাপ বা ত্রুটি) মুছে দেয়। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু দান করার ইচ্ছা করে, তখনই বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চাইলেও তা প্রশস্ত হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম: ১০২১)



কৃপণতা বর্জনীয়:

আল্লাহ বলেন-

“পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। আর সদ্বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করে, অচিরেই তার জন্য আমি সুগম করে দেব (জাহান্নামের) কঠোর পরিণামের পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না।” (সূরা লাইল: ৮-১১)

তিনি আরো বলেন-

“যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম।” (সূরা তাগাবূন: ১৬)



আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী: ১৩৭৪, সুনানুল কুবরা: ৭৬২২)

জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহকে হালাল করে নিয়েছিল।’’ (মুসলিম: ২৫৭৮, আহমাদ: ১৪০৫২)

জুবাইর ইবনে মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তিনি হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আসছিলেন। (পথিমধ্যে) কতিপয় বেদুঈন তাঁর নিকট অনুনয়-বিনয় করে চাইতে আরম্ভ করল, এমন কি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে বাধ্য করে একটি বাবলা গাছের কাছে নিয়ে গেল। যার ফলে তাঁর চাদর (গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে আমার চাদরখানি দাও। যদি আমার নিকট এসব (অসংখ্য) কাঁটা গাছের সমান উঁট থাকত, তাহলে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যুক বা কাপুরুষ পেতে না।’’ (বুখারী)

সম্পদ জমা করার জন্য ভিক্ষা করা হারাম:

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে,) তার চেহারায় কোন গোশত টুকরা থাকবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম:১০৪০)

আবূ বিশর ক্বাবীসাহ ইবনে মুখারেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একবার এক অর্থদন্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সাদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে ক্বাবীসাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়;

(১) যে ব্যক্তি অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার যামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে।

(২) যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না এসেছে।

(৩) যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে ক্বাবীসাহ অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।’’ (মুসলিম:১০৪৪)

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা) অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’ (মুসলিম: ১০৪১)

সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায় হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’ (তিরমিযী: ৬৮১, নাসায়ী: ২৫৯৯)

স্বহস্তে উপার্জিত খাবার খাওয়া:

আল্লাহ বলেন-

“অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর।” (সূরা জুমুআহ: ১০)



আবূ আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে পাহাড় যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম; তারা তাকে দিক বা না দিক।’’ (বুখারী: ১৪৭১ ও মুসলিম)

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লার নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’ (বুখারী:২০৭২)

সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময় দুইটি মূল্যবান ঐশ্বর্য:



ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোকায় নিপতিতঃ সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়। (বুখারী: ৬০৪৯)

জ্ঞান অর্জনের মাহাত্ম্য ও দানশীলতা:

ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা জ্ঞান ছাড়া মানুষ সঠিক আমল করতে পারে না। প্রথমত কোনটি সঠিক পথ আর সঠিক পথে কিভাবে চলতে হবে তা জানার নামই জ্ঞান।

আবূ কাবশাহ ‘আমর ইবনে সা‘দ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি তিনটি জিনিসের ব্যাপারে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখোঃ

(১) কোন বান্দার মাল সাদকাহ করলে কমে যায় না।

(২) কোন বান্দার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হলে এবং সে তার উপর ধৈর্য-ধারণ করলে আল্লাহ নিশ্চয় তার সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর

(৩) কোন বান্দা যাচ্ঞার দুয়ার উদ্ঘাটন করলে আল্লাহ তার জন্য দরিদ্রতার দরজা উদ্ঘাটন করে দেন।’’ অথবা এই রকম অন্য শব্দ তিনি ব্যবহার করলেন।

‘‘আর তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখো।’’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ায় চার প্রকার লোক আছে;

(১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে। আর তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তা সে জানে। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে।

(২) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু মাল দান করেননি। সে নিয়তে সত্যনিষ্ঠ, সে বলে যদি আমার মাল থাকত, তাহলে আমি (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের প্রতিদান সমান।

(৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল দান করেছেন; কিন্তু (ইসলামী) জ্ঞান দান করেননি। সুতরাং সে না জেনে অবৈধরূপে নির্বিচারে মাল খরচ করে; সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে না এবং তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তাও সে জানে না। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। আর

(৪) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান কিছুই দান করেননি। কিন্তু সে বলে, যদি আমার নিকট মাল থাকত, তাহলে আমিও (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের পাপ সমান।’’(তিরমিযী: ২৩২৫, ইবনু মাজাহ: ৪২২৮)



মৃত্যুর কথা স্মরণ:

প্রাণী মাত্রই মরবে। জন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মৃত্যু কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেই। মৃত্যুর পর জীবনের পূর্ণ হিসাব পেশ করতে হবে। হিসাব শেষে জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে ও সেখানেই চিরকাল শান্তিতে বাস করবে অথবা শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ বলেন-

‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১৮৫) তিনি আরো বলেন-

‘যেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর’ ( সূরা ৪ নিসা:৭৮)



‘তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগত। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (সূরা ৬৮ জুম‘আ:৮)



সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিব্রীল এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন করুন। কিন্তু মনে রাখবেন আপনি মৃত্যুবরণ করবেন। যার সাথে খুশী বন্ধুত্ব করুন। কিন্তু মনে রাখুন আপনাকে তাকে ছেড়ে যাবেন। যা খুশী আমল করুন। কিন্তু মনে রাখবেন আপনি তার ফলাফল পাবেন। জেনে রাখুন, মুমিনের মর্যাদা হ’ল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হ’ল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে’। (হাকেম: ৭৯২১; সিলসিলা ছহীহাহ:৮৩১)

আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (সূরা যুমার: ৩৯/৩০)। আল্লাহ জিব্রীলকে পাঠিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতএব মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দু’টিই মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা দুনিয়ায় লিপ্ত মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়। এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারীর অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ করো। (তিরমিযী: ২৩০৭)

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন মুমিন উত্তম? তিনি বললেন, যে সর্বোত্তম চরিত্রবান। লোকটি বলল, কে সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন: ‘মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণকারী এবং তার পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বাঙ্গীন সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণকারী। তারাই হ’ল প্রকৃত জ্ঞানী’। (ইবনু মাজাহ: ৪২৫৯; ছহীহাহ:১৩৮৪)

কবর হলো পরকালের প্রথম মনজিল:

কবর হ’ল নিঃসঙ্গতার এক জগত। সমাজ ও সংসারের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানে একাকী জীবন কাটাতে হবে। বাইরের কেউ সেখানকার অবস্থা জানাবে না বা তিনিও বাইরের কাউকে তার অবস্থা জানাতে পারবেন না। বাড়ি-গাড়ি, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরো কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবে। বিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবে। জীবনের সকল আশা ও আকাংখা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি আল্লাহকে চিনেন, তিনি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করেন। কেননা মৃত্যু হ’ল প্রধান ফটক।

উসমান (রাঃ)-এর মুক্তদাস হানী বলেন, উসমান (রাঃ) কোনো কবরের পাশে দাড়িয়ে এতো কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হলো, জান্নাত জাহান্নামের আলোচনা করা হলে তো আপনি আপনি কাঁদেন না, অথচ এই কবর দর্শনে এত বেশি কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আখিরাতের মানযিলসমূহের (প্রাসাদ) মধ্যে কবর হলো প্রথম মানযিল। এখান হতে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর সে এখান হতে মুক্তি না পেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। তিনি (উসমান) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি। (তিরমিযী: ২৩০৮)

নেক আমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণ। অতএব সর্বদা নেক আমলের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করা উচিত। কেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারে। আর সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায়। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন:

'শেষ আমলের উপরেই পরিণাম নির্ধারিত হয়’। (সহীহ বুখারী: ৬৬০৭)



অতএব শেষ আমল যদি সুন্দর হয়, তবে সেটি হবে দুনিয়া থেকে সুন্দর বিদায়।



মৃত্যুর চিন্তা আল্লাহর ভয় আনয়ন করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে:



আল্লাহর রাসূল সা. বলেন: "আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যিয়ারত কর’। ( সহীহ মুসলিম: ৯৭৭) ‘কেননা এটি তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে’। (সহীহ মুসলিম: ৯৭৬)

নেককার ও বদকার প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং প্রত্যেকেই কাফন পরে কবরে যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কেউ আগুনের খোরাক হবে এবং কেউ জান্নাতের সুবাতাস পেয়ে ধন্য হবে। কেউ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ভয়ংকর ফেরেশতার প্রচন্ড হাতুড়ি পেটা খাবে, কেউ জান্নাতের সুগন্ধিতে নববিবাহিতের ন্যায় সুখনিন্দ্রায় ঘুমিয়ে যাবে। কারু কবর সংকীর্ণ হবে ও দুই পার্শ্ব চেপে ধরে তাকে পিষ্ট করবে। কারু কবর প্রশস্ত ও আলোকিত হবে।

মৃত্যুকে স্মরণ, মৃত্যু কামনা নয়:

পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা এ পৃথিবীকে মুমিন তার জন্য পরীক্ষাস্থল মনে করে। আল্লাহ তাকে পরীক্ষার জন্য যতদিন চাইবেন, ততদিন সে এখানে থাকবে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সাথে, সর্বোচ্চ নেকী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে। মাঝে-মধ্যে আল্লাহ তার বান্দাকে কঠিন বিপদে ফেলেন, তাকে সাবধান করার জন্য। বেশি বেশি আল্লাহর দিকে ঝুঁকে নেকী অর্জনের জন্য, মৃত্যুকে স্মরণ করার জন্য কিন্তু মৃত্যু কামনা করা যাবে না।

মুক্তির উপায়: রসনাকে সংযত রাখা



সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুই ঠোটের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থানের) যামিন হতে পারে (অপব্যবহার হতে সংযত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো। (বুখারী:৬১০৯, তিরমিযী: ২৪০৮) অপর বর্ণনায় এসেছে-

"আল্লাহ তা'আলা যে ব্যক্তিকে তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ হতে মুক্ত করেছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (তিরমিযী: ২৪০৯)

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুক্তির উপায় কী? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় (অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়ীতে অবস্থান কর) এবং তোমার গুনাহের জন্য ক্ৰন্দন কর। (তিরমিযী: ২৪০৬)

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ সকালে ঘুম হতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য | (তিরমিযী: ২৪০৭)

বিপদে ধৈর্য ধারণ:

মুমিনের জন্য প্রতিটি কষ্ট-যাতনা,বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করলে গুনাহ থেকে মুক্তি ও নেকী পাওয়া যায়। বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য পরীক্ষা আর রহমত স্বরূপ।

আল্লাহ বলেন-

“আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা ও ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রামণ করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’ (সূরা আল বাকারা : ১৫৫-১৫৭)



আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদেরকে হিসাব ছাড়া প্রতিদান দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

“বলুন, হে আমার বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই।” (সূরা যুমার: ১০)



যারা বিপদাপদে ধৈর্য্য ধরতে পারে না তারাই ক্ষতিগ্রস্থ। তারা ইহকালে ও পরকালে দুই জায়গাতেই ব্যর্থ।

“মানুষের মধ্যে কতেক এমন রয়েছে, যারা দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি তার কোন কল্যাণ হয় তবে সে তাতে প্রশান্ত হয়। আর যদি তার কোন বিপর্যয় ঘটে, তাহলে সে তার আসল চেহারায় ফিরে যায়। সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি হল সুস্পষ্ট ক্ষতি’ (সূরা হজ: ১১)



আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ। আর আল্লাহর নিকটই মহান প্রতিদান” (সূরা তাগাবুন: ১৫)

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে বিপদে পতিত (ধৈর্যধারী) মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হবে, তখন (পৃথিবীতে) বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙক্ষা (পরিতাপ) করবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করে দেয়া হত। (তিরমিযী: ২৪০২)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। (তিরমিযী: ২৩৯৯)

মুসআব ইবনু সা'দ (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সাদ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেনঃ নাবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধাৰ্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না। (তিরমিযী: ২৩৯৮, ইবনে মাজাহ: ৪০২৩)

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামাতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (তিরমিযী: ২৩৯৬)

মুমিনের উপর আরোপিত প্রতিটি বিপদেই রয়েছে কল্যাণ:

বিপদ যেমনই আসুক- মুমিন ধৈর্য ধারণ করে। কারণ, মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ এর বিনিময় দান করেন এবং এর কারণে গোনাহ মাফ করেন। এমনকি শরীরে কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা গোনাহ মাফ করেন। সায়েব ইবনে খাল্লাদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

"মুমিন যে ধরনের বিপদেই আক্রান্ত হোক না কেন, এমনকি কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা একটি নেকি লেখেন অথবা একটি গোনাহ মাফ করে দেন।" ( দ্রষ্টব্য: মুসনাদে আহমাদ: ১৬৫৬০;সহীহ মুসলিম (আয়েশা রা. থেকে) হাদীস: ২৫৭২)

রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন-

"মুমিন যখন কোনো (বিপদ বা) কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গোনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে।" (সহীহ বুখারী: ৫৩২৩, মুসলিম:২৫৭১)

শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. ও সুনাবিহী রা. এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন? তিনি উত্তরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন, বললেন, আল্লাহর নিআমতের মধ্যে আছি। তা শুনে শাদ্দাদ রা. বললেন, তুমি গোনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেন-

"আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দাকে বিপদে আক্রান্ত করি আর এ অবস্থার উপরও সে আমার প্রশংসা করে তখন সে (রোগের) বিছানা থেকে সেদিনের মত পাপমুক্ত হয়ে ওঠে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। এবং আল্লাহ ফিরিশতাদের বলেন, আমিই আমার বান্দাকে (আমল থেকে) বিরত রেখেছি এবং পরীক্ষায় নিপতিত করেছি; সুতরাং সে সুস্থ অবস্থায় যে নেক আমল করত এ অসুস্থ অবস্থায়ও সে নেক আমলের সওয়াব লিখতে থাক"। (মুসনাদে আহমাদ: ১৬৬৬৯)

মানুষের বিপদ কখনো হয় শারীরিক অসুস্থতার দ্বারা, কখনো সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে, আবার সন্তান-পরিবার আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমেও বিপদ আসে। তো যে ধরনের বিপদেই মুমিন আক্রান্ত হোক না কেন, এর বিনিময়ে তার গোনাহ মাফ হতে থাকে। গোনাহ মাফ হতে হতে একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। তাই যে কোনো ধরনের বিপদেই মুমিন হতাশ হয়ে যায় না; ধৈর্য ধারণ করে।

মুমিনের প্রতিটি কাজই কল্যাণময়:



আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’ (মুসলিম: ২৯৯৯, আহমাদ: ১৮৪৫৫)

-------চলবে

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: সাহিত্য

৬৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File