সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-১
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৫১:১২ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সুখ ও বর্ণাঢ্য জীবনের জন্য করণীয়:
পার্থিব জীবনে টিকে থাকার জন্য দরকার জীবিকা। বেঁচে থাকার জন্য দরকার একটি আশ্রয়স্থল, কিছু খাবার-পানীয়, পোষাক-পরিচ্ছদ আর কিছু আসবাবপত্র। এর বাইরে সবকিছুই বিলাসিতা। আমরা যতোই উপার্জন করি না কেন, ধন-সম্পদ জমা করি না কেন, নিয়তীর বাইরে কিছুই ভোগ-উপভোগ করতে পারি না। অর্থ-সম্পদ আমাদের কাঙ্খিত সুখ দিতে পারে না বা আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধি করতে পারে না তারপরও আমরা পার্থিব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অর্থ-সম্পদ জমা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যে অর্থ-সম্পদ আমাদের জীবন-কালকে (মৃত্যুকে বিলম্বিত করে) দীর্ঘায়িত করতে পারে না বা সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে না, সে-ই অর্থ-সম্পদ কামানোর জন্য আমরা আপনজনদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করি, মানুষকে ঠকাই, কখনো জবর-দখল করি। ঝগড়া-বিবাদ-কলহে লিপ্ত হয়ে কখনো হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটে।
অথচ ভালো থাকার জন্য দরকার পারস্পরিক সুসম্পর্ক, আত্মিয়তার সুদৃঢ় বন্ধন। জীবনে যতো ত্যাগ স্বীকার করা যায় ততোই সুখ পাওয়া যায়, যতোই দান করা যায় ততোই তৃপ্ততা বৃদ্ধি পায়। কিছু স্বার্থ বিসর্জন, কিছুটা আপস, কিছু বুঝাপড়া আর সবকিছুতে সমঝোতা আপনার ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক/সামাজিক জীবনকে করবে সুখী বর্ণাঢ্য আর সম্মৃদ্ধশালী।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ তোমাদের মধ্যে যে নিচে (দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের থেকে উপরে তার দিকে তাকিও না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছ মনে করবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
বুখারীর বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিম্নস্তরের।’’ (দ্রষ্টব্য: রিয়াদুস সালেহীন: ৪৭১)
পার্থিব জীবন ধোঁকা আর পরীক্ষা মাত্র, পরকালের জীবনই আসল:
এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। তারপরও এর সামান্য চাকচিক্যময়তার লোভে পড়ে আর প্রিয় মানুষদের চাহিদায় আমরা প্রাচুর্যের আধিক্য অর্জনে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। আল্লাহ বলেন-
“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও।" ( সূরা ১০২ তাকাসুর:১-২)
পার্থিব জীবন অস্থায়ী আর পরীক্ষাক্ষেত্র মাত্র। পরকালীন জীবনই আসল জীবন। এই জীবন তো পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করার স্থান। তাই এই পৃথিবীকে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন ধরণের শোভনীয় আর পরীক্ষার বন্তু দ্বারা লোভনীয় করেছেন যাতে মানুষ এর ধোঁকা থেকে বেঁচে প্রকৃত জীবন "পরকালের" জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে।
“এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পারলোকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন; যদি ওরা জানত।” (সূরা ২৯ আনকাবূত: ৬৪)
“নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।” (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১৪)
"ধনৌশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট।" ( সূরা ১৮ কাহফ: ৪৬)
মানুষ পার্থিব ধন-মাল, উপায়-উপকরণ এবং গোত্র ও সন্তান-সন্ততির জন্য গর্ব করে। মহান আল্লাহ বললেন, এই জিনিসগুলো হল ধ্বংসশীল এবং পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য। আখেরাতে এগুলো কোন কাজে আসবে না। এই জন্য পরে বলা হয়েছে যে, আখেরাতে কাজে আসবে স্থায়ী সৎকর্মসমূহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।’’ (বুখারী: ২৮৩৪,৭২০১, মুসলিম: ১৮০৫)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’’ (মুসলিম: ২৯৫৬)
পার্থিব-সম্পদে অনাসক্ত ও প্রাচুর্যের মোহ ত্যাগ:
‘আমর ইবনে ‘আউফ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জার্রাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।’’ তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ।’
তিনি বললেন, ‘‘সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না। বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।’’ ( বুখারী, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ৪৬১)
আবূ সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে। কেননা বনী ইসরাঈলে সর্বপ্রথম নারীদের থেকেই ফিতনা শুরু হয়।" (সহীহ মুসলিম: ২৭৪২)
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।’’ (বুখারী: ৬১৪৯, মুসলিম:২৯৬০ )
পার্থিবজীবনের মূল্য:
সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য বা ওজন থাকত, তাহলে তিনি কোন অবিশ্বাসীকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’ (তিরমিযী:২৩২০)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর যিকর এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও ইলম-অন্বেষণকারী নয়।’’ (তিরমিযী:২৩২, রিয়াদুস সালেহীন: ৪৭৮)
ধন-সম্পদ পরীক্ষাস্বরূপ:
কা‘ব ইবনে ‘ইয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি; ‘‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল।’’(তিরমিযী: ২৩৩৬)
রাসূলুল্লাহ (স.)-এর পার্থিবজীবন:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন যে, তখন একটা প্রাণীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ঘরে ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্তু যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।’ (বুখারী ও মুসলিম:২৯৭৩)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’ (সহীহুল বুখারী: ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম: ২৯৭২)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা চাটাই-এর উপর শুলেন। অতঃপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে তার দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দই।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমি তো (এ) জগতে ঐ সওয়ারের মত যে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য) গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।’’ (তিরমিযী: ২৩৭৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে শিখ্খীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, এমতাবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুমি খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথবা যা তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদাকাহ করে (আখেরাতের জন্য) জমা রেখেছ।’’ (মুসলিম: ২৯৫৮)
দুনিয়ার সাথে মুসলমানের সম্পর্ক মুসাফিরের মতো:
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন প্রবাসী/মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’
আর ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ (বুখারী: ৬০৫৩, তিরমিযী: ২৩৩২)
তিরমিযীর বর্ণনায় আরো আছে, "তুমি নিজেকে কবরবাসী মনে করবে।" হাদীসটির ব্যখ্যা হলো- পার্থিব জীবনকে আসল ঠিকানা বানানো যাবে না। তার সাথে সম্পর্ক হবে ততোটুক, যতোটুক একজন প্রবাসী তার প্রবাসের সাথে রেখে থাকে। তাতে সেই বিষয়-বস্তু নিয়ে বিভোর হয়ে থাকা যায় না, যে বিষয়-বস্তু নিয়ে সেই প্রবাসী ব্যক্তি বিভোর হয় না, সে স্বদেশে নিজের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চায়। আমাদের গন্তব্যস্থল হলো পরকাল।
আল্লাহ ও মানুষের ভালোবাসা পাবার উপায়:
আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।’’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১০২)
প্রকৃত মুমিনদের নি:স্বতা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়:
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বলো।’’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, ‘‘যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার নিকট আগমন করবে।’’ (তিরমিযী:২৩৫০)
ধন-সম্পদের মোহ দ্বীনের জন্য ক্ষতিকারক:
কা‘ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ছাগলের পালে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশী ক্ষতিকারক।’’ (তিরমিযী: ২৩৭৬, আহমাদ: ১৫৩৫৭)
আল্লাহ বলেন-
“কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।” (সূরা বানী ইসরাইল: ১৮)
দারিদ্রতার ফযিলত:
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘গরীব মু’মিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (তিরমিযী: ২৩৫৩, ২৩৫৪, ইবনু মাজাহ: ৪১২২, আহমাদ:৭৮৮৬)
ইবনে আব্বাস ও ইমরান ইবনে হুসাইন ( থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।’’ (বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ৪৮৮)
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
৬৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন