শেষ যমানায় ঈমান ও আ'মালের ফযিলত (মর্যাদা)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ০২:১৩:১১ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

শেষ যমানায় ফিতনা যখন ব্যাপকতর হবে, মানুষের মাঝে আমানতদারীতা থাকবে না, মূর্খতা. কার্পণ্যতা, হতাকান্ড বাড়তে থাকবে আর নেক আমল কমতে থাকবে তখন দ্বীনের উপর অটল থাকা হবে হাতের মাঝে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার মতো। সে সময়ের ঈমান আর আমলের অনেক ফযিলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সময় নিকটবর্তী হতে থাকবে, আর আমল হ্রাস পেতে থাকবে, কার্পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ (هرج) ব্যাপকতর হবে। সাহাবা-ই-কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা (هرج) কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হত্যা, হত্যা। (বুখারী: ৬৬৫২, মুসলিম: ৪৮২৭)



আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যাক্তি দাঁড়ানো ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। দাঁড়ানো ব্যাক্তি পদাচারী ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। পদাচারী ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে। যে ব্যাক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন তথায় আত্নরক্ষা করে। (সহীহ বুখারী: ৬৬৭০, মুসলিম: ৫১৩৬)



আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই কিয়ামাতের কাছাকাছি সময়ে অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় বিপদ আসতে থাকবে। তখন সকালবেলা যে ঈমানদার ছিলো, সন্ধ্যাকালে সে কাফির হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যাবেলা যে ঈমানদার ছিলো, সে সকালবেলা কাফির হয়ে যাবে। তখন দাঁড়ানো ব্যক্তির চাইতে বসা ব্যক্তি এবং হেঁটে চলার লোক দৌঁড়ে চলা লোকের চাইতে উত্তম হবে। তখন তোমরা তোমাদের ধনুকগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলো, ধনুকের ছিলাগুলো কেটে ফেলো এবং তরবারিগুলো পাথরে আঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করো। তবুও যদি তোমাদের কারো কারো নিকট কেউ এসে পড়ে, তবে যেন সে আদম (আঃ)-এর দু‘পুত্রের মধ্যে উত্তমটির (হাবীলের) মতো হয়। (আবু দাউদ: ৪২৫৯, তিরমিযী: ২২০৪)



শেষ যমানার ঈমানদারদের মর্যাদা:



عن ابن محيريز قال قلت لأبي جمعة رجل من الصحابة حدثنا حديثا سمعته من رسول الله صلى الله عليه وسلم قال نعم أحدثك حديثا جيدا تغدينا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ومعنا أبو عبيدة بن الجراح فقال يا رسول الله أحد خير منا أسلمنا وجاهدنا معك قال نعم قوم يكونون من بعدكم يؤمنون بي ولم يروني

মুহাইরিয (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবী জুমু’আহ- যিনি সাহাবীগণের মধ্যেকার একজন-তাকে বললাম, আপনি আমাদেরকে এমন একটি হাদীস শুনান যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন।

তিনি বললেন: আচ্ছা, আমি তোমাদেরকে একটি উত্তম হাদীস শুনাচ্ছি। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সকালের খাবার খেলাম, তখন্ আমাদের সাথে আবী উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন। তখন তিনি বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের চেয়েও উত্তম কেউ আছে? যেখানে আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আপনার সাথে থেকে জিহাদ করেছি? তিনি বললেন: হাঁ। তারা হবে সেই সকল লোক, যারা তোমাদের পরে আসবে; তারা আমার প্রতি ঈমান আনবে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি।”

(সূত্র: আল মুসতাদরাক: ৭০৭৫, সুনানে দারেমী: ২৭৪৪, মুসনাদে আহমাদ: ১৬৫২৮, মু'জামুল কাবীর: ৩৫৩৭-৩৫৪০) বি.দ্র.: এখানে শেষযুগের ফিতনার সময়ে মুমিনদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, তবে সাহাবী কেরাম বা শ্রেষ্ঠ তিনযুগের লোকদের মতো নয়। কেননা তাদের ফযিলত কুরআন ও অসংখ্য হাদীসে এসেছে।



অল্প আ'মল করেও বেশি নেকী:

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এমন এক যুগে অবস্থান করছ যে, যদি তোমাদের কোন ব্যক্তি নির্দেশিত বিষয়ের (কর্তব্যকর্মের) এক-দশমাংশ পরিমাণও ত্যাগ করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর এমন এক যুগের আগমণ ঘটবে যে, কোন ব্যক্তি যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশ পরিমাণও পালন করে তাহলে সে মুক্তি লাভ করবে। (তিরমিযী: ২২৬৭) হাদীসটি আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে-

'তোমাদের এ যুগে অনেক বিদ্বান কিন্তু কম বক্তা, এ সময়ে নির্দেশিত বিষয়ের (কর্তব্যকর্মের) এক-দশমাংশ পরিমাণও ত্যাগ করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর এমন এক যুগ আসবে যখন আলেম হবে কম বক্তা হবে বেশি, তখন কোন ব্যক্তি যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশ পরিমাণও পালন করে তাহলে সে মুক্তি লাভ করবে। (দ্রষ্টব্য: সিলসিলাতুল সহীহাহ: ২৫১০)



শেষ যমানার ঈমানের মর্যাদা:



আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন একটি যুগের আগমন ঘটবে যখন তার পক্ষে ধর্মের উপর ধৈর্য ধারণ করে থাকাটা জ্বলন্ত অঙ্গার মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা ব্যক্তির মতো কঠিন হবে। ( দ্রষ্টব্য: সহীহাহ: ৯৫৭)

শেষ যমানায় আমলের মর্যাদা:



আবূ উমাইয়্যা আশ-শাবানী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি আবূ সালাবা আল-খুশানী (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে বললাম, এ আয়াত প্রসঙ্গে আপনি কি করণীয় বলে ঠিক করেছেন? তিনি বললেনঃ কোন আয়াত? আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে বিপথগামী হয়েছে সে তোমাদের কোন লোকসান করতে পারবে না” (সূরাঃ আল-মায়িদাহ– ১০৫)।

আবূ সালাবা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জেনেছে এমন একজনকে প্রশ্ন করেছ। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেনঃ বরং তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিতে থাক এবং খারাপ কাজ হতে বিরত করতে থাক। এমন কি যখন দেখবে যে, কৃপণের আনুগত্য করা হচ্ছে, কুপ্রবৃত্তি তাড়িতকে অনুসরণ করা হচ্ছে ও পার্থিব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতকেই প্রাধান্য দিচ্ছে, তখন তুমি নিজের ব্যাপারে যত্নবান হও এবং জনগণ যা করছে তা ত্যাগ করো।

কারণ তোমাদের পর এমন যুগ আসবে, যখন (দীনের উপর) সবর করে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতের মুঠোয় ধারণ করে রাখার মত (যন্ত্রণাদায়ক) হবে। ঐ সময় দীনের উপর আমলকারীর প্রতিদান হবে পঞ্চাশজন আমলকারীর প্রতিদানের সমান। (আল মুসতাদরাক: ৭৯৮২, তিরমিযী: ৩০৫৮)



একটি দল সব সময় সত্যের উপর অটল থাকবে:



মু‘আবিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা অপমান করতে চাইবে অথবা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা এই অবস্থার উপর থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)



আল্লাহ আমাদের সহীহ ঈমান ও বিদআ'তমুক্ত আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।।



সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: সাহিত্য

৭১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File