ফযরের সালাত ফর্সা করে পড়া উত্তম

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:১৭:২৪ রাত

ফযরের সালাত ফর্সা করে পড়া উত্তম:

ফযরের সালাত অন্ধকার বিদূরিত করে (পূর্বাকাশ পরিষ্কার বা ফর্সা করে) আদায় করা একদল বিদ্বানদের মতে "মুস্তাহাব"। ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর ফতোয়াও তাই। তবে ইমাম শাফেয়ী. আহমাদ, ইসহাক ও অন্যান্য বিদ্বানদের মতে অন্ধকারে পড়া উত্তম। এক্ষেত্রে ফর্সা করে পড়া সংক্রান্ত হাদীসগুলো দু'ধরণের- ১. আদেশ ও ফযীলত ২. কর্মমূলক তথা আদায় সংক্রান্ত। অন্ধকারে পড়া সংক্রান্ত হাদীসগুলো শুধু আদায় সংক্রান্ত।

ফর্সা করে পড়ার দলীল:



عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ ‏"‏

রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা ফযরের নামায (ভোরের অন্ধকার) ফর্সা করে আদায় করো। কেননা তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে। হাদীসটি সহীহ সনদে ১০টির অধিক গ্রন্থে এসেছে।



(সূত্র: সুনানুল কুবরা: ২০৮২, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৩৩৬/১, তিরমিযী:১৫৪, মুসনাদে আহমাদ:১৬৮২৮, তালখীসুল হাবীর: ২৬২)

আবু ঈসা বলেনঃ রাফি' (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈন অন্ধকার চলে যাওয়ার পর ফযরের নামায আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন।



মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক (:২১৮২) ও সুনানে দারেমীত এসেছে "সলাতে সুবহে শব্দে"-

عن رافع بن خديج عن النبي صلى الله عليه وسلم قال أسفروا بصلاة الصبح فإنه أعظم للأجر

দ্রষ্টব্য: দারেমী:১২১৭ এরপরের হাদীসটি-

عن رافع بن خديج قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نوروا بصلاة الفجر فإنه أعظم للأجر

"ফযরের সালাতকে উদ্ভাসিত(ভোরের ফর্সায়)করো, এতো অধিক সওয়াব।



সুনানে নাসাঈতে এসেছে এই ভাবে-

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما أسفرتم بالفجر فإنه أعظم بالأجر

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফজরের সালাত যতো ফর্সা হওয়ার পর আদায় করবে, ততই তোমাদের অধিক সওয়াবের কারণ হবে। (দ্রষ্টব্য:সুনানুন নাসাঈ: ৫৪৯)

সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহতে এসেছে-

"‏ أَصْبِحُوا بِالصُّبْحِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ أَوْ لأَجْرِكُمْ ‏"

"ভোরের আলো প্রকাশিত হলে ফজর সলাত আদায় করবে। কারণ এতে তোমাদের জন্য অত্যধিক সাওয়াব বা অতি উত্তম বিনিময় রয়েছে।(ইবনে মাজাহ: ৬৭২, আবু দাউদ:৪২৪)

তাবারানীর মু'জামুল আওসাতে এসেছে এই ভাবে-

" نوروا بالفجر ، فإنه أعظم للأجر "

ফযরকে ফর্সায় আদায় করো, কেননা এতে রয়েছে অধিক সওয়াব। (দেখুন- মু'জামুল আওসাত: ৩৩৪৩)

عن زيد بن أسلم قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أسفروا

بالفجر فإنكم كلما أسفرتم كان أعظم للأجر .

যায়েদ ইবনে আসলাম রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমরা ফযরকে ফর্সায় আদায় করো, কেননা য়দি তোমরা ফর্সা করো তবে তাতে তোমাদের জন্য অধিক সওয়াব রয়েছে। (মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৩৩৬/১২)



২.

عن ]جده رافع بن خديج ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لبلال : " نور بالفجر قدر ما يبصر القوم مواقع نبلهم " .

"ফজরের সালাতকে ফর্সায় করে (আযান দাও) হে বেলাল, এমন সময়ে যেন লোকেরা তাদের তীর কোথায় নিক্ষিপ্ত হল তা দেখতে পায়।"( তাবারানীর মু'জামুল কাবীর: ৪৪১৪/১৫)



হাদীসটি আরো ভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে এবং এর সনদ সহীহ । (দেখুন: মাজমা'উল যাওয়ায়েদ ওয়া মানবা'আউল ফাওয়ায়েদ: ১৭৭৬)



عن رافع بن خديج قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " أسفروا بصلاة الغداة " .

"তোমরা ফযরের সালাতকে ফর্সায় আদায় করো" (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ২১৫৯)



৪. সহীহ বুখারীর আসরের ওয়াক্ত অনুচ্ছেদের একটি হাদীসের শেষাংশে এসেছে-

"তিনি ফজরের সালাত এমন সময় সমাপ্ত করতেন যখন প্রত্যেকে তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এ সালাতে তিনি ষাট হতে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন।" (বুখারী: ৫৪৫)



. عن عبد الرحمن بن الأسود أن ابن مسعود كان ينور بالفجر

"ইবনে মাসউদ রা.ফযরের সালাতকে ফর্সা করে পড়তেন।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৯৩/৩৩৬)

বি.দ্র: মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহতে "ফর্সা করে" ফযরের সালাত পড়া সংক্রান্ত ২২টির মতো বর্ণনা এসেছে।



# ইমাম আবু হানিফা রহ., সুফিয়ান সাওরী সহ একদল বিদ্বান ফযরের সালাতকে ফর্সায় আদায় করা মুস্তাহাব বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহাক সহ একদল বিদ্বান ফযরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আদায় করা মুস্তাহাব বলেছেন।



উপসংহার: "গালাস" তথা অন্ধকারে ফযরের সালাত পড়া সংক্রান্ত অনেক সহীহ হাদীস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণনা থাকলেও তাতে অন্ধকারে পড়াটা উত্তম প্রমাণিত হয় না বরং পড়া বৈধ বলে বা রাসূল সা. পড়েছেন বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু অন্ধকার দুর করে ফর্সা করে পড়া সংক্রান্ত হাদীসগুলো (বিশেষ করে মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ও তাবারানীতে ) ফর্সায় পড়ার ফযীলত এবং রাসূলুল্লাহ সা. আদেশ সংক্রান্ত । তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়- ফযরের সালাত অন্ধকার বিদূরিত করে আদায় করাই মুস্তাহাব।

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: সাহিত্য

৬৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385977
১২ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ০৮:৪৭
হতভাগা লিখেছেন : আমার মনে হয় নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে মানে আযানের কিছুক্ষন পর বা ওয়াক্ত শুরু হবার অব্যহতি পরেই আদায় করে ফেলা উচিত।

উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় - যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় দুপুর ১২ টার ৫/৭ মিনিট আগে । আর আমরা আদায় করি ১ - ১.৩০ টায়। এর মধ্যে কেউ যদি মারা যায় তাহলে তার তো কৈফিয়ত আসবে কেন সে ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায় করলো না? নামাজের সময় তো এসে গিয়েছিল?
385984
১৩ অক্টোবর ২০১৮ রাত ১২:০৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আওয়াল ওয়াক্তে পড়ার বহু হাদিস রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে আল্ কুরানের বহু ফরজ নির্দেশ মহান আল্লাহ তায়ালার তা আমরা পালন করছিনা। এবং এই ফরজ বিষয় নিযে আমাদের কোন কথা নেই। মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালা বলেন ! তোমাদের কি হলো তোমরা কেন কুরান গবেষণা করছোনা তোমাদের অন্তরেকি তালা লাগানো হয়েছে: সুরা মুহাম্মদ ২৪। ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File