‘রাগ করো না’

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৫ অক্টোবর, ২০১৮, ০৯:১০:৫০ রাত

রাগ: ‘রাগ করো না’



রাগ/ ক্ষোভ/ ক্রোধ/ আক্রোশ হলো মানুষের অসন্তোষ, অন্তর্জ্বালা বা দহনের বহি:প্রকাশ। এর প্রকাশে মানুষের মুখাবয়ব বা দেহের মাঝে পরিবর্তন আসে। অতিরিক্ত রাগ বা ক্রোধের ফলে বাড়তে পারে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন, এর ফলে হার্টঅ্যাটাক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এটা মানুষের দ্বিতীয় রিপু হিসেবে পরিচিত এবং এটা স্বভাবজাত বলে এটাকে মন থেকে সম্পূর্ণ দুর করা সম্ভব নয়। ইসলামে এটাকে নিয়ন্ত্রণ রাখার কথা বলা হয়েছে। যেমন, রাগ/ক্ষোভ হলে কী করতে হবে সেই সম্পর্কে হাদীসে এসেছে।

রাগের আরবী শব্দ কুরআনে غضب(গযব) ও غيظ এসেছে। গযব শব্দটি বিশেষভাবে আল্লাহর শানে ব্যবহৃত হলেও মানুষের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেমন, কুরআনে আসেছে-

وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِي مِنْ بَعْدِي

আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও দুঃখিত অবস্থায় স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা কিই না জঘন্য কাজ করেছ! (সূরা ৭ আরাফ:১৫০)

ক্রোধ হলো এক প্রকার হিংসা বা অন্তরের জ্বলন। এতে শুধু ধ্বংস রয়েছে। প্রতিটি ক্ষোভই ক্ষতিকর ও ধ্বংসশীল। যেমন-

قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

বলো, আক্রোশেই মরো তোমরা। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা আলে ইমরান ৩:১১৯) অর্থ্যাৎ কাফিররা মুসলমানদের সামনে বলে, আমরা বিশ্বাস করি, কিন্তু যখন তারা একা হয়, তখন মুসলমানদের প্রতি আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুল দাঁতে কাটে।(৩:১১৯)

تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ

রোষে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে, (সূরা ৬৭ মূলক:৮)

إِذَا رَأَتْهُمْ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيرًا

দূর হতে (জাহান্নাম) যখন ওদেরকে দেখবে, তখন ওরা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার শুনতে পাবে। (সূরা ২৫ ফুরকান:১২)

وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَىٰ مَنْ يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

এবং ওদের (মুসলমানদের) হৃদয়ের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তওবা করার তওফীক দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ৯ তাওবা: ১৫)

রাগকে নিয়ন্ত্রণ রাখা ও প্রশমিত করা মুমিনের গুণাবলী:

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা ৩ আলে ইমরান:১৩৪)

রাগ’ ধ্বংস করে দিতে পারে জীবন, সম্পদ, সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। সুতরাং এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাদীসের আলোকে রাগ প্রশমিত করার কিছু উপায়:

১. তাওয়্যাযুয পড়া: নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (বুখারী:৫৭৬৪, মুসলিম: ২৬১০/৪৭২৫) দ্রষ্টব্য: সুরা আরাফ:২০০

২. অবস্থানের পরিবর্তন: রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)।

৩. অযু করা: নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)।

৪. চুপ থাকা: রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: ‘যদি তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তাকে নীরব থাকতে দাও।’

রাগ দমনের ফযিলত:



নবী করিম (সা.) বলেন: ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)।

তিনি আরো বলেন: ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (তিরমিযী: ২০২১,২৪৯৩ আবু দাউদ:৪৭৭৭, ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৬-৩৭)।

ক্রোধ, ক্ষোভ বা রাগ এর আরবী শব্দ غيظ আল কুরআনে ৯ জায়গায় এসেছে। যথা-



সূরা ৯ তাওবা: ১১৯, ১২০, ১৩৪ সূরা ২২ হাজ্জ: ১৫, সূরা ২৫ ফুরকান:১২, সূরা ৩৩ আহযাব: ২৫, সূরা ৪৮ ফাতহ: ২৯, সূরা ৬৭ মূলক:৮

আর রাগের অপর আরবী শব্দ غضب শব্দটি এসেছে ১৯ জায়গায়

২:৬১, ৯০, ৩:১১২, ৪:৯৩, ৫: ৬০, ৭:৭১, ১৫০, ১৫২, ১৫৪, ৮:১৬, ১৬:১০৬, ২০:৮১, ৮৬, ২৪:৯, ৪২:১৬, ৩৭, ৪৮:৬, ৫৮:১৪, ৬০:১৩

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: বিবিধ

৬৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File