আলেমদের অসম্মান করা এক মহাব্যধী (অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর:পর্ব এক)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৭ মে, ২০১৮, ০৫:১৭:৪২ বিকাল
গ্রামের নাম নবীপুর! গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়। মহল্লার এক জামে মসজিদ। ফযরের ওয়াক্তে সাধারণত ৭/৮ জন মুসল্লীর উপস্থিতি হয়।
এক ফযরে দেখা গেল ইকামতের পরও দুইজন মুসল্লী বসে আছে (একজন গরীব ও অশিক্ষিত বয়োবৃদ্ধ, আরেকজন মেট্রিকপাশ একচিল্লাওয়ালা), জামাত শেষ হতেই চিল্লাওয়ালার ইমামতিতে দুইজনের জামাত শুরু হলো। কানাঘুষার শেষ পর্যায়ের যা পাওয়া গেল তা হলো, মসজিদের এই ইমামের (যিনি এই মহল্লারই বাসিন্দা, কামিল পাশ এবং ৩০ বছর যাবত বিনা বেতনে সালাত পড়িয়ে আসছেন) পিছনে সালাত হবে না কারণ তার কিরাআত বিশুদ্ধ নয়! চিল্লায় গিয়ে তিনি বিশুদ্ধ কুরআন আর মাসআলা শিখে এসেছেন। শুরু হলো দীর্ঘ ৫০ বছরের সুনাম নষ্ট করে মসজিদে দ্বিতীয় জামাতের চল।যদিও দুইজন ছাড়া কেউ তার কথায় কর্ণপাত করে নি।
মসজিদের ঐক্যের পরিবেশ ঠিক রাখতে এক সময় ইমাম সাহেব ইমামতির দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। বিশুদ্ধ কিরাআতে সালাতের জন্য একের পর এক ইমাম সাহেব আনা হলো আর অল্প বেতনের কারণে কেউ বেশিদিন থাকে না। মুসুল্লীরাও বেশি টাকা দিয়ে (সাথে খাওয়ানোর ঝামেলা) ইমাম রাখায় আগ্রহী না। প্রবীণরা মহল্লার আলিমকে অনুরোধ করলো সালাত পড়ানোর জন্য, তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ও সালাত পড়াক ওর পিছনে সালাত পড়তে আমার কোনো আপত্তি নেই।
এই চিল্লাওয়ালা এক সময় ফতোয়া দিয়েছিল, যে আলেম হাইস্কুলে বেপর্দা মেয়েদের ক্লাস করায় তার পিছনে সালাত হবে না। এখন তিনি প্রাইমারী ইস্কুলের শিক্ষক, তার সমস্ত সহকর্মী বেপর্দা নারী। তিনি দিব্যি সালাত পড়িয়ে যাচ্ছেন। এক সময় তিনি ঘোষণা দেন এলাকায় কোনো হক্কানী ও সহীহ ইলমের আলেম নেই।
এর মূল কারণ হলো অল্পজ্ঞান, প্রত্যেক স্বল্পজ্ঞানীই ভাবে তার চেয়ে বেশি কেউ জানে না, যখনই কেউ জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রে নামে তখনই সে বুঝতে পারে, " সে আসলে কিছুই জানতে পারে নি, পড়ে আছে বালুতটে সামনে বিশাল সমুদ্র" তখনই সে হয় বিনয়ী। পরের সমালোচনা না করে নিজের সংশোধনেই ব্যস্ত থাকে।
আজকে "তাবলীগ জামাতের" বিরুদ্ধে চরমোনাইয়ের কিংবা দেওবন্দী আলেমদের বড় অভিযোগ তারা "আলেমদের" মর্যাদায় আঘাত হানছে বা জনগণের সামনে আলেমদের হেয় প্রতিপন্ন করছে। (বি.দ্র-:আলেমদের সম্মান করা ও তাদের কাছ থেকে মাসআলা জানা তাদেরই একটি "উসূল"।)
অথচ এক সময় দেওবন্দপন্থী তথা কওমী মাদরাসার আলেমরাই তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষিত আলেমদের মসজিদ থেকে বের করার ভিন্ন নকশা তৈরি করে এবং সফলও হয়। গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গায় ভরে যায় শুধু ক্বারিয়ানা পাশ করা অল্প বয়স আর অল্প ইলমের ইমাম দ্বারা। মসজিদে শুরু হয় সাধারণ শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত চিল্লাওয়ালা লোকদের বয়ান। সেই একই পদ্ধতি, একই কথা (কুরআন ও হাদীস থেকে জিহাদের ফযিলত সংক্রান্ত সমস্ত বর্ণনা দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে জুড়ে দিয়ে নানান বুজুর্গদের আজব কাহিনি।) বারবার চলতে থাকে।
আলেমদের অপমান-অপদস্থ কিছু আলেমদের কারণেই শুরু হয়ে যায় আর এখন সেটা জাতির মহাব্যধীতে পরিণিত হয়েছে। জাতির মনে সন্দেহর বীজ ঢুকে এখন সেটা বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আলেমদের এখন তারা বিশ্বাস করতে চায় না।
ওয়াজ মাহফিল কিংবা সাধারণ বয়ান, সভা সেমিনার কিংবা লেখালেখি আলেমদের মূলপ্রতিপাদ্য হচ্ছে ভিন্নমতাবলম্বীদের তুচ্ছ তাচ্ছ্বিল্য করা, ইখতেলাফি বিষযকেই দ্বীনের মূল মনে করা। অথচ তাদের কাজ ছিল ইফতেলাফি বিষয়কে এড়িয়ে এই উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা।
একজন আলেম কেন কেনো সাধারণ মুসলমানও কখনো " অশ্লীলভাষী, ফালতু-আলাপী, কলহ-বিবাদী, অপরের সুনাম নষ্টকারী, গীবত-তোহমতকারী, পরচর্চাকারী, ছিদ্রাণ্বেষী, গালিবাজি, সম্পর্কচ্ছেদী, দুনিয়ামুখী এবং চুড়ান্ত ফয়সালাকারী" হতে পারে না। অথচ আলেমরাই আজ এসব কাজে জড়াচ্ছেন সাধারণ মূর্খ জনতাকে নিয়ে।
সুতরাং হে ওয়ারাসাতুল আম্বীয়া, নবীদের উত্তরসূরী! আগে হৌন নবীর পরিপূর্ণ অনুসারী।
এই পোষ্টটি নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপকে (তাবলীগ, কওমী বা পীরপন্থী) উদ্দেশ্য করে নয়, বরং যারাই দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে উৎসাহী তাদের হৃদয়ে রেখাপাত করে সংশোধনের জন্য । আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন ও ঐক্যবদ্ধভাবে তার রশিকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দিন। আমীন।।।
#অল্পবিদ্যা_ভয়ঙ্কর
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
১০৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন