নিজকে পরিশুদ্ধ করুন নিজের স্বার্থেই
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৬ মে, ২০১৮, ০৩:১৮:৫২ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
যখনই কোনো অনিয়মিত মুসুল্লীদের (বিশেষ করে আমার রুমমেট ও সহকর্মীদের মধ্য থেকে) সালাতের জন্য ডাকি, জবাব পাই-
"ভাইরে, আগে ঈমান ঠিক করতে হবে"। আমি বলি, তা তো ঠিকই, ঈমানের পরই সালাত, সালাতের কোনো বিকল্প নাইরে ভাই। জবাব পাই- ভাই আগে নিজেকে ঠিক করে নিই.... কবে রে ভাই?
মৃত্যু কি আর সিগন্যাল দিয়ে আসবে রে ভাই!
অথবা কেউ (আমাকে অথবা আমার সাথের মুসুল্লীদের লক্ষ্য করে) জবাব দেয়, আগে নিজের দৃষ্টি-ভঙ্গী পাল্টাতে হবে, মানুষই ঠিক মতো হতে পারলাম না। বললাম- কেন কী হয়েছে? জবাব পাই- মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার আগে, তুচ্ছ-তাচ্ছ্বিল্য কোন ধর্মে আছে? অথবা জবাব পাই-
" নামায পড়ে কী হবে রে ভাই, মানুষকে মানুষই ভাবতে পারলাম না!"
বেশির ভাগ সময় যে জবাবটা পাই তা হলো-
" আগে হালাল উপার্জন করতে হবে, পরের হক ঠিক মত আদায় করতে হবে, পরের টাকা মেরে এই নামাযের কী দাম আছে? বান্দাহর হক আল্লাহ মাপ করবেন না" ইত্যাদি...
আমি বলি- "ভাইরে! কে কী করলো, কোনো হালতে আছে, কীভাবে নামায পড়লো তা তার নিজস্ব ব্যাপার, আপনাকে সংশোধন হতে হবে নিজের জন্যই। অপরের মন্দ কর্ম বা অপরের আমলনামায় তো আপনার কোনো ফায়দা নাই। সালাত তো আপনার উপর ওয়াক্তমতোই ফরযে আইন (৪:১০৩) অপরের ভ্রষ্টতার দিকে না তাকিয়ে নিজেকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাচাবেন সেই চেষ্টাটাই করুন।"
বুঝতে পারি সবার একই মনোভাব, তাহলো- সবার থেকে আমিই(যদিও নিয়মিত সালাত আদায় না করি) ভালো, ওরা নামায পড়লে কাজ হবে কী, ঈমান-আখলাক-আদাবের ঠিক নাই। অথবা ভাবনাটা এই রকম- "সবাই জাহান্নামে গেলে আমি একা জান্নাতে গিয়ে কী করবো?"
আল্লাহ বলেন-
مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗঅপর আয়াতে-
"যে সৎপথ অবলম্বন করবে। সে তো নিজেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেরই ধ্বংসের জন্য। আর কোনো বহনকারী অন্য কারো ভার বহন করবে না।" (সূরা ১৭ ইসরা:১৫)
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۗ إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ ۚ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
"কোনো বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না; কারও পাপের বোঝা গুরুভার হলে সে যদি অন্যকে তা বহন করতে আহবান করে, তবুও কেউ তা বহন করবে না; যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং যথাযথভাবে নামায পড়ে। যে কেউ পরিশুদ্ধ হয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর প্রত্যাবর্তন আল্লাহরই নিকট।" (সূরা ৩৫ ফাতির:১৮)
একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না, প্রত্যেকেই তার পাপের শাস্তি পাবে। অবশ্য যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদেরকে পথভ্রষ্ট করবে, সে তার নিজের পাপের বোঝার সাথে তাদের পাপের বোঝাও বহন করবে। মহান আল্লাহ বলেন, (ওরা অবশ্যই নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং তার সঙ্গে আরও কিছু পাপের বোঝা...وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَعَ أَثْقَالِهِمْ) (দ্রষ্টব্য: সূরা ২৯ আনকাবূত: ১৩) এবং ‘কেউ ইসলামে ভালো কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সাওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে তাদের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ্ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহর অংশীদারীও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না। (মুসলিম: ১০২০/১৬৯৭,তিরমিযী: ২৬৭৫, ইবনে মাজাহ:২০৩, নাসাঈ:২৫৫৪, দারেমী:৫১২,৫১৪,মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ইবনে হিব্বান, বাইহাকী) এই হাদীস দ্বারা স্পষ্ট।
আল্লাহ আরো বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) অগ্নি হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে। (সূরা ৬৬ তাহরীম:৬)
এই আয়াতের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে, প্রথমে নিজেদের সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে, সাথে সাথে পরিবারের লোকদেরকেও সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে এবং তাদেরকে ইসলামী শিক্ষায় মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শেখাতে হবে। প্রথমে নিজেকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার মতো করে গড়ে তুলতে হবে তারপর পর্যায়ক্রমে পরিবার/ অধীনস্থ, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশীদেরকে সতর্ক করতে হবে, কেননা জাহান্নাম থেকে বাঁচার এটাও একটা উপায়।
আগে নিজকে সংশোধন করুন, অপরকে সংশোধনের দাওয়াত দিন; নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন, অপরকেও বাচানোর চেষ্টা করুন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।।
#সামসুল_আলম
বিষয়: বিবিধ
৮২৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন