নিকৃষ্ট শাসক: শয়তান যার সহচর ও অপদার্থ মন্ত্রণালয়
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৩ মে, ২০১৮, ০৩:২৩:২০ রাত
নিকৃষ্ট শাসক: শয়তান যার সহচর ও অপদার্থ মন্ত্রণালয়
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أراد الله بالأمير خيرا جعل له وزير صدق إن نسي ذكره وإن ذكر أعانه وإذا أراد الله به غير ذلك جعل له وزير سوء إن نسي لم يذكره وإن ذكر لم يعنه
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যখন আল্লাহ কোনো শাসকের মঙ্গল চান, তখন তিনি তার জন্য সত্যনিষ্ঠ (শুভাকাঙ্ক্ষী) মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক (কোনো বিষয়) ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং স্মরণ থাকলে তাকে সাহায্য করে। আর যখন আল্লাহ তার অন্য কিছু (অমঙ্গল) চান, তখন তার জন্য মন্দ মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক বিস্মৃত হলে সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে না।’’ (সুনানে আবু দাউদ:২৯৩২, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ১৯৬৯১, মিশকাত:৩৭০৭, একটু ভিন্ন শব্দে সুনানে নাসাঈ: ৪২০৪, আহমাদ: ২৩৮৯৩)
জালিমরাই নিকৃষ্ট শাসক:
আয়িয ইবনু ‘আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শাসকদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট শাসক সে, যে অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী। (মুসলিম, মিশকাত: ৩৬৮৮)
মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তিকে যদি আল্লাহ তা‘আলা প্রজাপালনের দায়িত্ব প্রদান করেন। আর সে তাদের জন্য কল্যাণকর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বা না পারে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (বুখারী:৬৭৩১, মুসলিম: ১৪২, দারিমী: ২৮৩৮, সুনানুল কুবরা, মু'জামুল কাবীর, মুসনাদে আহমাদ, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, মিশকাত: ৩৬৮৭)
মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম জনতার ওপর যদি কোনো শাসক নিযুক্ত হয়, অতঃপর সে আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত:৩৬৮৬)
নারী নেতৃত্ব জাতির জন্য অভিশাপ:
আবূ বাকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ আসলো যে, পারস্যের (ইরানের) অধিবাসীরা কিস্রার কন্যাকে তাদের সম্রাজ্ঞী নিযুক্ত করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হতে পারে না, যারা দেশের শাসনভার কোনো মহিলার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে। (বুখারী: ৪১৬৩, নাসায়ী ৫৩৮৮, তিরমিযী ২২৬২, মিশকাত: ৩৬৯৩)
খিয়াতনকারী শাসকদের পরকালীন দুর্দশা:
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুর্দশা শাসকদের জন্য, দুর্দশা সমাজপতিদের জন্য ও দুর্দশা আমানতদারদের জন্য। অনেক লোক কিয়ামতের দিন অবশ্যই কামনা করবে, যদি তাদের কপালের চুল ধ্রবতারার সাথে বেঁধে দেয়া হত, আর তারা আকাশমন্ডলী ও জমিনের মাঝে ঝুলিয়ে রাখা হতো, তবুও তাদেরকে সে সব নেতৃত্ব না দেয়া হতো। (শরহে সুন্নাহ, আহমাদ,মিশকাত:৩৬৯৮)
জালিম শাসকের সহচর শয়তান:
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাসক যে পর্যন্ত না জুলুম ও অবিচার করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে থাকেন। কিন্তু যখন সে জুলুম ও অবিচার করতে থাকে, তখন আল্লাহর সাহায্য তার ওপর থেকে সরে যায় এবং শায়ত্বন তার সহচর হয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)
আর ইবনু মাজাহ্-এর অপর বর্ণনাতে আছে, যখন সে জুলুম ও অবিচার করে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার নাফসের প্রতি অর্পণ করেন।(মিশকাত: ৩৭৪১)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দশজন লোকেরও আমীর (শাসক) নিযুক্ত হবে, কিয়ামতের দিনে তাকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে যে, তার গলায় বেড়ি পড়ানো থাকবে। তার গলার বেড়ি থেকে তার ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ তাকে মুক্ত করবে অথবা তার কৃত জুলুম ও নির্যাতন তাকে ধ্বংস করবে। (আহমাদ: ৯৫৭৩, দারিমী: ২৫১৮, সহীহাহ্: ২৬২১, মিশকাত:৩৬৯৭)
জালিম শাসক থেকে দুরে থাকা:
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গ্রামে-গঞ্জে বসবাস করে, সে অচেতন (সামাজিক শিক্ষা-শিষ্টাচার বহির্ভূত) হয়। আর যে শিকারের পিছনে দৌড়ায়, সে উদাসীন হয়। আর যে শাসকের সন্নিকটে থাকে, সে ফিতনায় পর্যবসিত হয় (ঝামেলায় পড়ে)। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, যে শাসকের সান্নিধ্যে থাকে, সে ফিত্নায় নিপতিত হয়। আর যখনই যে ব্যক্তি শাসকের যত নিকটবর্তী হয়, সে ততই আল্লাহ থেকে দূরে চলে যায়। (আবূ দাঊদ, মিশকাত:৩৭০১)
সংকলন ও সম্পাদনা: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
৮১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন