পানাহারে ইসলামী শিষ্টাচার:( তৃতীয়পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০১ এপ্রিল, ২০১৮, ০৩:৩৫:১৫ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার নিষিদ্ধ:

عَنْ ابْنِ أَبِي لَيْلٰى قَالَ كَانَ حُذَيْفَةُ بِالْمَدَايِنِ فَاسْتَسْقٰى فَأَتَاه“ دِهْقَانٌ بِقَدَحِ فِضَّةٍ فَرَمَاه“ بِه„ فَقَالَ إِنِّي لَمْ أَرْمِه„ إِلاَّ أَنِّي نَهَيْتُه“ فَلَمْ يَنْتَهِ وَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا عَنِ الْحَرِيرِ وَالدِّيبَاجِ وَالشُّرْبِ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَقَالَ هُنَّ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَهِيَ لَكُمْ فِي الآخِرَةِ.

ইবনু আবূ লাইলা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফা রা. মাদায়েন অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি পানি পান করতে চাইলেন। তখন এক গ্রামবাসী একটি রূপার পাত্রে পানি এনে তাঁকে দিল। তিনি পানি সহ পেয়ালাটি ছুঁড়ে মারলেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি এটি ছুঁড়ে ফেলতাম না, কিন্তু আমি তাকে নিষেধ করার পরও সে তাত্থেকে বিরত হয় নি। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিষেধ করেছেন, মোটা ও পাতলা রেশমের কাপড় পরতে, স্বর্ণ ও রৌপ্যের পান-পাত্র ব্যবহার করতে। তিনি আরো বলেছেনঃ উল্লেখিত বস্ত্তগুলো হ’ল দুনিয়াতে কাফির সম্প্রদায়ের জন্য; আর আখিরাতে তোমাদের জন্য। (সহীহ বুখারী: ৫৩০৯, মুসলিম: ২০৬৭/৩৮৪৯-৫০,সুনানুল কুবরা:৪১০৪, আবু দাউদ:৩৭২৩, ইবনে মাজাহ: ৩৪১৪, তিরমিযী:১৮৭৮, সুনানে দারেমী:২১৩০, সুনানে নাসাঈ: ৫৩০১, মুসনাদে আহমাদ:২২৮৬৫)

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الَّذِي يَشْرَبُ فِي إِنَاءِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِه„ نَارَ جَهَنَّمَ.

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী উম্মু সালামাহ রাঃ)হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে সে তো তার উদরে জাহান্নামের অগ্নি প্রবিষ্ট করায়। (বুখারী: ৫৩১১, মুসলিম: ২০৬৫, সুনানুল কুবরা: ৯১/৭৪১১/৭৪১৩, সুনানে দারেমী:২১২৯, ইবনে মাজাহ: ৩৪১৩, মুসনাদে আহমাদ: ২৬০৪২, ২৬০৭১, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক:১৭১৭, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক:১৯৯২৬, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৩৩২৭)



খাবার ও পানপাত্র ঢেকে রাখা:

عَنْ جَابِرٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏"‏ غَطُّوا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ وَأَغْلِقُوا الْبَابَ وَأَطْفِئُوا السِّرَاجَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَحُلُّ سِقَاءً وَلاَ يَفْتَحُ بَابًا وَلاَ يَكْشِفُ إِنَاءً فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلاَّ أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إِنَائِهِ عُودًا وَيَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ فَلْيَفْعَلْ فَإِنَّ الْفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ الْبَيْتِ بَيْتَهُمْ ‏"‏ ‏

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমরা (শয়নকালে) পাত্রসমুহ ঢেকে রাখবে, মশকগুলোর মুখ বন্ধ রাখবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতি নিভিয়ে দেবে। কারণ, শয়তান মশকের (বন্ধ) মুখ খুলতে পারে না, (বন্ধ) দরজা খুলতে পারে না এবং (আবৃত) পাত্রও অনাবৃত করতে পারে না। যদি তোমাদের কেউ তার পাত্রের উপর রাখার জন্য কাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তবে সে যেন তাই রাখে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কেননা দুষ্টু ইঁদুর বাড়িওয়ালাদের বাড়ি দ্রুত জ্বালিয়ে দেয়।" (সহীহ মুসলিম, পানীয়দ্রব্য অধ্যায়: ২০১২, সুনানুল কুবরা: ১১৬০, সুনানে ইবনে মাজাহ:৩৪১০, তিরমিযী:১৮১২, ২৮৫৭, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, মুসনাদে আহমাদ, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক: ১৭২৭)

সহীহ বুখারীতে এসেছে-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোন বস্ত্ত আড়াআড়ি করে রেখেও। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুগুলো নিভিয়ে দেবে। (বুখারী: ৫৩০০)

আবু দাউদে এসেছে-

"আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করো (রাতে ঘুমানোর সময়)। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার পাত্রগুলোর মুখ ঢেকে রাখো, যদিও একটি লাঠি দ্বারা হয়। তা পাত্রের মুখ আড়াআড়িভাবে রেখে দাও। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার পান পাত্রের মুখ বন্ধ করে রাখো। (আবু দাউদ:৩৭৩১)



عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ غَطُّوا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ فَإِنَّ فِي السَّنَةِ لَيْلَةً يَنْزِلُ فِيهَا وَبَاءٌ لاَ يَمُرُّ بِإِنَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ غِطَاءٌ أَوْ سِقَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ وِكَاءٌ إِلاَّ نَزَلَ فِيهِ مِنْ ذَلِكَ الْوَبَاءِ

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে: "তোমরা পাত্র ঢেকে রাখবে এবং মশকের মুখ এঁটে রাখবে। কেননা বছরে একটি রাত আছে, যে রাতে মহামারী নাযিল হয়। যে কোনো অনাবৃত পাত্র এবং বন্ধনমুক্ত মশকের উপর দিয়ে তা অতিক্রম করে, তাতেই সে মহামারী নেমে আসে।" (সহীহ মুসলিম: ২০১৪)

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

৭২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File