মোশাররফ করীম ও আমাদের আবেগী মুসলমানদের দায়িত্ব-কতর্ব্য: "পুরুষদের দৃষ্টিকে সংযত রাখা"
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০২:০৯:২১ রাত
বিসিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইদানিং ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে "টিভি অভিনেতা মোশাররফ করীম"এর একটি বক্তব্য (উপস্থাপক হিসেবে) নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি খুবই ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত ৭ মিনিটের মতো ভিডিও দেখে আমি তার বক্তব্যের কোনো পর্যায়েই ধর্মীয় কোনো বিষয়ে আঘাত করার মতো কিছু পাই নি। তার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল " শুধু পোষাকের কারণেই নারীদের হয়রানী হচ্ছে না বা শ্লীলতাহানীর মতো ঘটনা ঘটছে না, দরকার নিজেদের আত্ম সংশোধন"
কথাটি খুবই যৌক্তিক এবং বর্তমান সময়ের জন্য খুবই গুরুত্ববহ। একজন মুসলিম পুরুষের জন্যও পর্দা করা ফরয। তার দৃষ্টিকে হারাম থেকে সংরক্ষণ ও যৌনাঙ্গের হেফাযত করা ফরয। বর্তমান সময়ে নারী বিষয়ক সকল অপরাধে নারী যেমন দায়ী সমভাবে পুরুষও দায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষই আগ্রাসী, সেখানে নারীদের অবাধ চলাফেরা বা পোষাকের শালীনতা গৌণ। শিশু থেকে শুরু করে বোরকা পরিহিত নারীও অসৎ ,চরিত্রহীন, লম্পট পুরুষদের কবল থেকে রেহাই পায় নি। সুতরাং আগে পুরুষদেরই সংশোধন হতে হবে। ইসলামী অনুশাসন পালনের পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এই ধরণের অপরাধ কমাতে।
যারা এটা নিয়ে তাকে "মুনাফিক, মুরতাদ, ইয়াহূদীদের দালাল" তকমা দিয়ে গালি-গালাজ দিচ্ছেন তারা আদৌ ইসলামী সব বিষয় পালনকারী নন বা তারা সত্যিকারের মুত্তাকী নন, তারা মূলত ধর্মীয় বিষয়গুলো আবেগ দিয়ে দেখেন, যদিও নিজেরা ঠিকমত ধর্মীয় বিষয় পালন করেন না। অভিনেতা মোশাররফ করীম পর্দা নিয়ে কিছু বলেন নি পক্ষ বা বিপক্ষে, তিনি বলেছেন নারীদের পোষাকের স্বাধীনতা নিয়ে। যদিও ইসলামে নারীদের পোষাক কেন, নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই পোষাকের ব্যাপারে কিছু শর্তাবলী রয়েছে। তিনি তো আর ইসলামী বিদ্বান বা অনুরক্ত নন, তিনি যেটা করেন সেটাও ইসলামে হারাম। তার কাজ নিয়ে তো কোনোদিন কোনো ইসলাম-কল্যাণকামীকে সোচ্চার হতে দেখি নি বরং আজকে যারা তাকে মুরতাদ বলছে তারাই এক সময় তার নাটকের বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক দৃশ্যাবলী ফেসবুকে আপলোড করতো।
সত্যিকারের মুসলিম হলে তার এই বক্তব্য নয় বাংলাদেশের প্রচলিত "সকল ধরণের নারী-পুরুষদের অবাধ মেলামেশা সংক্রান্ত, অশ্লীল, খোলামেলা, অবৈধ প্রেমবিষয়ক ও পরিবার ও সামাজিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার চরিত্রহীন, কুরুচিপূর্ণ সিনেমা, নাটক" বন্ধ করতে সোচ্চার হৌন।
আল্লাহ বলেন-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
"বিশ্বাসীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।" (সূরা ২৪ নূর:৩০)
ইসলামের দৃষ্টিতে দৃষ্টির হেফাযত:
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "মহান আল্লাহ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে যিনার একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা সে অবশ্যই করবে। সুতরাং দৃষ্টি হচ্ছে চোখের যিনা, প্রেমালাপ হচ্ছে জিহবার যিনা এবং অন্তরের যিনা হচ্ছে তা ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা, আর গুপ্তস্থান তা সত্য কিংবা মিথ্যায় পরিণত করে।" (সহীহ বুখারী: ৫৮৮৯, সহীহ মুসলিম:২৬৫৭, আবু দাউদ:২১৫২)
অপর হাদীসে এসেছে-
দুই হাত যিনা করে, হাতের যিনা হচ্ছে স্পর্শ করা। দুই পা যিনা করে, অগ্রসর হওয়াই হচ্ছে পায়ের যিনা। মুখও যিনা করে, মুখের যিনা হচ্ছে চুমু খাওয়া। (আহমাদ, আবু দাউদ: ২১৫৩)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ) এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল তার দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল (রাঃ) এর চিবুক ধরে ঐ মহিলার দিকে না তাকানোর জন্য তার চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। (বুখারী:৫৮৭৪, মুসলিম:১৩৩৪)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হলো রাস্তার হক কী? তিনি বললেন: তা হল চোখ অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেওয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। (বুখারী, মুসলিম)
ইবনু বুরাইদাহ (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেনঃ হে আলী! কোনো নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা তোমার জন্য প্রথমবার দেখার অনুমতি আছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার জায়িয নয়। (আবু দাউদ: ২১৪৯, তিরমিযী: ২৭৭৭, সুনানুল কুবরা:১৩১৩৯, মুসনাদে আহমাদ:২২৪৮২)
জারীর (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হঠাৎ কোনো নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার চোখ ফিরিয়ে নিবে। (সহীহ মুসলিম:২১৫৯, আবু দাউদ:২১৪৮, তিরমিযী: ২৬৪৩)
ইবনু মাসঊদ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যেন অপর মহিলার দেহ স্পর্শ করে এমনভাবে তার বর্ণনা নিজের নিজের স্বামীর কাছে না দেয়, যেন সে তাকে চাক্ষুস দেখছে। (বুখারী, তিরমিযী, আহমাদ, আবু দাউদ: ২১৫০)
যেনা বা ব্যাভিচার থেকে বাঁচার উপায়:
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- নারী শয়তানের বেশে এসে যায়। সুতরাং তোমাদের কারো মনে এরূপ কিছু জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর কাছে গমন করে।কেননা এতে মনের বাসনা দুর্বল হবে। (মুসলিম:১৪০৩ ,আবু দাউদ:২১৫১)
আবু উমামাহ রেওয়ায়াত করেছেন, নবী (সা) বলেন, ”যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন মেয়ের সৌন্দর্যের ওপর পড়ে এবং এ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন।” (মুসনাদে আহমাদ:২১৭৭৫, মু'জামুল কাবীর:৭৮৪২, মিশকাত:৩১২৪)
সফলকাম/জান্নাতী মুমিনদের গূণাবলী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
"যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।" (সূরা ২৩ মুমিনুন:৫-৬; সূরা ৭০ মাআরিজ: ২৯-৩০)
আল্লাহ আমাদের যাবতীয় অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন। আমীন!!
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
৯৬৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন