মানুষকে কষ্ট দেয়া: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১০ মার্চ, ২০১৮, ০৩:১২:৫৭ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
রাত ৯টা। বিভা ছাত্রাবাস। মির্জাপুর, রাজশাহী। টিনশেটের এই ছাত্রাবাসটি একদম নতুন। আমরাই তার প্রথম বাসিন্দা। প্রতি রুমে দুইজন করে বোর্ডার মানে ছাত্র থাকে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে কেউ মোমবাতি বা চার্জার লাইটে পড়ছে, কেউ রেডিওতে গান শুনছে, কেউ গিটার বাজাচ্ছে (একজন), কেউ সুরে-বেসুরে গান গাচ্ছে। হঠাৎ আমার রূমের বিপরীত পাশ থেকে (শফিকের রুম থেকে) দ্রুম-দ্রুম শব্দ আসছে।
স্টিলের দরজায় ভারি কিছুর আঘাত। সবাই ছুটে গেলাম শফিকের রুমের সামনে...
গিয়ে দেখি সে একটা কাঠ দিয়ে দরজায় বাড়ি দিচ্ছে। সবাই তাকে ঘিরে ধরলো, প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলো। সে ছিল ভীষণ ক্রুদ্ধ...
তার ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার সংমিশ্রণে সে যা বললো, তার সার সংক্ষেপ হলো- আগামীকাল তার টিউটোরিয়াল, পড়তে হবে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে যেমন গরম আর মশার উৎপাত তেমনি ভয়ঙ্কর উৎপাত এই শব্দদূষণ। তার ভাষ্যে- সবাই যার যার মনের সাধে গান শুনছে, গাইছে, বাজাচ্ছে, তার ইচ্ছা হয়েছে সে ড্রাম/ ঢোল বাজাচ্ছে! "পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রির্সোস"-এর ছাত্র শফিক এর আগে কয়েকজনকে অনুরোধ করেছিল শব্দ যন আস্তে করে, কিন্তু কেউ তার কথা না শোনার কারণে সে ক্ষেপে গিয়ে এই এলাহী কারবার ঘটায়।
প্রায়ই আমরা এমন কিছু করি, যাতে পাশের মানুষের বিরক্তির উদ্রেক হয়, তাদের কষ্ট হয়। সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম। বিশেষ করে মুসলমানদের। এটা পরের হকের আওতায় কবীরাহ গুনাহ। অথচ এই মারাত্মক গুনাহ ইচ্ছাবশত এবং অবলীলায় করে যাচ্ছি। এটাকে তেমন পাত্তাই দিচ্ছি না।
যেমন- পথে চলতে গিয়ে পুরো রাস্তা নিজের দখলে রাখা, সাইড না দেয়া, রাস্তায় ধূলো উড়ানো, চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, প্রকাশ্যে নাক পরিষ্কার, থুথু-কফ-শ্লেমা ফেলা, প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ, কারো ঘুমের সময় বা কাজের সময় শব্দ করা... ইত্যাদি।
যে কোনো প্রকারের দৈহিক বা মানসিক কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা একজন মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমান ষাঠাধিক অথবা সত্তরাধিক শাখাবিশিষ্ট। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ শাখা (কান্ড) হল ‘লা ইলাহা ইলাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন শাখা হল পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দেওয়া….’। (বুখারীর ৯নং সংক্ষিপ্ত, মুসলিম: ১৬২)
আফসোস! রাজনীতির নামে ক্ষমতাশীল ও ক্ষমতাকামীরা যা করে বেড়াচ্ছে! সাধারণ জনগণকে কষ্ট আর দূর্ভোগ দিয়ে ভরিয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেয়া এই সব প্রতাপীদের অবশ্যই আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا﴾ [الاحزاب : ٥٨]
অর্থাৎ "যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।" (সূরা ৩৩ আহযাব: ৫৮)
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ» . متفق عَلَيْهِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার মুখ ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির [দ্বীন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগকারী] সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মসমূহ ত্যাগ করে।’’ (বুখারী: ১০, ৬৪৮৪, মুসলিম: ৪০, সুনানুল কুবরা: ২০১৪৬, নাসায়ী: ৪৯৯৬, আবূ দাউদ: ২৪৮১, আহমাদ: ৬৭৬৭, ৬৭৯৬, ৬৮৭৩, ৭০৪৬ দারেমী:২৭১৬, মু'জামুস সগীর: ৪৩৩) দ্রষ্টব্য: এই হাদীসটি বেলাল ইবনে হারেস ও আবু হুরাইরা রা. সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে)
তাবারানীর মু'জামুল আওসাতে এসেছে " সর্বোত্তম ইসলাম/ মুসলিম হলো সে-ই যার হাত ও যবান থেকে মানুষ নিরাপদ" (মু'জামুল আওসাত:৩১৯৪, মুসনাদে আহমাদ:৬৭১৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমরাত, হা: ১৮৪৭/৩৪৩৭, নাসায়ী: ৪১৯১, আবূ দাউদ: ৪২৪৮)
আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও হেদায়াত দান করুন। পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতা বাড়িয়ে দিন ও আমাদের এইসব গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
৮৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন