দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মা'জুজ কোনো উপমা বা সভ্যতার নাম নয়: (সহীহ হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৪৪:৫৪ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মা'জুজ কোনো উপমা বা সভ্যতার নাম নয়: (সহীহ হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ)

আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক মাসীহে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। মাসীহে দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই।

দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মু’মিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। তার কাছে কিছু অলৌকিক বিষয় ও স্বতন্ত্র ক্ষমতা থাকবে যাতে সে মানুষদের বিভ্রান্ত করতে পারে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে।



দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত থাকলেও আমি এখানে শুধু সেই বর্ণনা তুলে ধরবো যাতে বুঝা যায়, মাসীহে দাজ্জাল কোনো সভ্যতার নাম নয়, সে রক্ত মাংসেরই মানুষ।



কিছু অর্ধ শিক্ষিত, মূর্খ, জ্ঞানপাপী এবং পথভ্রষ্ট পার্থিববাদীরা দাবি করে থাকে দাজ্জাল কোনো মানুষ নয় সে আধুনিক সভ্যতার নাম।



নিচে তাদের দাবীর অসারতা প্রমাণ করবো, যারা সহীহ হাদীস মানতে চায় তাদের জন্য হবে তা শিক্ষামূলক। আর যারা হাদীস মানে না তাদের ব্যাপার স্বতন্ত্র, কেননা কুরআনে দাজ্জাল সম্পর্কে কোনো বর্ণনা নেই। সুতরাং দাজ্জালের বিষয়টি মানলে তাকে মানুষই মনে করতে হবে যার শারীরীক বর্ণনা রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের দিয়ে গেছেন।

হাদীস:

عن سالم بن عبد الله أن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال قا

رسول الله صلى الله عليه وسلم في الناس فأثنى على الله بما هو أهله ثم ذكر الدجال فقال إني لأنذركموه وما من نبي إلا وقد أنذره قومه ولكني سأقول لكم فيه قولا لم يقله نبي لقومه إنه أعور وإن الله ليس بأعور

সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ সূত্রে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে কথা বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাকে সতর্ক করছি। এমন কোন নাবী নেই তিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন নি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলব যা কোন নাবী তার কাওমকে বলেন নি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ তাআলা অবশ্যই কানা নন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হা/নং-৬৭০৮, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক:২০৮২০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৫৭, তিরমিযী:২২৩৫, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৫৫৯১)



দাজ্জাল হবে রক্ত-মাংসের মানুষ:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ يَنْطُفُ ـ أَوْ يُهَرَاقُ ـ رَأْسُهُ مَاءً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ‏.‏ ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ جَسِيمٌ أَحْمَرُ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ‏.‏ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ ‏"‏‏.‏ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ

আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কা'বা তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যাক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙুরের ন্যায়। লোকেরা বলল এ-হল "দাজ্জাল"! তার সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ন লোক হল ইবনু কাতান, বনী খুযা'আর এক ব্যাক্তি। (সহীহ বুখারী: কিতাবুল ফিতান, হা:৬৭০৯, সহীহ মুসলিম: ১৬৯, মুসনাদে আহমাদ: ৪৭২৯, মু'জামুল আওসাত:৯১৬০)

আল্লাহর রাসূল স. বলেন-

"দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি।" তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।

এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ'জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।

অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু'ফাঁক করে ফেলবে। অতঃপর সে পুনরায় তাকে ডাকবে। যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই ফিরিশতার কাঁধের উপর ভর করে লাল-গোলাপী (জাফরানী) রং এর জোড়া পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শ্বেত মিনারের উপর অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদুর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে লুদ নামক আরণ্যের কাছে পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন। তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। (সহীহ মুসলিম, ফিতনা অধ্যায়: ২৯৩৭, তিরমিযী:২২৪০, আবু দাউদ:৪৩২১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের পিতা-মাতার ত্রিশ বছর পর্যন্ত কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে না। তারপর একটি কানা ছেলে জন্ম নেবে। সে হবে খুবই ক্ষতিকর এবং অত্যন্ত অনুপকারী। তার দুই চোখ ঘুমালেও তার অন্তর ঘুমাবে না।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকটে তার পিতা-মাতার বিবরণ দিলেন। তিনি বললেনঃ তার পিতার দৈহিক আকৃতি হবে লম্বাটে, হালকা-পাতলা গড়নের এবং তার নাকটা হবে পাখীর ঠোটের মত লম্বা। আর তার মা হবে স্থূলকায়, মোটা ও লম্বা হস্তবিশিষ্টা। (তিরমিযী:২২৪৮, মুসনাদে আহমাদ: ১৯৯৯০৫, ১৯৯৯০:ফাতহুল বারী: ৬৯২২ নং হাদীস আলোচনা)

উবাইদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি লোকদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট দাজ্জাল সম্পর্কে বহুবার বর্ণনা করেছি। কারণ আমি আশংকা করছি, তোমরা বুঝতে পারছো কি না? নিশ্চয়ই মাসীহ দাজ্জাল হবে বেটে, মুরগীর পা বিশিষ্ট ও কঞ্জিত কেশধারী, এক চোখবিশিষ্ট আলোহীন এক চোখধারী যা বাইরের দিকে ফোলাও নয়, আবার কোঠরাগতও নয়। যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে তবে জেনে রাখো, তোমাদের রব কানা নন। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ:৪৩২০)



জাস্সাসাহর ঘটনা:

ফাতিমাহ বিনতু কাইস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে ‘ইশার সালাত পড়তে বিলম্ব করলেন। তিনি (ঘর থেকে) বেরিয়ে এসে বললেনঃ তামীম আদ-দারী আমার নিকট যে ঘটনা বর্ণনা করেছে সেটিই আমাকে আটকে রেখেছে। সে সমুদ্রের উপদ্বীপের জনৈক ব্যক্তির সূত্রে আমাকে বলেছে, হঠাৎ আমি একটি স্ত্রীলোককে দেখতে পেলাম যে, সে তার চুল টানছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কে? সে বললো, আমি গুপ্তচর, তুমি ওই প্রসাদে যাও। অতঃপর আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, জনৈক ব্যক্তি তার কুঞ্চিত কেশ টানছে, সে মজবুত শিকলে বাঁধা অবস্থায় আকাশ ও যমীনের মাঝখানে ছটফট করছে। আমি বললাম, তুমি কে? সে বললো, আমি তো দাজ্জাল। নিরক্ষরদের নবী এখন আবির্ভূত হয়েছেন কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বললো, লোকেরা তাঁকে মান্য করছে নাকি অমানস্য করছে? আমি বললাম, তারা বরং মান্য করছে। সে বললো, এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম: ২৯৪২, আবু দাউদ:৪৩২৫, তিরমিযী: ২২৫৩ সহ মুজামুল কাবীর, আওসাত, মুসনাদে আহমাদ, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ প্রমূখ)

ইবনু সাইয়্যাদ:

দাজ্জাল যে রক্ত মাংসের মানুষ এবং সে ইয়াহুদী বংশের হবে তার প্রমাণ হলো, রাসূলের যমানায় ইবনু সাইয়্যাদ নামক এক ইয়াহুদী বালককে দাজ্জাল বলে সন্দেহ করা হতো, যদি দাজ্জাল কোনো উপমা বা সভ্যতার নাম হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবীদের পরিষ্কার করে বলে দিতেন, তোমরা তাকে সন্দেহ করো না কেননা দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়। ইবনু সাইয়্যাদের আলোচনা বুখারী, মুসলিম সহ সমস্ত হাদীসের কিতাবে আছে।

দাজ্জালের চোখ হবে কানা: কোন হাদীছে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদীছে আছে তার ডান চোখ কানা হবে। আবার কোন হাদীছে আছে তার বাম চোখ হবে কানা। মোটকথা তার একটি চোখ নষ্ট হবে।

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ) আমার মনে হয় তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "দাজ্জালের ডান চক্ষুটি কানা হবে, যেন তা ফোলা আঙ্গুরের ন্যায়।" (বুখারী: ৬৭০৫)

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। শোন! দাজ্জালের ডান (চোখ) কানা হবে। তার চোখ যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে। (সহীহ মুসলিম:১৬৯, তিরমিযী:২২৪১)

দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃ

দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের كافر)) লেখা থাকবে।[সহীহ বুখারী:৬৭১২] অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে(ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[মুসলিম:২৯৩১-৩৩, তিরমিযী:২২৪৫ ফিতনা অধ্যায়]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের চক্ষু বিকৃত হবে। তার চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে كَافِرٌ (কাফির) লেখা থাকবে। পরে তিনি 'বানান' করে বলেন, ك ف ر প্রত্যেক মুসলমানই তা পাঠ করতে পারবে। (মুসলিম: ২৯৩৩/৫২২১ ফিতনা অধ্যায়)

হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি দৃশ্যত সাদা পানি এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নি মনে হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত আগুন মনে হবে এবং (এই) চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন তা থেকে পানি পান করে। তা হবে ঠাণ্ডা পানি। দাজ্জালের এক চোখ বিকৃত হবে এবং তার চোখের উপরে ঝুলন্ত চামড়া থাকবে এবং দুই চোখের মাঝখানে كَافِرٌ অথবা ك ف ر লেখা থাকবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি তা পাঠ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম, ফিতনা অধ্যায়: ২৯৩৪)

দাজ্জালের ধ্বংস:

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান হলো ঈয়ামানে, কুফর হলো প্রাচ্যে, বকরীওয়ালাদের মধ্যে আছে শান্তি এবং উচ্চঃস্বরে চিৎকারকারী ঘোড়াওয়ালা ও উটওয়ালাদের মধ্যে আছে গৰ্ব-অহংকার ও প্রদর্শনেচ্ছা। দাজ্জাল মাসীহ আত্মপ্রকাশ করে যখন উহুদের পিছনে উপস্থিত হবে, ফিরিশতারা তখন তার মুখমণ্ডল (চলার গতি)-কে সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। আর সে ঐ স্থানেই ধ্বংস হবে। (তিরমিযী:২২৪৩)

তিনি আরো বলেন-

ঈসা (আঃ) 'লুদ্দ’-এর দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। (তিরমিযী:২২৪৪, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৫২৮, ১৮৯৮৪, মু'জামুল কাবীর, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

উপসংহার: রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবীদের যামানার ইবনে সাইয়্যাদের আলোচনা ও জাসসাসাহর ঘটনা থেকে সুষ্পষ্ট যে, দাজ্জালকে আল্লাহর নবী উপমা হিসেবে ব্যবহার করেন নি। সুতরাং একমাত্র মিথ্যুকরাই তার সম্পর্কে বানোয়াট ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারে নিজেদের স্বার্থে। যেমনটা কাদিয়ানীরা করে থাকে মির্যাকে মাহদী প্রমাণের জন্য, বায়জিদ খান পন্নী বলে থাকে নিজেকে যামানার ইমাম প্রমাণে। এরা সবাই যামানার মিথ্যুক।

যুগে যুগে মিথ্যাবাদী দাজ্জালদের আগমন:



عَنْ أَبِي، هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ ‏"‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব হয়। আবির্ভাবের পর তারা প্রত্যেকেই দাবী করবে, সে আল্লাহর রাসুল। (সহীহ মুসলিম: অধ্যায়:ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হা: ১৫৭/ ৫২০৭, মু'জামুস সাগীর তাবারানী: ৯৫৩, তিরমিযী: ২২১৮, মুসনাদে আহমাদ: ২৭৩৫৪, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, ভিন্ন শব্দে বুখারী: ৬৭০৪ কিতাবুল ফিতান)

ক্রমশ:( পরবর্তীতে ইয়াজুজ মা'জুজ সম্পর্কে)

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File