সৎলোকদের সহচর্য ও জামাতবদ্ধতা নিয়ে আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৩২:৫৯ রাত

সৎলোকদের সহচর্য ও জামাতবদ্ধতা নিয়ে আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সৎলোকদের সাথে থাকা:

আল্লাহ বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ

الصَّادِقِينَ

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। (সূরা ৯ তাওবাহ:১১৯)


আমাদের সত্যবাদী তথা রাসূলুল্লাহ সা. ও তার সাহাবীদের সাথে (পরবর্তীতে সৎলোকদের সাথে তথা প্রকৃত মুসলমানদের সাথে) থাকতে বলা হয়েছে। এই আয়াতের মাধ্যমে অনেকে একজন পীরের মুরীদ হওয়ার দলিল গ্রহণ করে আর তাদের হাতে বাইয়্যাতকে "আল্লাহর হাতে বাইয়াত" বলে আখ্যায়িত করে। অথচ এখানে শব্দটি বহুবচন অর্থ্যাৎ সত্যবাদীদের সাথে থাকতে বলা হয়েছে। আর সত্যবাদী একজন সত্যিকারের মুসলমান।

হাদীস:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الْعَبْدُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا ‏"

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তা’আলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোন বান্দাহ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। (বুখারী: ৫৭৪৩, মুসলিম: ২৬০৭, তিরমিযী: ১৯৭১, আবু দাউদ:৪৯৮৯, সুনানুল কুবরা:২০২১১)

অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন-

وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُ

“তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে (সূরা কাহফ:২৮)

হাদীস:

عن أبي موسى عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً»

আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’ (বুখারী:১৯৯৫,৫২১৪, মুসলিম:২৬২৮)



এ সমস্ত আয়াত ও হাদীসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৎলোক তথা ভালো লোকদের সাথে থাকা, তাদের সাহচর্য ও ভালোবাসা এবং প্রত্যেক পরহেজগার ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখা- দুআ নেয়া ইত্যাদি। কেননা কথায় সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। শতখুনের হাদীসে দেখতে পাই- যেখানে ঐ খুনীকে এমন স্থানে যেতে বলা হয়েছে যেখানে ইবাদতকারী রয়েছে আর তার দেশকে বলা হয়ে মন্দ"(দ্রষ্টব্য:মুসলিম ২৭৬৬)

সুতরাং আসুন পীর ধরা নয়, মুত্তাকি আলেম ও নেককারদের সংস্পর্শে যাই, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি ও মুসলমানদের সাথে থাকি এক্যবদ্ধভাবে।



জামাতবদ্ধতা:

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জামা‘আত (দল) হতে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি (বন্ধন) তার গলা হতে খুলে ফেলেছে। (আহমাদ: ২১০৫১, আবূ দাঊদ: ৪৭৫৮)

وَيَدُ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ আল্লাহ তা‘আলার হাত (রহমাত ও সাহায্য) জামা‘আতের উপর রয়েছে। (তিরমিযী: ২১৬৭)



জামাতবদ্ধতা বা সংগঠিত থাকা মুসলমানদের কর্তব্য। আর এই কথাটি অনেকে ভুলভাবে গ্রহণ করে নিজেরা বিভিন্ন দলে-উপদলে, সংগঠনে বিভক্ত হয়েছেন আর এই উম্মাহকে দলে দলে বিভক্ত করে ভুল পথে চালিত করছেন। দলে দলে বিভক্ত হওয়া খুবই জঘন্য এবং এটি কেয়ামতের একটি লক্ষণ! যেমন হাদীসে এসেছে-

"আমার উম্মাত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকবে।" (তিরমিযী:২৬৪১)

জামাতবদ্ধতা হলো "মুসলিম জামাত"। নিজেদের মাঝে ঐক্যবদ্ধতা রক্ষা করা।আল্লাহ বলেন:-

"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।" (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)



"আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।" (সূরা আলে ইমরান: ১০৫)



আসুন সামান্য ভেদাভেদ (ফিকহী বা মাযহাবগত অথবা পার্থিব দ্বন্দ্ব) ভুলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর ভিত্তিতে মুসলিম সমাজে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস করি।

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

৭৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File