ইলমের মর্যাদা: (দরসে হাদীস)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৪:১২:১০ রাত

বিসমিল্লািহির রাহমানির রাহীম

ইলমের মর্যাদা: (দরসে হাদীস)

عَنْ كَثِيرِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ أَبِي الدَّرْدَاءِ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ إِنِّي جِئْتُكَ مِنْ مَدِينَةِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم لِحَدِيثٍ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَدِّثُهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا جِئْتُ لِحَاجَةٍ ‏.‏ قَالَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‏"‏ ‏.‏

কাছীর ইবন কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি দামেশকের মসজিদে আবূ দারদা (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলেঃ হে আবূ দারদা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শহর মদীনা থেকে আপনার নিকট একটা হাদীছ শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি উক্ত হাদীছটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। এছাড়া আর কোনো কারণে আমি এখানে আসি নি। তখন আবূ দারদা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ

যে ব্যক্তি ইলম (কুরআন ও হাদীছের জ্ঞান) হাসিলের জন্য কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহের মধ্যে একটি রাস্তা অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা তালেবে-ইলম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলিমের জন্য আসমান ও যমীনের সব কিছুই মাগফিরাত কামনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবিদের উপর আলিমের ফযীলত এরূপ, যেরূপ পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। আর আলিমগণ হলেন, নবীদের ওয়ারিছ, এবং নবীগণ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও দিরহাম (রৌপ্যমূদ্রা) মীরাছ হিসাবে রেখে যান না, বরং তাঁরা রেখে যান-ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।

সূত্র: সুনানে আবু দাউদ( কিতাবুল ইলম):৩৬৪১, সুনানে দারেমী: ৩৪২, তাছাড়া কমবেশি শব্দে- সুনানে ইবনে মাজাহ:২২৩, তিরমিযী: ২৬৮২, মুসনাদে আহমাদ:২১২০৭, সহীহ ইবনে হিব্বান:৮৮,বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:৩৪৭, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবাহ:৪৭, মু'জামু ইবনুল আরাবী:১৬০৯, শু'আবুল ঈমান লিল বাইহাকী:১৫৭১-৭২,

শরহে সুন্নাহ:১২৯, তারিখে বাগদাদ:২২৮৬/২৯১, আল জারহু ওয়া তা'দীল:৭১, কিতাবুল ইলম (আবু তাহের সালাফি):৩৭-৪০ এ ছাড়া আরো ২০টির মতো কিতাবে এই হাদীসটি এসেছে।


আলোচনা: ইলম তথা শরীয়াতের জ্ঞানার্জনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলেন-

"যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পেছনে ফেলে রাখবে, তার বংশ-গরিমা তাকে এগিয়ে দেবে না।" (সুনানে আবু দাউদ:৩৬৪৩, সুনানে দারেমী:৩৪৪, আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন লিল হাকেম:৩০৬)

অপর হাদীসে-

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ‘ইলম (বিদ্যা) হাসিল করার জন্য কোন পথ ধরবে, আমি তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিব। আর যে ব্যক্তির দুই চোখ আমি নিয়ে নিয়েছি, তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করব। ‘ইবাদাতের পরিমাণ বেশি হবার চেয়ে ‘ইলমের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। দীনের মূল হলো তাক্বওয়া তথা হারাম ও দ্বিধা-সন্দেহের বিষয় হতে বেঁচে থাকা। (বাইহাকী:৫৩২৪,সহীহুল জামি‘: ১৭২৭, মিশকাত:২৫৫)

ইলম অন্বেষণকারীর জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন:

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له طريقا إلى الجنة

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ:৮১১৭,৭৩৭৯, সহীহ মুসলিম:২৬৯৯, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ:৩৫৯৯, মুসতাদরাক লিল হাকেম:১৩৩, সুনানে ইবনে মাজাহ:২২৫

আকাশ ও দুনিয়াবাসীর দুআ:

আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এদের একজন ছিলেন ‘আবিদ (‘ইবাদাতকারী), আর দ্বিতীয়জন ছিলেন ‘আলিম (জ্ঞান অনুসন্ধানকারী)। তিনি বললেন, ‘আবিদের ওপর ‘আলিমের মর্যাদা হলো যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির ওপর। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ‘ইলম শিক্ষাকারীর জন্য দু‘আ করে। (তিরমিযী: ২৬৮৫, সহীহুত্ তারগীব: ৮১, তাবারানী:৭৯১১, মিশকাত:২১৩)



জ্ঞানের সাথে সুচরিত্র জরুরী:

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের মধ্যে দু’টি অভ্যাস একত্র হতে পারে না- নেক চরিত্র ও দীনের সুষ্ঠু জ্ঞান।(তিরমিযী, মিশকাত:২১৯)



আল্লাহ বলেন.



قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

বলুন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’(সূরা যুমার:৯)



মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্ত্তত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দান করেন। (বুখারী:৭১, মুসলিম:১০৩৭)

আল্লাহর পথে থাকা:



আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য বের হয়েছে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই রয়েছে। (তিরমিযী:২৬৪৭, মু'জামুস সাগীর তাবারানী:১৩৬, মিশকাত:২২০



আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যখন মারা যায় তখন তার ‘আমাল বন্ধ (নিঃশেষ) হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি ‘আমালের সাওয়াব (অব্যাহত থাকে): (১) সদাক্বায়ি জারিয়াহ্, (২) জ্ঞান- যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং (৩) সুসন্তান- যে তার (পিতা-মাতার) জন্য দু‘আ করে। (মুসলিম:১৬৩১)

আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً ‏"‏ ‏.

হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক ও এবং কবূল হওয়ার যোগ্য কর্মতৎপরতা প্রার্থনা করি।



সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File