ধর্মীয় ব্যাপারে বিতর্ক ও বিতন্ডা উম্মাহর জন্য অকল্যাণ: (দরসে হাদীস)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৩:৩৭:২২ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ধর্মীয় ব্যাপারে বিতর্ক ও বিতন্ডা উম্মাহর জন্য অকল্যাণ: (দরসে হাদীস)
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "হিদায়াত প্রাপ্তির পর কোনো জাতি পথভ্রষ্ট হয় না, যতক্ষণ না তারা (ধর্মীয়)বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।" অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন-
ما ضَرَبُوهُ لَكَ إِلاَّ جَدَلاً بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
(অর্থঃ) ‘‘তারা বাক-বিতণ্ডা করার উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার নিকট তা উত্থাপন করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে বাক-বিতণ্ডাকারী লোক’’- (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩: ৫৮)।
(সূত্র: আহমাদ: ২১৭০১, মুসতাদরাক হাকেম:৩৭২৬, তিরমিযী:৩২৫৩ ও ইবনু মাজাহ্:৪৮, মু'জামুল কাবীর: ৮০৬৭)
আলোচনা:
কোনো জাতির কুফুরীতে নিমজ্জিত হওয়া বা পথভ্রষ্টতার কারণ হলো "বিতন্ডা তথা ধর্মীয় ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করা"। যেমন- নবীদের সাথে অন্যায় ভাবে বিতন্ডায় জড়ানো, তাদের কাছে মু'জিযা দাবি করা একগুঁয়েমির সাথে।
মক্কার মুশরিকদের ব্যাপারে যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো-
" তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।" (২১:৯৮) তখন তারা প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, খৃষ্টান, ইয়াহুদী বা অন্যান্য জাতি যারা ঈসা (আঃ), উযায়র, ফিরিশতা ও বহু সৎলোকদেরও তো ইবাদত করে থাকে, তাহলে তাদের মূর্তির মতো এরাও কি তাদের ইবাদতকারীর সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে? আল্লাহ বলেন-
"নিশ্চয়ই যাদের জন্য আমার নিকট থেকে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা (জাহান্নাম) হতে দূরে রাখা হবে।" (২১:১০১)
আয়িশাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন-هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ.... (অনুবাদ) "তিনি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলো কিতাবের মূল অংশ, আর অন্যগুলো রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লঙ্ঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই বিশৃঙ্খলা ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশে যা রূপক তার অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ তার ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম, সমস্তই আমাদের রবের নিকট থেকে আগত। বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যাক্তিগণ ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না"- (সূরাহ আল ইমরান ২ঃ ৭)। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আয়িশাহ! যখন তুমি তাদেরকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বাদানুবাদ করতে দেখবে, তখন মনে করবে যে, এরা সেই লোক যাদের আল্লাহ অপদস্থ করেন। তোমরা তাদের পরিহার করো। (বুখারী:৪২৭৩, মুসলিম: ২৬৬৫)
নিজের জ্ঞানকে জাহির করা বা নিজেদের মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যারা বাক-বিতন্ডায় জড়ায় তারাই পথহারা হয়।
যেসব ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে সেসব বিষয়ে অনর্থক বিতর্কতা এড়িয়ে চলাই উম্মাহর জন্য কল্যাণ। আল্লাহ আমাদের এমন বিতর্ক ও বিতন্ডা থেকে দুরে রাখুন। আমীন!!
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
বিষয়: সাহিত্য
৬২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন