দরসে হাদীস (অমুখাপেক্ষিতা): উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৩:৪৪:৫৫ রাত

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ أُنَاسًا مِنَ الأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يَسْأَلْهُ أَحَدٌ مِنْهُمْ إِلاَّ أَعْطَاهُ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُمْ حِينَ نَفِدَ كُلُّ شَىْءٍ أَنْفَقَ بِيَدَيْهِ ‏ "‏ مَا يَكُنْ عِنْدِي مِنْ خَيْرٍ لاَ أَدَّخِرْهُ عَنْكُمْ، وَإِنَّهُ مَنْ يَسْتَعِفَّ يُعِفُّهُ اللَّهُ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللَّهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ، وَلَنْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ ‏"‏‏.‏

বাংলা: যুহরী রহ. আতা ইবনে ইয়াযিদ সূত্রে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাঁর কাছে যা কিছু ছিল তা শেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু'হাত দিয়ে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে যা কিছু মালামাল থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। কেউ সওয়াল থেকে পবিত্র থাকতে চাইলে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন; আর যে ব্যাক্তি ধৈর্য ধারণ করে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী রাখেন। সবর/ধৈর্য অপেক্ষা বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কস্মিনকালেও তোমাদেরকে দান করা হবে না।

সূত্র:

হাদীসটি এসেছে- সহীহ বুখারী (কিতাবুর রিকাক:৬১০৫) যাকাত অধ্যায়: ১৪০০, সহীহ মুসলিম (যাকাত অধ্যায়):১০৫৩, আবু দাউদ (কিতাবুযযাকাত):১৬৪৪, তিরমিযী (কিতাবুল বিররি ওয়াসসিলাহ):২০২৪, সুনানুল কুবরা (বাইহাকী):৭৬৭২, সুনানে দারেমী (কিতাবুযযাকাত):১৬৪৬, সুনানে নাসাঈ: ২৫৮৮, মুসনাদে আহমাদ:১১৪৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক:২০০১৪, মুওয়াত্তা (ইমাম মালেক):১৮৮০



হাদীসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রথমত: যে সন্তুষ্ট থাকতে চায় (পরের কাছে প্রার্থিত হতে কুন্ঠিত হয়) আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট রাখেন।



পরের কাছ হাত পাতা বা ভিক্ষা চাওয়া অন্যুনুপায়ে বৈধ হলেও অনবরত তা করা বৈধ নয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে চাওয়া অপেক্ষা অনেক ভাল, চাই সে দিক বা না দিক। (বূখারী, যাকাত অধ্যায়)



হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উপরের হাত (দাতার হাত) নীচের হাত (গ্রহীতার হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দিবে যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তুমি বহন কর। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হতে সদাকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা হতে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা হতে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। (বুখারী:১৩৬১)

মু‘আবিয়া (রাঃ) মুগীরা ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ)-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ হতে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাঁর কাছে লিখলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- (১) অনর্থক কথাবার্তা, (২) সম্পদ নষ্ট করা এবং (৩) অত্যধিক সওয়াল করা। (বুখারী, যাকাত অধ্যায়)



দ্বিতীয়ত: যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায় (ধন-সম্পদ ও দৈহিকভাবে) আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন।



তৃতীয়ত: যে ধৈর্য ধারণ করে (আল্লাহ যা দিয়েছেন তার উপর) আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল রাখেন। তারপর বলা হয়েছে, ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত (ব্যাপক) কিছু দান করা হয় নি। এখানে ধৈর্য বা সবরের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-

"ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক" (আল মুসতাদরাক:৩৭১৮)



আল্লাহ বলেন-

وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ ۗ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

"আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।" (সূরা ৩৯ যুমার:১০)

আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!!

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: বিবিধ

৭৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384537
০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:০৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : খুবই ভালো লাগছে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নিয়মিত লেখা চালিয়ে যান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File