সূরা ১৬ নাহলের ৯০ নম্বর আয়াত: কুরআনের যাবতীয় আয়াতের শিক্ষা (কুরআনের ব্যাপক অথর্বোধক একটি আয়াত)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ৩০ জুলাই, ২০১৭, ০৩:৩৮:০৩ রাত
কুরআনের ব্যাপক অর্থবোধক তথা কুরআনের সার সংক্ষেপমূলক একটি আয়াত! যা অনুধাবন করতে পারলে এবং বাস্তবজীবনে কার্যকর করলে মানুষের পার্থিব কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি অনিবার্য!
আল্লাহ বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। (সূরা ১৬ নাহল:৯০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি নির্দেশ দিচ্ছেন তিনটি বিষয়ের প্রতি আর নিষেধও করছেন তিনটি বিষয় থেকে। যাতে রয়েছে বান্দাহর জন্য যাবতীয় দিক-নির্দেশনা।
১. আদল তথা ন্যায়পরায়ণতা: যার অর্থ হলো যাবতীয় ক্ষেত্রে সুবিচার এবং যথাযথ ব্যবহার। যেমন- ব্যক্তিগতভাবে মানুষের সাথে যথাযথ আচরণ ও ব্যবহার করা, পারিবারিকভাবে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। তেমনি ভাবে বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকদের সুবিচার, শাসনের ক্ষেত্রে নেতা/ শাসকদের ন্যায়পরায়ণতা। এর আরেকটি অর্থ হলো " মধ্যমপন্থা" অবলম্বন করা। দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় পর্যায়ে বাড়াবাড়ি না করা।
কারো মতে, আদল মানে হলো যাবতীয় ফরয আদায় করা। সুতরাং আদল হলো ফরয আর ইহসান হলো নফল।
২. "ইহসান" বা সদাচারণ: এর একটি অর্থ হলো- দয়া করা, ক্ষমা করা। দ্বিতীয় অর্থ হলো- প্রাপ্য অধিকারের চেয়ে বেশি দেয়া।
যেমন কোন শ্রমিকের পারিশ্রমিক ঠিক হয়েছে একশত টাকা, কিন্তু দেওয়ার সময় একশত দশ বা বিশ টাকা দেওয়া। একশত টাকা দেওয়া এটি ওয়াজেব (প্রাপ্য) অধিকার, আর এটাই সুবিচার, আর দশ বিশ টাকা বেশি দেওয়া এটাই হল এহসান বা অনুগ্রহ। তেমনি ভাবে বিচার ও প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাদীর পক্ষ থেকে ইহসান। প্রতিশোধের ক্ষেত্রে যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে ততটুকুই প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ আর ক্ষমা করা দেয়াটা ইহসান! যেমন আল্লাহ বলেন-
"মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। আর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস-নিস্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।" (সূরা ৪২ শূরা:৪০)
ইহসানের তৃতীয় অর্থ হলো- ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা ও তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে- أن تعبد الله كأنك تراه (আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ)
৩. আত্মীয়তার হক আদায় তথা আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা। আল্লাহ অন্যত্র বলেন-
"তুমি আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য প্রদান করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। (সূরা ১৭ ইসরা:২৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না।(বুখারী: ৫৬৩৮, মুসলিম: ২৫৫৬, তিরমিযী: ১৯০৯, আবু দাউদ:১৬৯৬)
৪. ফাহেশা তথা অশ্লীলতা: যাবতীয় অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে আল্লাহ নিষেধ করছেন। আজকাল অশ্লীলতার নামই যেন সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রগতি ও শিল্পকলা হয়ে গেছে। আফসোস!
পর্দাহীনতা, ফ্যাশন-প্রবণতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নাচ-গান, উদ্ভট উৎসব বা মেলা কিংবা অনুরূপ যাবতীয় অশ্লীল কাজই আজ দেদারসে চলছে স্বাধীনতা ও সভ্যতার নামে আর ঘটছে নানান দূর্ঘটনা। এখানে লজ্জাহীনতা প্রদর্শনকে অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছে, তার নাম যত সুন্দরই হোক না কেন।
অশ্লীলতা সকল পাপের পথ খুলে দেয় আর অশ্লীলতার দ্বার খুলে পর্দাহীনতা (নারী-পুরুষের)..
৫. মুনকার: (গর্হিত) প্রত্যেক সেই কাজ, যা শরীয়তে অবৈধ। এখানে সকলপ্রকার হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
"বলুন, ‘আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে..." (৭: ৩৩)
৬. সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ি না করা: بغي অর্থ অত্যাচার ও সীমালংঘন করা। একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ও অত্যাচার করা এই দুই পাপ মহান আল্লাহর নিকট এত ঘৃণিত যে, আল্লাহর পক্ষ হতে পরকাল ছাড়া পৃথিবীতেই তার তৎক্ষণাৎ শাস্তির আশংকা থেকে যায়। (ইবনে মাজাহ কিতাবুয যুহদ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন-إن أجمع آية في القرآن في سورة النحل : ( إن الله يأمر بالعدل والإحسان ) নিশ্চয়ই কুরআনের যাবতীয় আয়াত জমা করা হয়েছে সূরা নাহলের এই আয়াতে... (তাবারী: ১৭/২৮০)
(দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে কাসীর, কুরতুবী)
আজ মুসলমান যদি কুরআনের এই একটি আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতো তাহলে মুসলিম সমাজটাই বদলে যেতো আর পুরো বিশ্ব ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শান্তির ছায়াতলে আশ্রয় নিত। ক্ষমতা আর স্বার্থের চক্রে পরে মুসলমানরা আজ বিপর্যস্ত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন ও ইসলামী আদর্শ ছাড়া বাকি সব আদর্শ ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন