ইসলামী সংগঠন ও মানুষদের আল্লাহর দিকে ডাকা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৪ জুলাই, ২০১৭, ০২:৩৫:৪৪ রাত
শেষবিকেলে দুইজন বসে কথা বলছিলাম, দুইজন (বাঙ্গালি এবং কয়েকবার সামনে দিয়ে ইতস্ততঃ হাঁটাহাঁটি করে) এসে হাতের ফাইল থেকে দুটি লিফলেট (manifesto জাতীয়) ধরিয়ে একজন বলতে লাগলেন-
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَঅর্থ্যাৎ তারা একটা (ইসলামের কল্যাণের স্বার্থে) সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছেন এবং তাদের সংগঠনের দিকেই ডাকছেন! ছোটবেলা থেকেই এরকম বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে "পরিচিতি" ও "সদস্য ফরম" পেতাম এবং কখনো তাদের জোরাজুরিতে ফরম পূরণ করে সদস্যও হতাম! (বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে যেতাম, তাদের কথা শুনতাম কিন্তু কখনোই সক্রিয় ছিলাম না)
(আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’?) -সূরা ৪১ ফুসসিলাত:৩৩
মাথা নিচু করে ওর কথা শুনছিলাম!(নিজেদের মনে হচ্ছিল অমুসলিম) অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু বলতে পারি নি, ভদ্রতার কারণে কাজের অজুহাতে পাশ কাটালাম বটে।
ইসলামী সংগঠন:
দেশ-বিদেশে এমন অসংখ্য সংগঠন রয়েছে যারা নিজেদের হকপন্থী এবং ইসলামের খাঁটি জামাত বলে দাবি করে। এর মাঝে কোনোটি রাজনৈতিক আবার কোনোটি নিজেদের অরাজনৈতিকপন্থী বলে দাবি করে। প্রত্যেকেই উপরোক্ত আয়াত দিয়ে নিজেদের সংগঠনের দিকে মুসলমানদের আহ্বান জানায়!
যারা নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে তারা শুধু (মুসলমানদের) ব্যক্তিগত কিছু ইবাদতের দিকেই আহ্বান জানায় আর বলে আমরা ইসলামের খেদমত করছি বা দাওয়াতি কাজ করছি কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র যে তাগুতের ইবাদত হচ্ছে তার ব্যাপারে কোনো কথা নেই বরং এরা তাগুতকেই সমর্থন করছে। এরা আল্লাহর ইবাদত করছে শুধু মসজিদে আর ঘরে-বাইরে ইবাদত করছে মানুষের।
অপরদিকে নিজেদের যারা রাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করে রাষ্ট্রে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের কথা বলে তারাও আছে ঝুঁকির মধ্যে। যদিও কুরআন -সুন্নাহতে সংগঠন বা দল করার কথা নেই বা "দ্বীন কায়েম" মানে ইসলামী হুকুমত(রাষ্ট্র) কায়েম নয়। বরং প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয হচ্ছে- ইসলামের প্রতিটি বিধানের প্রতি আনুগত্যশীল থাকা। যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। কেননা প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিগ্যাসা করা হবে।(দ্রষ্টব্য:-বুখারী:২৪৯১, মুসলিম:৩৪০৮)
আল্লাহ তাআ'লা যেখানে বলছেন-
"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। " (সূরা ৩ আলে ইমরান:১০৩)সেখানে আমরা মুসলমানদের বিভক্তির পথে ডাকছি, নিজেদের একমাত্র সঠিক দাবি করে অন্যদের বাতিল বলে গণ্য করছি। আফসোস! আল্লাহ আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলছেন আর দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন! (সূরা ৩ আলে ইমরান:১০৫) আজ আমরা কুরআনের দাবিকে পাশ কাটিয়ে কুরআনের পথে মানুষকে ডাকছি?...
আমাদের পরিচয়:
মূলত সবই নিজেদের জাগতিক কল্যাণের ধান্দা। দল বা সংগঠন ছাড়াই সকল মুসলমানকে নিজেদের ভাই মনে করে মুসলমানদের মাঝে সংশোধনের দাওয়াত আর অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দিতে পারি। আমাদের একমাত্র (রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, সাংগঠনিক বা ব্যক্তিগত)পরিচয় আমরা হলো "আমরা মুসলমান"! আক্বীদাগত ও আমলের বিশুদ্ধতায় (পূর্ববতী সৎকর্মশীলদের দাবিতে) আমরা "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত"-এর অনুসারী। এর বাইরে আমাদের আর কোনো পরিচয় নেই।
আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা:
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (০) وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
"এবং তোমাদের মধ্যে এরূপ এক সম্প্রদায় হওয়া উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে এবং সৎ কাজে আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে, আর তারাই সুফল প্রাপ্ত হবে।
এবং তাদের মতো হয়োনা যাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে ও পরস্পর মতভেদে লিপ্ত রয়েছে; তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।" (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১০৪-১০৫)
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ
"নিশ্চয়ই যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের প্রভু’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’। (সূরা ৪১ ফুসসিলাত:৩০)
যখন প্রত্যেক মুসলমানের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখনই প্রতিটি পরিবারে , সমাজে তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হবে এভাবেই ঘরে-বাইরে তাওহীদ "একত্ববাদ" প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
আসুন মানুষকে কল্যাণের পথে (ইসলামের ছায়াতলে) ডাকি যথাযথপন্থায় ঐক্যবদ্ধভাবে! মুসলমানদের নসিহত করি নিজেদের সংশোধনের দিকে, বিদআ'ত ও শিরকমুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর গোলামির দিকে! ইসলাম ছাড়া বাকি সকল মতবাদই বাতিল। বাতিল আদর্শ বুকে লালন করে ও বাতিলের (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কম্যুনিজম communism কিংবা ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ) আনুগত্য, সমর্থন, সহযোগিতা ও প্রতিষ্ঠা করে মুসলমান থাকা যায় না।
"নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম। (সূরা ৩ আলে ইমরান:১৯)
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
"মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান করো হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সুন্দরভাবে। তোমার রাব্ব ভাল করেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী এবং কে সৎ পথে আছে।" (সূরা ১৬ নাহল:১২৫)
বিষয়: সাহিত্য
৮৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন