একত্ববাদীরাই আল্লাহ ও তার সাক্ষাতকে ভালোবাসে... (দরসে হাদীস)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২০ জুন, ২০১৭, ০২:৫৩:৩১ রাত

একত্ববাদীরাই আল্লাহ ও তার সাক্ষাতকে ভালোবাসে... (দরসে হাদীস)



عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: "مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ"

বাংলা: আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে, আল্লাহ্ও তার সাক্ষাত ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত ভালবাসে না, আল্লাহ্ও তার সাক্ষাত ভালবাসেন না। সূত্র: বুখারী: ৬৫০৮/৬১৪৩, মুসলিম: ২৬৮৬

Narrated Abu Musa: The Prophet (ﷺ) said, "Whoever loves the meeting with Allah, Allah too, loves the meeting with him; and whoever hates the meeting with Allah, Allah too, hates the meeting with him.

ব্যাখ্যা: আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালোবাসতে চাইলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, আর ভালোবাসার নিদর্শন হলো তার হুকুম আহকাম মেনে চলা। ইসলামের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্যই হলো প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। আল্লাহকে ভালোবাসা মানে ঈমানের পরিপূর্ণ স্বাদ লাভ করা। আল্লাহ বলেন-

যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে (সে জেনে রাখুক,) আল্লাহর নির্ধারিত কাল নিশ্চয় আসবে। আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আনকাবুত:৫]
অপর আয়াতে বলেন-

সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকেও শরীক না করে।’ (সূরা ১৮ কাহফ: ১১০)
এখানে তাওহীদপন্থী তথা একত্ববাদের গুরুত্বারূপ করা হয়েছে। যেমন অপর আয়াতে বলেন-

মানুষের মধ্যে কেউ আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যকে (আল্লাহর) সমকক্ষ বলে মনে করে এবং তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মত ভালবাসে, কিন্তু যারা বিশ্বাস করেছে, তারা আল্লাহর ভালবাসায় দৃঢ়তর। আর অন্যায়কারীরা যে সময় কোন শাস্তি প্রত্যক্ষ করে, তখন যদি বুঝত যে, সমুদয় ক্ষমতা আল্লাহর এবং আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর... (সূরা ২ বাকারা: ১৬৫)


মূলত মুমিনরা তার সাক্ষাতের প্রত্যাশা করে তাই তাদের কর্ম হয় পরকালমুখি আর কাফিররা তার সাক্ষাতের অস্বীকারকারী সুতরাং তাদের কর্ম হয় দুনিয়ামুখি।

এই হাদীসের ব্যখ্যা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. দিয়েছেন। যেমন-

উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহব সাক্ষাত লাভ করা ভালবাসে, আল্লাহ তা'আালাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে না, আল্লাহ তা'আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করেন না। তখন আয়িশা (রাঃ) অথবা তাঁর অন্য কোন সহধর্মিণী বললেনঃ আমরাও তো মৃত্যুকে পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ বিষয়টা এরূপ নয়। আসলে ব্যাপারটা হল এই যে, যখন মুমিন বান্দার মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার সম্মানিত হওয়ার সুসংবাদ শোনানো হয়। তখন তার সামনের সুসংবাদের চাইতে তার নিকট বেশি পছন্দনীয় কিছু থাকে না। সুতরাং সে তখন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করাকেই পছন্দ করে, আর আল্লাহ তা'আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর কাফিরের যখন অন্তিমকাল উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার সামনের আযাবের সংবাদের চাইতে তার কাছে অধিক অপছন্দনীয় কিছুই থাকে না। সুতরাং সে (এ সময়) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা অপছন্দ করে, আর আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। (বুখারী: ৬৫০৭, মুসলিম:২৬৮৩-২৬৮৪)



এই মর্মের হাদীস আবু মূসা আশাআরী (রা.) ছাড়াও উবাদাহ ইবনে সামিত, আয়িশা, আনাস, আবু হুরাইরা রা. থেকেও বর্ণিত আছে। দ্রষ্টব্য: তিরমিযী: ১০৬৬ ও ২৩০৯, মু'জামুল আওসাত: ২৯০৩, সুনানে দারেমী: ২৭৫৬, সুনানুস নাসাঈ: ১৮৩৬, মুসনাদে আহমাদ: ২২১৮৮

আল্লাহ আমাদের তার ভালোবাসায় সমুন্নত করুন। আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।।

ব্যখ্যা সংযোজন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

৭৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File