রমাযানের কিয়াম বনাম তারাবীহ

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৮ মে, ২০১৭, ০৩:১৯:৩৪ রাত

রমাযান এলেই শুরু হয়ে যায় তারাবীহর রাকাত নিয়ে ঝগড়া, তর্কাতর্কি, বাক-বিতন্ডা আর ছড়িয়ে যায় নানান বিভ্রাট। একদল অতি উৎসাহী হয়ে দেশে প্রচলিত ২০ রাকাত তারাবীহকে সুন্নাহর খেলাপ মনে করে ৮ রাকাত নিয়ে বেজায় খুশি! অথচ এই ৮ রাকাত আর রাসূলের সুন্নাহ মোতাবিক পড়া হয় না, পড়া হয় প্রচলিত স্টাইলেই। ৮ রাকাত হৌক ২০ রাকাত হৌক সালাতের সময়ের দীর্ঘতা হওয়া উচিত ছিল আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। সুতরাং-

রাকাত নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে নিজের সালাতকে পরিপূর্ণ করতে আসুন সচেষ্ট হই। আপনার পাশ্ববর্তী মসজিদের ইমাম ( কমিটি বা মুসুল্লিদের চাপে বা খুশি করতে) কোন গতিতে সালাত পড়াচ্ছেন তা নিয়ে কথা বলুন। নিজের মসজিদ থেকেই সংশোধন শুরু করুন।



বর্তমানে তারাবীহ্-র সালাত যেন "তাড়াতাড়ি-সালাত" হয়ে গেছে। কে কত তাড়াতাড়ি সালাত শেষ করতে পারে তা নিয়ে চলে তর্ক, মনে হয় তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলে কৃতিত্ব বাড়ে।



অথচ রাতের সালাতকে বলা হয়েছে "কিয়ামুল লাইল" বা রাতের দন্ডয়মান। সুতরাং তাড়াতাড়ি নয় বরং ফরয সালাতের চেয়ে বেশি ধীর-স্থিরতায় আর লম্বা কেরাতে সালাত পড়াই সুন্নাত। কিন্তু -

আমরা ফরয সালাতের সময় স্বাভাবিক থাকলেও তারাবীহর সালাতে এসে দৌড়াতে থাকি এবং বেতরের সময় আবার একটু স্থির হই। যা পুরোপুরি সুন্নাহর বিপরীত।

ফরয সালাত বাধ্যতামূলক তাই এটাকে পরিপূর্ণতার সাথে সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়েছে (সব শ্রেণীর মুসুল্লিদের প্রতি লক্ষ্য রেখে) আর বাকি সালাত নফল বা অতিরিক্ত যা বাধ্যতামূলক নয় সুতরাং তা আদায় করতে হয় পরিপূর্ণ দীর্ঘতা ও স্থিরতায় যেখানে মূখ্য হয়ে ওঠে কেরাত। যেহেতু কেরাতের জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাই এটাকে বলা হয় কিয়াম। হৌক সেটা তাহাজ্জুদ বা তারাবীহ।

আল্লাহ আমাদের হক্ব বুঝার তাওফিক দিন। আমীন!!

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযানের (রাতে) দাঁড়াবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরের (রাতে) দাঁড়াবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী, মুসলিম) দ্রষ্টব্য মিশকাত:১৯৫৮

বিষয়: সাহিত্য

১০৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383167
২৮ মে ২০১৭ দুপুর ০১:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : হতভাগা লিখেছেন : ৮/২০ রাকাত সেটাই পড়া হোক না কেন আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা সময় নিয়ে যদি পড়া তাহলে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ১১ বা ১২ টা বেজে যাবে ।

রাত ৩ টা ৪০ মিনিট সাহরীর শেষ সময় । সেহরীর জন্য রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ না পড়া খুব একটা ভাল কাজ হবে না । তাই সাহরী খাওয়ার সাথে কেউ যদি তাহাজ্জুদের নামাজ + ক্বুরআন তেলাওয়াত করতে চায় তাহলে তাকে মিনিমাম ২ টা বা সোয়া দুইটায় উঠতে হবে । সাহরী খেয়ে না ঘুমিয়ে ফযরের নামাজ পড়তে পড়তে ৪ টা সোয়া ৪ টা বেজে যায়। বিছানায় গেলেই কি সাথে সাথে ঘুম এসে যায় ? সকালে অফিস সাড়ে ৯ টায় (কারও কারও এরও আগে)।

অফিসে গ্যান্জাম বিহীনভাবে পৌছতে হলে সাড়ে ৭ টার আগে বাসে চাপতে হবে । রেডি হতে যদি আধা ঘন্টা লাগে তাহলে ম্যাক্সিমাম ৭ টা পর্যন্ত ঘুমানো যাবে।

তার মানে রাত সাড়ে ১১ টা বা ১২ টায় তারাবীর নামাজ পড়ে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে সাহরীর জন্য উঠার আগে খুব বেশী হলে ঘন্টা দুয়েক ঘুমানো যায় । সাহরীর পর ২ ঘন্টা। সর্বমোট ৪/৫ ঘন্টা ঘুমানো যায় ।

এই স্বল্প ঘুম নিয়ে দিনের বেলা ৯.৩০ - ৩.৩০ টা অফিসে করা সাথে ৩/৪ ঘন্টা রাস্তায় কাটানো কি শরীর খারাপ করার জন্য যথেষ্ট না ?

শরীর খারাপ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই রোজা তরক হয়ে যাবার ভয় আসে।

আল্লাহ কি বান্দার জন্য এতই কঠিন করে দিয়েছেন রোজার বিষয়গুলো নাকি আমরা বান্দারা শো-অফ করতে গিয়ে ফরযকে গুরুত্ব না দিয়ে সুন্নতের উপর গুরুত বেশী দিয়ে ফেলি । আমরা এটা ভুলে যাই যে রোযা রাখা ফরয আর তারাবীহ পড়া সুন্নত । আমাদের এটা কি বিবেচনা করা উচিত না যে সুন্নত পালন করতে গিয়ে আমরা ফরয বা ওয়াজিবকে যেন খুইয়ে না বসি?

(আগের কমেন্টটা মুছে দিবেন , ভুলে শেষ না করতেই সেন্ড হয়ে গেছে)
৩০ মে ২০১৭ রাত ০২:৫২
316454
সামসুল আলম দোয়েল লিখেছেন : যখন আপনি কিয়াম করবেন, একবারই করবেন; হতে পারে রাতের প্রথমে বা শেষে। যেহেতু জামাত হবে সুতরাং প্রথমে কিয়াম করলেন আর সাহরি খাবেন সেই সময়ে যখন সাহরি খেয়ে ফযরের সালাত পড়া যায়। আল্লাহ বিষয় সহজ করেন আর বান্দাহ করে কঠিন.... যেহেতু নফল সেহেতু এর দীঘর্তা বেশি (কারো মন চাইলে বেশি রাকাত পড়বে বা কম, কিন্তু সাতের সৌন্দর্য থাকতে হবে ) ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File