গালি দেয়া ফাসেকি এবং সম্ভ্রমহানী করা হারাম

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০১:৪২:৫৬ রাত

শীতের সকাল। কুয়াশার কারণে দুরের জিনিস স্পষ্ট বুঝা যায় না। প্রতিবেশী এক কৃষক চাচা বিলের ওপাড়ে তার ক্ষেতে কাউকে কিছু করতে দেখে ভাবলো, কেউ তার ক্ষেত থেকে শষ্য চুরি করছে। কে ওই....বলে হাক ছাড়ার পর ওপাড় থেকে আসা উত্তর ভালো বুঝতে না পেরে আবারো চেঁচিয়ে বলতে লাগল- কোন ....পুতেরে মরিচ তুলস?

ওপার থেকে এবার ভেসে আসে: আব্বা আমি রুকন!

আমার জিভে আঘাত লাগে কিন্তু চাচার চেহারায় কোনো ভাবান্তর দেখলাম না, হনহন করে যে দিকে যাচ্ছিল সেদিকে চলে যায়। যারা অহরহ অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে ও গালি-গালাজ করে অনেক সময় নিজের ঘাড়েই এসে পড়ে, তবুও তারা শিক্ষা নেয় না।

আজকাল অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ বা গালি-গালাজ সহজলভ্য ও সহনশীল পর্যায়ে চলে গেছে। কারো কোনো বিকার নেই। অথচ একজন মুসলমানের ভাষা অশ্লীল হতে পারে না, সে গালি দিতে পারে না।



দাড়ি, জোব্বা, পাগড়ি পরিধান করে সুন্নাত জিন্দা করে অথচ খোদ মসজিদেই প্রকাশ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত এবং যাবতীয় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে।

মুমীন অশ্লীলভাষী হতে পারে না:

আল্লাহ বলেন-

বলুন, ‘আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে... (সূরা ৭ আরাফ:৩৩)

নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। (১৬:৯০)



ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুমীন খোঁটা দানকারী, অভিশাপ-কারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল-ভাষী হয় না।’’(তিরমিযী ১৯৭৭, আহমাদ ৩৮২৯)

প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।

[/b

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।”(মুসলিম:২৫৬৩,২৫৬৪)



[b]সর্বোত্তম মুসলমান:

আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (বুখারী:১১, মুসলিম:৪২)

গালি দেয়া ফাসেকী:

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’’ (বুখারী:৫৬৯৭ ও মুসলিম:৬৪)

কারো সম্ভ্রমহানী করবেন না: কথা ও কর্মের সমালোচনা করুন কর্মী বা বক্তার নয়!

ইদানীং ইউটিউব কি ফেসবুক সহ সকল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই দেখতে পারি আল্লাহর পথে আহ্বানকারী তথা বক্তাদের পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ-গালি-গালাজ এবং দোষ অনুসন্ধান। অনেকে ব্যাপারটা রাবীর (সনদের) দোষ ধরার মতো মনে করে এই পর্যায়ের গীবতকে বৈধ বলে থাকে অথচ সাধারণ সব পর্যায়ে ব্যাপারটা একই রকম নয়।

যদি কারো বক্তব্য, কথা, আচার-আচরণকে ইসলামী বহির্ভূত বা সুন্নাহর বিপরীত হলে ওই বিষয়টি নিয়ে দলিল ভিত্তিক আলোচনা হতে পারে ব্যাক্তির নাম উহ্য রেখেই। তবে প্রকাশ্যে শিরক-কুফরে লিপ্ত সর্বমান্য বা পীরদের নাম উল্লেখ হতে পারে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান হেফাযতের জন্য।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।”(আহমাদ:১২৯২৭ আবূ দাউদ:৪৮৭৮)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে [বিনা বিচারে] তা-ই বর্ণনা করে।’’(মুসলিম ৫, আবূ দাউদ ৪৯৯২)

নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের বা ফাসেক বলা:

আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি এ কথা বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন কোন মানুষ অন্য মানুষের প্রতি ‘ফাসেক’ অথবা ‘কাফের’ বলে অপবাদ দেয়, তখনই তা তার উপরেই বর্তায়; যদি তার প্রতিপক্ষ তা না হয়।’’ (বুখারী:৫৬৯৮)

মিথ্যে স্বপ্ন বা স্বপ্নীল কাহিনি:

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন ব্যক্ত করল, যা সে দেখেনি। [কিয়ামতের দিনে] তাকে দু’টি যব দানার মাঝে সংযোগ সাধন করতে আদেশ করা হবে; কিন্তু সে তা কস্মিনকালেও পারবে না। যে ব্যক্তি কোন জনগোষ্ঠীর কথা শুনবার জন্য কান পাতে, যা তারা আদৌ পছন্দ করে না, কিয়ামতের দিনে তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন [প্রাণীর] ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদেশ করা হবে, অথচ সে তা করতে পারবে না।’’ (বুখারী, রিয়াদুস সালেহীন:১৫৫২))

বিষয়: বিবিধ

১৭১৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382540
০৪ এপ্রিল ২০১৭ বিকাল ০৫:৪৩
হায়দার মহিউদ্দীন লিখেছেন : অনেক শিক্ষণীয় এবং সময়োপযোগী লেখা। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File