জিনের বাদশাহর ফোন

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২২ মার্চ, ২০১৭, ০৩:০৫:১৩ রাত

রাত তখন প্রায় ১টা। হালকা ঘুমের ভিতর ছিলাম। রিংটোন শুনে প্রচন্ড বিরক্তিতে মোবাইল সেটটা হাতে নিলাম। ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে মিহি স্বরে সালাম শুনতে পেলাম।মনে হলো সাত আসমানের ওপর থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পার হয়ে আওয়াজ আসছে। রাগতস্বরে জিগ্যেস করলাম- কে?

ওপার থেকে আরো মিহি স্বর ও ওয়াযের সুরে নসিহত করতে শুরু করল।

আমি আরো রেগে বললাম-কে?

বলল: আল্লাহর এক বান্দাহ!

আমি বললাম-পরিচয় কী? এতোরাতে ফোন দিয়েছেন কেন?

ওপার থেকে- বাবা! মুসলমানের তো আগে সালামের জবাব দিতে হয়।

আমি বললাম- আপনার পরিচয় দেন। এতো রাতে কোনো ভালো মানুষ অপরিচিত কাউকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে না।

ওপার থেকে শুধু সালামের জবাব চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে আমি কড়া ধমক দিলে ওপার থেকে শুরু হয় অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ! ততোক্ষণে মিহি ভাবটাও উধাও!

আপনারা নিশ্চয়ই এমন ধরণের অদ্ভুত বা ভৌতিক ফোন পেয়ে থাকেন? রাত বারোটার পর অতি মিহি স্বরে ও সুরেলাভাবে কখনো কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা কখনো ওয়াযের দ্বারা। কখনো জিনের বাদশাহর কাছ থেকে কখনো বা কোনো মাযারের খাদেমের কাছ থেকে। যে আপনার উপর থেকে ক্ষতির প্রভাব দুর করে দিবে বা আপনার কোনো কল্যাণ করার প্রতিশ্রুতি দিবে। আমি অবশ্য তেমন অফার পাবার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

একজন প্রকৃত মুমিন কখনো ধোঁকায় পতিত হয় না এবং সে কাউকে ধোঁকা দেয় না। অথচ আজ তারাই বেশি প্রতারণার শিকার! এখানে অশিক্ষিত-গরীবরাই নয় অনেক শিক্ষিতরাও প্রতারিত হন। এর কারণ হলো, মুসলমানদের সঠিক দ্বীন শিক্ষার অভাব।

আমার পরিচিত দুইজন শিক্ষিত মহিলা এমনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। একজন স্বামীর অমঙ্গল তাড়ানোর জন্য বিশ হাজার টাকা কথিত খাদেমের খিদমতে দেন স্বামীর অগোচরে (উনার স্বামী একজন আলেম) অপরজন প্রাইমারী ইস্কুলের শিক্ষক অতি লোভে পাঁচহাজার টাকা ফেক্সিলোড করে প্রতারিত হন।



কেন প্রতারিত হয় বা ধোঁকায় পড়ে: সাধারণত পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কলহ, মানুসিক অশান্তি, পরস্পরের প্রতি সন্দেহ ও ভালোবাসার ঘাটতির জন্যই আমরা বিভিন্ন প্রকারে অস্থিরতায় থাকি আর মুক্তির জন্য অদ্ভুত উপায় তালাশ করি। বিশেষ করে স্বামী বা স্ত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে বশিকরণের জন্য ভন্ডপীর, কবিরাজ, জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যায়। যদি আমরা সত্যিকারের মুমিন হতাম তাহলে কখনোই সাংসারিক অশান্তি, রোগ-শোকে, বিপদে অস্থির হয়ে ভন্ডদের কাছে না গিয়ে বরং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করতাম। কেননা ভালো বা মন্দ দ্বারা তিনি আমাদের পরীক্ষা করছেন।

﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةٗۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٣٥ ﴾ [الانبياء: ٣٥]

জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (২১:৩৫)



আল্লাহ ছাড়া কেউ ভবিষ্যত বলতে পারে না এবং কারো কাছে কল্যাণ অকল্যাণের ভান্ডার দেয়া হয় নি:



যখন কেউ অদৃশ্যের খবর দেয় বা ভবিষ্যত বলে বা গোপন কিছু বলে বা বলতে পারার কথা বলে তখনই মনে করতে হবে লোকটি ভন্ড। এই ধরণের লোকদের কাছ থেকে সব সময় দুরে থাকতে হবে। অথচ আমরা এই জাতীয় লোকদের প্রতি খুবই দূর্বল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো ব্যক্তি গণকের নিকট গেলে (বর্ণনাকারী মূসা তার হাদীসে বলেন) এবং তার কথা বিশ্বাস করলে......সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে তা থেকে দায়মুক্ত (অর্থাৎ ইসলামের গন্ডির বাইরে)। (আবু দাউদ:৩৯০৪)

তাঁরই কাছে আছে গায়েবের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। (সূরা আনআম:৫৯)

বল, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরই আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তাহলে তো আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী। (সূরা ৭ আরাফ:১৮৮)



আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি একই গর্ত থেকেদুইবার দংশিত হয় না। (বুখারী ৬১৩৩, মুসলিম ৬৯৯৮)

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। ( মুসলিম:১০১)

আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382383
২২ মার্চ ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
382388
২২ মার্চ ২০১৭ রাত ০৯:১৪
হতভাগা লিখেছেন : এই ২০০০০/৫০০০ টাকা মহিলারা তাদের স্বামীর পকেট থেকে মারিং করেছে । নিজের কামাই করা টাকা আকাজে ব্যয় করতে যে কারোরই বুক কাঁপবে।
382390
২২ মার্চ ২০১৭ রাত ১০:৩৬
মদীনার আলো লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
382394
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ১২:২২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ ইসলামই জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর মূল কারন। জাযাকুমুল্লাহ্

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File