সালাতে হাত কোথায় রাখবে? (মুস্তাহাব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি কেন?)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৯ মার্চ, ২০১৭, ০৪:৫১:৩০ রাত

সালাতে হাত কোথায় বাঁধবে? আহলে হাদিসরা (গালিবগ্রুপ) সালাতে বুকের উপর হাত বাঁধাই সহীহ আর নাভির নিচে কোনো সহীহ বর্ণনা নেই বলে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। অথচ মুস্তাহাব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

আসুন দেখি পূর্ববতী ইমামদের কী মত!

সালাতে ডানহাত বামহাতের উপর রাখা বা বাঁধা প্রসিদ্ধ এবং মুতাওয়াতির বর্ণনা। তবে কোথায় হাত রাখবে তা নিয়ে তিন ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়। বুকের উপর, নাভির উপর এবং নাভির নিচে।



১. ইমাম আবু হানিফা (রহ.)এর মতে, পুরুষেরা নাভির নিচে ও মহিলাগণ বুকের উপর।

২. ইমাম মালিক (রহ.) এর থেকে তিনটি মত পাওয়া যায়। হাত ছেড়ে দেয়া, হাত বুকের নিচে নাভির উপর, অথবা যে কোনো একটি।

৩. ইমাম শাফেয়ী (রহ.) থেকে ৩টি মত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মতে, বুকের নিচে নাভির উপর। দূর্বল দুটি মত হলো, নাভির নিচে ও বুকের উপর।

৪. ইমাম আহমদ (রহ.) থেকেও ৩টি মত পাওয়া যায়। নাভির নিচে, বুকের নিচে এবং দুটির মাঝে যে কোন একটি।

(দ্রষ্টব্য. মুবারকপুরীর تحفة الأحوذي)

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন: কেউ কেউ উভয় হাত নাভির উপর স্থাপন করার আর কেউ কেউ নাভীর নীচে স্থাপন করার অভিমত দিয়েছেন। তবে আলিমগণের নিকট এই উভয় সুরতেরই অবকাশ রয়েছে।(দ্রষ্টব্য: হাদীস নং ২৫২)

হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম বলেন- উভয় হাত রাখার স্থান সম্পর্কে রসূল (সাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে কিছুই বর্ণিত হয় নি। (দ্র: যাদুল মা'আদ)

সুনানে আবু দাউদের ৭৫৭ নং হাদীসে নাভির উপর ও নিচে,৭৫৯ নং হাদিসে বুকের উপর। (দুটি হাদিসই কারো কাছে সহীহ, কারো কাছে দূর্বল)



সহীহুল মুসলিমের বাবের শিরোনাম এসেছে-

باب وَضْعِ يَدِهِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الإِحْرَامِ تَحْتَ صَدْرِهِ فَوْقَ سُرَّتِهِ وَوَضْعِهِمَا فِي السُّجُودِ عَلَى الأَرْضِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ

তাকবীরে তাহরীমার পর বুকের নিচে কিন্তু নাভির উপরে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে এবং সাজদাহরত অবস্থায় উভয় হাত কাঁধ বরাবর মাটিতে রাখবে।

ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলেন, তিনি সালাত শুরু করার সময় দুই হাত তুললেন এবং তাকবীর বললেন। হাম্মামের বর্ণনায় আছে, তিনি দুই হাত কান পর্যন্ত উঠালেন; অতঃপর চাঁদরে ঢেকে নিলেন এবং ডান হাত বা হাতের উপর রাখলেন। তিনি যখন রুকু’তে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, উভয় হাত কাপড়ের ভিতর থেকে বের করলেন, অতঃপর উভয় হাত উত্তোলন করলেন, অতঃপর তাকবীর বলে রুকু’তে গেলেন, তিনি যখন "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" বললেন দু'হাত উঠালেন। তিনি যখন সাজদায় গেলেন, দু' হাতের মাঝখানে সাজদাহ করলেন (মুসলিম:৪০১, আবু দাউদ:৭২৩-৭২৬)

কম-বেশি শব্দে সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৪৭৭, নাসাঈ: ১২৬৫, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ সালাত অধ্যায়,সুনানুল কুবরা, আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ সহ ১২টি হাদীস গ্রন্থে হাদীসটি এসেছে।

সহীহ ইবনু খুযাইমাহর ৪৭৯ নং হাদিসে বুকের উপর কথাটি এসেছে।

মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহতে ১৬টি হাদিস আছে এর মধ্যে ৩টিতে নাভির নিচে। (বুকের উপরে কোনা বর্ণনা নেই)


ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রা) থেকে ডান হাত বাম হাতের উপর বাঁধার হাদিস এসেছে অসংখ্য সনদ আর কিতাবে। মুসান্নাফে ইবনে শাইবাতে নাভির নিচে কথাটি এসেছে। আর সহীহ ইবনে খুযাইমাহতে বুকের উপর কথাটি এসেছে। (কারো কাছে সহীহ কারো কাছে দূর্বল)

মূলত: ওয়ায়িল থেকে হাত বাঁধা সাব্যস্ত হয়, ছেড়ে দেয়া সুন্নাতের বিপরীত। আর তার থেকে নাভির নিচে আর বুকের উপর কথাগুলো মনে হয় সংযোজিত।



মূলত আমরা পূর্ববতী বিদ্বানদের থেকে যা পাচ্ছি তার সারকথা হচ্ছে- নাভির উপর বা নাভির নিচে যে কোনো স্থানে হাত রাখা যাবে। সুতরাং অহেতুক বাড়াবাড়ি কেন?

والله أعلم

বিষয়: বিবিধ

১০২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382325
১৯ মার্চ ২০১৭ সকাল ০৮:৫৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ডান্সিং সালাফি আর ডান্সিং হানাফি উভয়ই প্রবলেম!!
কাজ-কর্ম রেখে মসজিদে মসজিদে ফিতনা করে।
382327
১৯ মার্চ ২০১৭ সকাল ১১:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। এটা নামাজের ফরজ বা ওয়াজিব কিছু নয় যে এই নিয়ে ঝগড়া করতে হবে। তবু কিছু লোক বাড়াবাড়ি করে যায়।
382330
১৯ মার্চ ২০১৭ সকাল ১১:৩৭
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আমােদর মনষীরা এসকল বিষয় গুলি আগেই সমাধান করে গেছেন ।তার পরেও কথিত আহলে হাদীস নামধারীরা কাদের কে খুশি করার জন্য এই ফিতনা করতেছে , আল্লাহ মালুম ।
জাযাকাল্লাহ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File