পীর ধরার ২ নং অকাট্য দলীল (মগজধোলাই পর্ব:২)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৮ মার্চ, ২০১৭, ০২:০১:০৬ রাত
পীর ধরার ২ নং অকাট্য দলীল:
হক্কানী ও ভন্ড উভয় প্রকারের কাছেই পীর ধরার দলীল হলো সূরা ৯ তাওবার ১১৯ নম্বর আয়াত-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
বাংলা: হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।
তাফসীর: আল্লাহ তাআলা এখানে বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে তার শাস্তি থেকে বাচার ও জান্নাতের পথের পরিচয় দিচ্ছেন, বিশেষ করে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে বাচার উপায়। (তাবারী) "আল্লাহকে ভয় করা"-এর মানে হলো, ফরয আদায় করা ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলী থেকে বেচে থাকা। আর সত্যবাদীদের সাথে থাকো দুনিয়াতে। অধিকাংশ বিদ্বানদের মতে, সত্যবাদী বলতে নবী করীম সা. ও তার সাহাবীদের বুঝানো হয়েছে, অর্থ্যাৎ সাধারণ মুসলমানদের আদেশ করা হচ্ছে তারা যেন মুনাফিকদের সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকে এবং সত্যবাদী আবুবকর, উমর (রা) প্রমুখ সাহাবীদের সঙ্গী হয়। (তাবারী)
সত্যবাদিতার কারণে আল্লাহ তাআলা সেই তিনজন সাহাবী (রাঃ)-এর শুধু অপরাধই ক্ষমা করে দেননি; বরং তাঁদের তওবার কথা পূর্ববতী আয়াতরূপে অবতীর্ণ করেছেন। এই আয়াতে সত্যবাদীদের সাথে থাকা বা সত্যবাদী হতে বলা হচ্ছে (এর একটি কেরাত হচ্ছে, يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله وكونوا من الصادقين), অর্থ এই যে, যে ব্যক্তির মাঝে আল্লাহ-ভীতি থাকবে সে সত্যবাদীও হবে। আর যে মিথ্যুক হবে, জেনে রাখুন যে, তার অন্তর আল্লাহ-ভীতি থেকে খালি হবে।
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই সত্যকে অবলম্বন করবে। কেননা সত্য সৎ কর্মের দিকে ধাবিত করে আর সৎকর্ম ধাবিত করে জান্নাতের দিকে। কোন ব্যক্তি যদি সত্য বলতে থাকে এবং সত্যের প্রতি সদা মনযোগ রাখতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেও সিদ্দীক হিসাবে তার কথা লিপিবদ্ধ হয়।
তোমরা মিথ্যার থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা মিথ্যা অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়, আর অন্যায়নিয়ে যায় জাহান্নামের দিকে। কোন বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যার প্রতই তার খেয়াল থাকে এমন কি শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেও কাযযাব (অতি মিথ্যাবাদী) বলে তার নাম লিপিবদ্ধ হয়।(তিরমিযী:১৯৭১)
বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতের দিকে পৌছায়। আর মানুষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অবশেষে সিদ্দীক এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহামিথ্যাবাদী রূপে সাব্যস্ত হয়ে যায়। (বুখারী: ৫৭৪৩)
কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির মুরীদ হতে বলা হয় নি বরং ভালো লোকদের সাথে মেলামেশা করতে বলা হচ্ছে যাতে ঈমান ও আমলের সংরক্ষণ হয়। সাদেকীন বহুবচন, একবচন নয়। আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ বলবেন, ‘এ সেই (শেষ বিচারের) দিন; যেদিন সত্যবাদিগণকে তাদের সত্যবাদিতা উপকৃত করবে, তাদের জন্য আছে বেহেশত্ যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। এটি হল মহাসাফল্য।’ (সূরা ৫ মায়িদা:১১৯)(দ্রষ্টব্য: তাফসীরে তাবারী, কুরতবী, ইবনে কাসীর,বাগাভী,সা'দী)
পরহেযগার বান্দাহর পরিচয়ে আল্লাহ বলেন- যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমাপ্রার্থী।(সূরা ৩ আলে ইমরান:১৬-১৭)
সত্যবাদীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
বাংলা: বিশ্বাসী তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা ৪৯ হুজুরাত:১৫)
আল্লাহ আমাদের হক বুঝার তাওফীক দিন ও কুরআন-হাদীসের অপব্যখ্যা থেকে দুরে রাখুন! আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
৯২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন