সারারাত জেগে ইবাদত: সুন্নাহর মানদন্ডে
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০১ মার্চ, ২০১৭, ০১:৫৯:৩৩ রাত
তারীখে বাগদাদে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি একাধারে চল্লিশবছর এশার অযুতে ফযরের সালাত পড়েছেন এবং এক রাকাতে এক খতম কুরআন পড়তেন। এই ধরণের আরো ১৮ জনের মতো ব্যক্তির ব্যাপারে বক্তব্য পাওয়া যায় যে, তারা কেউ ৪ বছর কেউ ১২ বছর কেউ ২০ বা ৪০ বছর এশার অযুতে ফযরের সালাত পড়তেন। কেউ সারাবছর রোযা রাখতেন, কেউ এক রাকা'আতে বা দুই রাকা'আতে বা প্রতিরাতে এক খতম কুরআন করতেন। নিচে দেখবো রাসূলের সুন্নাহর কী বলে-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘ইবাদাতের অবস্থা জানার জন্য তাঁর স্ত্রীগণের নিকট এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘ইবাদাতের খবর শুনে তারা যেন তাঁর ইবাদাতকে কম মনে করলেন এবং পরস্পর আলাপ করলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা কোথায়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আগের-পরের (গোটা জীবনের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কিন্তু সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এ পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন এবং বললেন, তোমরা কী এ ধরনের কথাবার্তা বলছিলে? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশি পরহেয করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমিয়েও থাকি। আমি বিয়েও করি। সুতরাং এটাই আমার সুন্নাত (পথ), যে ব্যক্তি আমার পথ থেকে বিমুখ হবে সে আমার (উম্মাতের) মধ্যে গণ্য হবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং কোনো ইসলামী বিদ্বান এই ধরণের সুন্নাহর বিপরীত আমল করতে পারে না। কেননা এখানে দুই ধরণের ভুল দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমত একাধারে সারারাত জাগা আর দ্বিতীয়ত একই অযুতে কয়েক ওয়াক্তের সালাত পড়া। অথচ প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য নতুন অযু মুস্তাহাব।
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন-
আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার (বিদ্‘আত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই [বা কাজ শারী‘আতে আবিষ্কার করা যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ করেননি তা] বিদ্‘আত এবং প্রত্যেকটা বিদ্‘আতই ভ্রষ্টতা।(আহমাদ ১৬৬৯৪, আবূ দাঊদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনু মাজাহ্ ৪২।মিশকাত:১৬৫)
প্রতিরাতে কুরআন খতম:
আল্লাহ বলেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
আর কুরআন আবৃত্তি কর তারতীলের সাথে (ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।) (৭৩:৪)
তারতীলের সাথে কুরআন পড়লে প্রতি রাকাত দূরের কথা এক রাতেই খতম হবে না।
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (মুসলিম ৮১১)
তিনদিনের কমে কুরআন খতম করা রাসূলুল্লাহ সা. অপছন্দ করতেন। দ্রষ্টব্য_
আবু দাউদ: ১২৬০, মিশকাত ২২০১, আবু দাউদ ১২৬১, তিরমিযী:২৯৪৬, মিশকাত হা/২০৯০
বি. দ্র: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সহ অনেকেই বিভিন্ন মনিষীদের নামে এই ধরণের প্রচলিত কথা যা বিভিন্ন রেওয়াতে এসেছে তা বানোয়াট বলেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সারা রাত না ঘুমিয়ে ইবাদত করলে দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব আসবে,ঠিক মত দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে না ।
তখন এমন হবে যে - দিনে ঘুমিয়ে থাকবে আর রাতে জেগে থাকবে । এটা আল্লাহর বিধানেরই পরিপন্থী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন