তাফসীর: সূরা ২১ আম্বিয়া:১-৫ (রাসূলুল্লাহ সা. গণক বা কবি নন))

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৩:৫০:৪০ রাত

بسم الله الرحمن الرحيم (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি)

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ

২১:১. মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ ওরা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।



তাফসীর: আল্লাহর কাছে মানুষের জবাবদিহিতার সময় বা মানুষের হিসাব গ্রহণের সময় অতি সন্নিকটে। এখানে হিসাবের সময় বলতে কিয়ামত; যা প্রতি সেকেন্ড নিকটবর্তী হয়ে চলেছে। আর প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যু স্বস্থানে তার নিজের জন্য কিয়ামত। তাছাড়া বিগত যুগসমূহের তুলনায় কিয়ামত নিকটে; কারণ (বিশ্বসৃষ্টির পর হতে) যে সকল যুগ পার হয়ে গেছে তা অপেক্ষা অবশিষ্ট যুগ অতি অল্প।তাই নবী করীম (সাঃ) তাঁর নিজের ব্যাপারে বলেছেন যে, আমার আগমনকাল কিয়ামত সংলগ্নে। অর্থাৎ, আমার ও কিয়ামতের মধ্যে আর কোন নবী আসবেন না।

অথচ মানুষ ওর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হতে অমনোযোগী, পৃথিবীর চাকচিক্যে নিমজ্জিত (যা সেদিনকার জন্য ক্ষতিকর) এবং ঈমানের চাহিদা হতে উদাসীন (যা সেদিনকার জন্য কল্যাণকর)।

সূরা কমারে এসেছে-"কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।" [সূরা ৫৪ ক্বমার:১]

مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَبِّهِمْ مُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ

২১:২. যখনই ওদের প্রতিপালকের কোন নতুন উপদেশ আসে ওরা তা কৌতুকচ্ছলে শ্রবণ করে।



তাফসীর: যখনই কুরআনের নতুন কোনো সূরা বা আয়াত অবতীর্ণ হয় (উপদেশ ও নসিহত স্বরূপ) তখনই কাফেররা এমনভাবে শ্রবণ করে যেন তারা তা নিয়ে হাসিঠাট্টা, উপহাস ও খেলা করছে; অর্থাৎ তা নিয়ে তারা কোন চিন্তা-ভাবনা করে না।

لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ ۗ وَأَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِينَ ظَلَمُوا هَلْ هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ ۖ أَفَتَأْتُونَ السِّحْرَ وَأَنْتُمْ تُبْصِرُونَ

২১:৩. ওদের অন্তর থাকে অমনোযোগী। সীমালংঘনকারীরা গোপনে পরার্মশ করে, ‘এতো তোমাদেরই মত একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখে-শুনে জাদুর কবলে পড়বে?’



তাফসীর: তাদের অন্তর কুরআন থেকে গাফেল থাকে আর পরস্পরে বলে, এ তো একজন মানুষ। (যেহেতু আন্তরিকভাবে কুরআনের বিষয় নিয়ে ভাবে না) তাই নবীর মানুষ হওয়ার ব্যাপারটা তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া তারা এ কথাও বলে যে, তোমরা কি দেখ না, সে একজন জাদুকর? দেখে-শুনেও তোমরা তাঁর জাদুর ফাঁদে কেন পা দিচ্ছ?

নবীদের যাদুকর, গণক বা কবি বলা নতুন কিছু নয়, পূর্ববতীদের ধারাবাহিকতায় মক্কার কাফিররাও নবীকে যাদুকর বলত।

" লোকদের জন্য এটা কি বিস্ময়কর যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে সতর্ক কর এবং বিশ্বাসীদেরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট উচ্চ মর্যাদা। অবিশ্বাসীরা বলে, ‘এ ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর।’[সূরা ১০ ইউনুস:২] আরো দেখুন- সূরা ৩৮ স্বদ:৪;সূরা ৫১ যারিয়াত:৫২

قَالَ رَبِّي يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

২১:৪. সে বলল, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।’



তাফসীর: রাসূলুল্লাহ সা. বললেন- তিনি সমস্ত বান্দার কথা শ্রবণ করেন ও সকলের আমল সম্পর্কে সম্যক অবহিত। তারা যে মিথ্যা বলছ, তা তিনি শুনছেন আর রাসূলের সত্যতা ও যে দাওয়াত তাদের দিচ্ছেন তার যথার্থতা সম্পর্কে ভালোই জানেন।

وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা বাকাংশটি কুরআনে ৬টি আয়াতের শেষাংশে এসেছে।

পুনশ্চ: মদীনা, বসরা ও কুফার কিছু ক্বারী আদেশবাচক রূপে قُلْ رَبِّ তেলাওয়াত করেন আর মক্কার কিছু এবং কুফার সাধারণ কেরাত হলো- খবররূপে قَالَ رَبِّي তেলাওয়াতের পক্ষে।

بَلْ قَالُوا أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ بَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌ فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ كَمَا أُرْسِلَ الْأَوَّلُونَ

২১:৫. বরং ওরা বলে, ‘এ হল আবোল-তাবোল স্বপ্ন; বরং সে তা উদ্ভাবন করেছে, বরং সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের নিকট এক নিদর্শন আনুক; যেরূপ (নিদর্শন সহ) পূর্ববর্তীগণ প্রেরিত হয়েছিল।’



তাফসীর: গোপনে সমালোচনাকারী অত্যাচারীরা এতেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং তারা বলে, এ কুরআন তো অর্থহীন স্বপ্নের মত বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারার এক সমষ্টি। (কারো মতে, أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ মানে সন্দেহবাচক) বরং তা নিজের মনগড়া (স্বকল্পিত), বরং সে একজন কবি তথা এই কুরআন পথনির্দেশকারী গ্রন্থ নয়, কবিতাগুচ্ছ। অর্থাৎ, তারা কোন এক শ্রেণীর কথার উপর অটল নয়, বরং প্রত্যহ নিত্য নূতন পাঁয়তারা বদলায় এবং নূতন নূতন অভিযোগ আরোপ করে। সূরা সাফফাতে এসেছে-

_ এবং বলত, আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে বর্জন করব? [সূরা ৩৭ সাফফাত:৩৬] আরো দেখুন- ৫২:৩০; ৬৯:৪১

আর তারা নবুওয়্যতের সত্যতার জন্য নিদর্শনের দাবি করত; যেমন সামুদ জাতির জন্য উটনী ও মূসা (আঃ)-এর জন্য লাঠি ও উজ্জ্বল হাত ইত্যাদি। অথচ নিদর্শন দেখানো হলেও তারা ঈমান আনতো বরং বলতো এটা তো সুস্পষ্ট যাদু।

"তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত যাদু।"[সূরা ৫৪ কামার: ২]

আল্লাহ সূরা রা'দে বলেন- তোমার পূর্বেও আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছিলাম। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রসূলের কাজ নয়; প্রত্যেক নির্ধারিত কালের লিপিবদ্ধ গ্রন্থ আছে। [সূরা ১৩ রা'দ: ৩৮]

বিষয়: বিবিধ

১০৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File