তাফসীর: সূরা ২৯ আনকাবুত: ১৪-১৫ (নূহ আ.)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৩:০৫:৫২ রাত
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ নামে (শুরু করছি)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًا فَأَخَذَهُمُ الطُّوفَانُ وَهُمْ ظَالِمُونَ
১৪. আমি অবশ্যই নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম; সে ওদের মধ্যে অবস্থান করেছিল সাড়ে ন’শ বছর। অতঃপর বন্যা ওদেরকে গ্রাস করল; কারণ ওরা ছিল সীমালংঘনকারী।فَأَنْجَيْنَاهُ وَأَصْحَابَ السَّفِينَةِ وَجَعَلْنَاهَا آيَةً لِلْعَالَمِينَ
১৫. অতঃপর আমি তাকে এবং পানি-জাহাজের আরোহীদেরকে রক্ষা করলাম এবং বিশ্ব-জগতের জন্য একে করলাম একটি নিদর্শন।
তাফসীর: মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত নূহ আলাইহিস সালাম ছিলেন পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। তিনি ছিলেন দুনিয়াতে ১ম রাসূল।
নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যতঃ সভ্য হ’লেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।
নূহের কওম ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব ও নাস্র প্রমুখ মৃত নেককার লোকদের অসীলায় আখেরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের পূজা শুরু করে। এই পূজা তাদের কবরেও হ’তে পারে, কিংবা তাদের মূর্তি বানিয়েও হ’তে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়েস বলেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত’।[বুখারী মওকুফ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে এটি বর্ণনা করেন ‘তাফসীর’ অধ্যায় হা/৪৯২০।] আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।
নুহ আ.-এর দাওয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত আছে সূরা ৭১ নূহ-এর গোটা সূরাতে।
নূহ (আঃ)-এর লাগাতার দীর্ঘ দাওয়াতে তাঁর কওমের হাতেগোণা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান।
নূহের কওমের প্রতি প্লাবন ও গযবের ধারাবাহিক বর্ণনা এসেছে সূরা ১১ হুদ: ৩৭-৪৮ আয়াতে।
নূহের কিশতীতে কয়জন ঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাত পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কুরআনে বা হাদীছে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। অমনিভাবে কিশতীটি কত বড় ছিল, কিভাবে ও কত দিনে তৈরী হয়েছিল, এসব বিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হ’ল ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ। যার সঠিক কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী হযরত সামুরা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে সূরা ছাফফাত ৭৭ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, নূহের প্লাবন শেষে কেবল তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণই অবশিষ্ট ছিল।[তাফসীরে ইবনে কাসীর] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন যে, سام أبو العرب وحام أبو الحبش و يافث أبو الروم. ‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’।[আহমাদ হা/১৯৯৮২, হাকেম ২/৫৪৬ পৃঃ] ইবনু আববাস ও ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী মানব জাতি সবাই নূহের বংশধর’।[তিরমিযী হা/৩২৩০-৩১]
হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।আর নূহ আ.এর নাম এসেছে ৫০টি আয়াতে।
সূরা ৩ আলে ইমরান :৩৩-৩৪
সূরা ৪ নিসা:১৬৩
সূরা ৬ আন‘আম : ৬, ৮৪
সূরা ৭ আ‘রাফ: ৫৯, ৬৯, ১৩৩= ৩
সূরা ৯ তওবা: ৭০
সূরা ১০ ইউনুস: ৭১
সূরা ১১ হূদ: ২৫, ৩২, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮৯= ৮
সূরা ১৪ ইবরাহীম : ৯
সূরা ১৭ ইসরা: ৩, ১৭
সূরা ১৯ মারিয়াম : ৫৮
সূরা ২১ আম্বিয়া: ৭৬
সূরা ২২ হজ্জ : ৪২
সূরা ২৩ মুমিনূন: ২৩
সূরা ২৫ ফুরক্বান: ৩৭
সূরা ২৬ শো‘আরা: ১০৫, ১০৬, ১১৬
সূরা ২৯ আনকাবূত: ১৪-১৫
সূরা ৩৩ আহযাব : ৭
সূরা ৩৭ ছাফফাত: ৭৫, ৭৯
সূরা ৩৮ ছোয়াদ : ১২
সূরা ৪০ গাফের/মুমিন : ৫, ৩১-৩৩= ৪
সূরা ৪২ শূরা: ১৩
সূরা ৫০ ক্বাফ: ১২
সূরা ৫১ যারিয়াত: ৪৬
সূরা ৫৩ নাজম: ৫২
সূরা ৫৪ ক্বামার: ৯-১৬= ৮
সূরা ৫৭ হাদীদ: ২৬
সূরা ৬৬ তাহরীম: ১০
সূরা ৭১ নূহ: ১-২৮= ২৮। সর্বমোট = ৮১ টি আয়াত।
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন