তাফসীর: সূরা ২৯ আনকাবুত: ১২-১৩ (তৃতীয় পর্ব): পরকালে কেউ কারো বোঝা বহন করবে না
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৩:০০:৪৬ রাত
পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا اتَّبِعُوا سَبِيلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْ وَمَا هُمْ بِحَامِلِينَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِنْ شَيْءٍ ۖ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
১২. কাফিরগণ ঈমানদারদের বলে, ‘তোমরা আমাদের পথ অনুসরণ করো; আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব! কিন্তু ওরা তো তোমাদের পাপভারের কিছুই বহন করবে না। ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
তাফসীর: কাফিররা মিথ্যাবাদী, কেননা তারা দাবি করে- যদি তাদের ধর্ম তথা (প্রাক ইসলামী যুগের) পূর্বে অনুসৃত ধর্মে ফিরে যায়, তাহলে ওরা পাপের ভার বহন করবে, অথচ এটা কীভাবে সম্ভব যে, একজন আরেকজনের পাপের বোঝা বহন করবে!
অথচ কিয়ামতের দিন এমন হবে যে, সেদিন কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। এমনকি আত্মীয়রাও এক অপরের বোঝা বইবে না।(দ্রষ্টব্য: সূরা ফাত্বির: ১৮) সেখানে এক বন্ধু অপর বন্ধুর খোঁজ নেবে না। তাদের মধ্যে পৃথিবীতে যতই বন্ধুত্ব থাকুক না কেন। এখানেও উক্ত বোঝা বহনের কথা খন্ডন করা হয়েছে।
পরকালে কেউ কারো উপকারে আসবে না: অনেক ভন্ড পীরেরা দাবি করে থাকে, তারা তাদের মুরীদদের কবরে সাহায্য করবে, পরকালে সুপারিশ করবে, জান্নাতে নিয়ে যাবে..ইত্যাদি! অথচ কুরআনে বলা হয়েছে-
"হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং সেদিনকে ভয় কর, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না, সন্তানও তার পিতার কোন উপকারে আসবে না।আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং শয়তান যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে। (সূরা ৩১ লুকমান: ৩৩)
আল্লাহ আরো বলেন-
"সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।" (সূরা ৮০ আবাসা:৩৪-৩৭)
কেয়ামতে কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না এই সম্পর্কে আরো আয়াত:
৭০ তম সূরা মাআরিজ: ১০-১১; ২৩তম সূরা মুমিনুন: ১০১; সূরা ২ বাকারা: ৪৮
পরকালে কেউ কারো বোঝা বহন করবে না: আল্লাহ বলেন: "কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্মীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন।" (সূরা ৩৫ ফাতির: ১৮)
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَعَ أَثْقَالِهِمْ ۖ وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ
১৩. ওরা অবশ্যই নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং তার সঙ্গে আরও কিছু পাপের বোঝা। এবং ওরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই ওদেরকে প্রশ্ন করা হবে।
তাফসীর: কাফির নেতারা ও ভ্রষ্টতার দিকে আহবানকারীরা শুধু নিজেদের বোঝাই বইবে না; বরং তার সাথে ঐ সকল লোকদের পাপের বোঝার (সমপরিমাণ) ভার তাদের উপর বর্তাবে হবে, যারা তাদের চেষ্টায় পথভ্রষ্ট হয়েছিল। এ বিষয়টি সূরা নাহলের ২৫নং আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের মধ্যে আছে, ‘‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করে (দাওয়াত দেয়) সে ব্যক্তির ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ হবে। এতে তাদের সওয়াব থেকে কিছু মাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি অসৎ পথের দিকে আহবান করে সেই ব্যক্তির ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমাণ গোনাহর ভাগী হবে। এতে তাদের গোনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না।’’ (মুসলিম:২৬৭৪)
বিষয়: সাহিত্য
৮৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন