যিকরের দলীল ও কিছু ফযীলতপূর্ণ যিকর
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০৪:৫৪ রাত
যিকর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো স্মরণ করা। অর্থ্যাৎ মহান আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করার নামই ইসলামে যিকর হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশে যিকির, জিকির, জিগির উচ্চারণে স্বীকৃত। যিকর সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন-
“অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত: ৪৫)
তিনি আরো বলেন-
“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা: ১৫২)
অন্য জায়গায় বলেন-
“আল্লাহকে অধিক-রূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ: ১০ )
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা আহযাব:৪১-৪২)
মহান তা'আলা আমাদেরকে তাকে স্মরণের (যিকরের) পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন-
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ: ২০৫)
এই আয়াতর মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
১) যিকর করতে হবে মনে মনে (আন্তরিকতাটাই মূখ্য)
২) নম্রতা তথা আদবের সাথে
৩) সতর্কতা ও ভীতির সাথে।
৪) শব্দ উচ্চারণ করে নয়।
প্রচলিত যিকরের অবস্থা:
আমাদের দেশে প্রচলিত সুফিবাদী বা পীরদের তরীকার বিভিন্ন রকমের যিকরের শরীয়াতে কোনো দলীল নেই। যিকর একটি বড় ইবাদত সুতরাং এর স্বীকৃতি ও পদ্ধতি দুটোই হতে হবে রাসূলুল্লাহর সুন্নাহর মাপকাঠিতে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে,
‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’(রিয়াদুস সালেহীন: ১৭৩)
ওদের উদ্ভাবিত যিকরের কিছু নমুনা
১) জামাত সহকারে যিকর (রাসূলের সুন্নাহ দূরে থাক, সাহাবী, তাবেয়ীদের যমানাও জামাতে যিকরের প্রচলন ছিল না, তাও ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে)
২) কালেমার ভগ্নাংশ দিয়ে যিকর। যেমন ইল্লাল্লাহ (এটার পক্ষে দলীল তো দূরের কথা, আকলেরও পরিপন্থী)
৩) শুধূ আল্লাহ আল্লাহ বলা (শুধু আল্লাহ বলে যিকরের কথা রাসূল ও সাহাবীদের থেকে নেই।)
৪) যিকরের নামে শিরকী, কুফরী গীত গাওয়া
৫) বিভি্ন্ন রকম নাচের তালে, অঙ্গভঙ্গী প্রদর্শন করে যিকর।
৬) জবান বন্ধ করে যিকরের নামে হো হো করা।
৭) বাদ্যের তালে তালে যিকর। (শেষের গুলো তো ইসলামের নামে তামাশা, ইসলামে এদের কোনো স্থান নেই।)
যিকর যেমন আল্লাহ প্রশংসামূলক কিছু উচ্চারণ করে হয় তেমনি নানান সময়ে পঠিত দুআও যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া কুরআন তেলাওয়াত, আযান,সালাতকেও কুরআনে যিকর বলা হয়েছে।
কিছু যিকরের কালাম বা বাক্য: এগুলো স্বশব্দে উচ্চারণ করে, অনুচ্চস্বরে বা মনে মনেও পড়া যায়।
১. سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ العظيمِ
(সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু’টি কলেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।” (বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪)
২.سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أكْبَرُ،
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা (সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার। (অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান) পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।”
৩. لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ؛ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ،
“লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর।’
যে ব্যক্তি এই দো‘আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার একশ’টি গুনাহ মোচন করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে তবে।”(বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৫) অপর বর্ণনায় আছে-দিনে দশবার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি ইসমাইলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।” (বুখারী ৬৪০৪, মুসলিম ২৬৯৩)
৪.سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “ আমি কি তোমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথা কি তা জানাব? আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হল, ‘সুবহানাল্লা-হি অবিহামদিহ’ (অর্থাৎ আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)” (মুসলিম: ২৭৩১)
রাসূল সা. আরো বলেন-
“যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।” (রিয়াদুস সালেহীন: ১৪১৮)
৫.لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، وَالحَمْدُ للهِ كَثيراً، وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَالِمينَ، وَلاَ حَولَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ العَزِيزِ الحَكِيمِ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, আল্লাহু আকবারু কাবীরা, অলহামদু লিল্লাহি কাসীরা, অসুবহানাল্লাহি রাবিবল আ’লামীন, অলা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আযীযিল হাকীম।’ (মুসলিম: ২৬৯৬)
বিষয়: বিবিধ
১২৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন