জন্মদিন আর জন্মবার্ষিকী: ইসলামের দৃষ্টিতে পালনীয় ও বর্জনীয়
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:২৪:০৪ রাত
জন্মদিন আর জন্মবার্ষিকী: ইসলামের দৃষ্টিতে
মুসলমান হিসেবে আমাদের যাবতীয় কাজ হবে শরীয়াতের মাপকাঠিতে। নিজেদের মনগড়া বা যুক্তিনির্ভর ধর্ম পালনের সুযোগ ইসলামে নেই। ইবাদত হৌক আর সামাজিক রীতি হৌক সবক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ [ )(الحشر: ٧]
অর্থাৎ “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশ্র:৭)
তিনি আরো বলেন-
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান :৩১)
মুক্তির পথ সুন্নাহ আর গোমরাহীর পথ বিদ'আহ:
আবূ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।’’ (আবূ দাউদ ৪৬০৭, দারেমী ৯৫)
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেছেন: নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা।’’ (মুসলিম ৮৬৭, নাসায়ী ১৫৭৮)
জন্মদিন ও জন্মবার্ষিকী: শরীয়াতের মাপকাঠিতে
ইসলামে জন্মদিন পালন করা যাবে কী-না তা নিয়ে খামোকাই বিতর্ক সৃষ্টি হয়ে আসছে। অথচ আমরা কুরআন-হাদীস ভালো করে অধ্যয়ন করলেই এর সমাধান পেয়ে যেতাম।
রাসূলের জন্মদিন পালন:
রাসূলুল্লাহ সা. তার নিজের জন্মদিন সম্পর্কে বলেন-
عَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم سُئِلَ عَنْ صَومِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ، فَقَالَ: «ذَلِكَ يَومٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَومٌ بُعِثْتُ، أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ». رواه مسلم
আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সোমবার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “ওটি এমন একটি দিন, যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, যেদিন আমি (নবীরূপে) প্রেরিত হয়েছি অথবা ঐ দিনে আমার প্রতি (সর্বপ্রথম) ‘অহী’ অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (মুসলিম: ১১৬২, দ্রষ্টব্য' রিয়াদুস সালেহীন: ১২৬৩)
এই হাদীসের মাধ্যমে আমরা ৪টি বিষয় জানতে পারলাম। ১) জন্মদিন মানে জন্মবার (সপ্তাহান্তে আসে) আর
২) রাসূলুল্লাহ সা. তার জন্মদিনে রোযা রাখতেন।(সাহাবীদের রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন মর্মে হাদীস পাওয়া যায় না)
৩) কেউ যদি নিজের জন্মদিন পালন করতে চায় তাহলে সে ঐ দিন (প্রতি সপ্তাহে) রোযা রাখবে। (আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ)
৪) মুসলমানদের প্রতিটি কাজই হবে ইবাদতমুখী।
আসলে জন্মদিন আর জন্মবার্ষিকী যে এক নয়, তা অনেকেই জানি না। বিশ্বে প্রচলিত জন্মদিন মানে হলো, জন্মবার্ষিকী (বছরে বা চার বছরে একবার)। আর জন্মদিন হৌক আর বার্ষিকী হৌক তা আনন্দ উৎসবের সাথে (আধুনিকতার নানান উপকরণ মিশিয়ে)পালন করা ইসলামে বা সাহাবী-তাবেয়ীদের কর্ম দ্বারা স্বীকৃত নয়। বরং একজন মুসলমান ইবাদত পরিপন্থী কোনো কাজই করতে পারে না।
সুতরাং প্রচলিত জন্মবার্ষিকী (রাসূলের নামে মীলাদুন্নবী, জসনে জুলুস) আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের জন্য তা-ই যথেষ্ট যা রাসূল সা. করেছেন।
আসুন আমরা সঠিক দ্বীনকে বুঝি, দ্বীনের পথে অবিচল থাকি। আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
১২৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন