আসুন নিজেকে সংশোধন করি-৫ (গীবত করা হারাম)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১১ জুন, ২০১৬, ১২:২৮:৪৭ রাত
চলছে আত্মশুদ্ধির মাস রমাদান! আমরা রোযা রাখছি, মসজিদ সরগরম করে তুলছি। সাথে সাথে আরেকটি কাজও করছি- মসজিদে বসে (সালাতের অপেক্ষায়) সাবলীলভাবে আর অবলীলায় পরনিন্দা/পরচর্চা করছি।
কুরআন ও হাদীসে যে সমস্ত নিষিদ্ধ বিষয়ের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি আর পরকালে নির্দিষ্ট শাস্তির কথা এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই পরচর্চা(গীবত)। কারো অনুপস্থিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা বা গোপনীয় মন্দটাকে প্রকাশ করে দেয়া। আমরা অনেক নেকী অর্জনের জন্য কত কিছুই না করছি! কষ্ট করে রোযা রাখছি, সালাত আদায় করছি, যিকির করছি, দুআ দুরুদ পড়ছি, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করছি; ভাবছি আহ! কত নেকী নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবো। এমন যেন না হয়ে যায়-
অগণন পাহাড় কিংবা সাগর সম নেকী নিয়ে পরকালে গিয়ে দেখা গেল পাওনাদারের পাওনা মিটিয়ে সব নেকী চলে গেল, তারপরও পাওনা না মিটানোর ফলে পাওনাদারদের গুনাহ নিজের কাঁধে চাঁপিয়ে দোযখে ফেলা হলো!! রাসূলুল্লাহ সা. এমন লোকদেরই বলেছেন তারা হলো "মুফলিস"
আমরা যেন মুফলিসের কাতারে না পড়ি। এখনই সংশোধন হই। পরর্চচা করে পরের পাপ নিজের ঘাড়ে বহন না করি।
গীবতের পরিচয়:
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।”(মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাউদ ৪৮৭৪, আহমাদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমী ২৭১৪)
গীবত/পরচর্চার গভীরতা:
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” (রিয়াদুস সালেহীন: ১৫৩৩, আবু দাউদ: ৪৮৭৫)
গীবতের পরিণাম: মহান তাআ'লা বলেন-
"তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।(সূরা হুজুরাত: ১২ )
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।” (বুখারী ৬৫৮১, ৭৫১৭, আবূ দাউদ ৪৭৪৮, ৪৮৭৮)
গীবত মুসলমান পরিচয়ের অন্তরায়:
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (বুখারী ১১, মুসলিম ৪২)
জান্নাতের অন্তরায়:
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী ৬৪৭৭, ৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮)
সুতরাং প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা! যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোন বস্তু নেই।
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
টুডে ব্লগে হাসুবুর খুব সমালোচনা হয় । গতকালের গ্রেফতারের ঘটনায় এটা আরও বেড়ে গেছে । এটাও তো গীবতের আওতায় পড়ে নাকি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন