আসুন নিজেকে সংশোধন করি-৪ (সালাতের গুরুত্ব)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৯ জুন, ২০১৬, ০৬:৪৮:৫৪ সন্ধ্যা

রমাদানের বরকতময় সময় আমাদের মাঝে। এই মাসে অনেক বেনামাযীও মসজিদে আসে বা নামাজ পড়ে। তবে এক্ষেত্রে অনেককেই দেখা যায় তারা অন্য সালাতের ব্যাপারে উদাসীন আর তারাবীর ব্যাপারে কঠোর। তারপরও অনেক মুসলমান এই মাসে নামাজও আদায় করে না অথচ রোযা রাখে। আবার অনেকে রোযাও রাখে না। আসুন এই রমাদানেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিই-

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায় করবো।



সালাতের গুরুত্ব:

পবিত্র কুরআনে ৮২ বার সালাতের কথা এসেছে এবং ১৪ বারের বেশি সালাত কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

"আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে ।পূণ্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।" (সূরা ১১ হুদ: ১১৪)
তিনি আরো বলেন-

"নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে"। (সূরা ২৯ আনকাবুত: ৪৫)
তিনি বলেন:-

তোমরা নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) নামাযের প্রতি। (সূরা ২ বাকারাহ:
২৩৮)

তিনি আরো বলেন-

আর পরিতাপ সেই নামাজিদের জন্য, যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী। (সুরা মাঊন:৪-৫)



সালাত ত্যাগ করা কুফুরী:

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হল সালাত ত্যাগ করা। (মুসলিম:১১৬ )

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাদের (কাফের/মুনাফিকদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায (পড়া)। অতএব যে নামায ত্যাগ করবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে।” (তিরমিযী ২৬২১, নাসায়ী ৪৬৩, ইবনু মাজাহ ১০৭৯, আহমাদ ২২৪২৮, ২২৭৯৮)

সর্বপ্রথম সালাতের হিসেব নেওয়া হবে:

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে তার নামায। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামায) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরয (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে। (আবূ দাউদ ৮৬৪, তিরমিযী ৪১৩,)

বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।”(বুখারী:৫৫৩)

সালাত যে ত্যাগ করে সে মুনাফিক:

আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করবে, তার উচিত, সে যেন এই নামাযসমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে, যেখানে তার জন্য আযান দেওয়া হয় (অর্থাৎ মসজিদে); কেননা, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিমিত্তে হিদায়েতের পন্থা নির্ধারণ করেছেন। আর নিশ্চয় এই নামাযসমূহ হিদায়েতের অন্যতম পন্থা ও উপায়। যদি তোমরা (ফরয) নামায নিজেদের ঘরেই পড়, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোক নিজ ঘরে নামায পড়ে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করবে।

আর (মনে রেখো,) যদি তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার কর, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা পথহারা হয়ে যাবে। আমি আমাদের লোকদের এই পরিস্থিতি দেখেছি যে, নামায (জামাতসহ পড়া) থেকে কেবল সেই মুনাফিক (কপট মুসলিম) পিছিয়ে থাকে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। আর (দেখেছি যে, পীড়িত) ব্যক্তিকে দু’জনের উপর ভর দিয়ে নিয়ে এসে (নামাযের) সারিতে দাঁড় করানো হতো।’ (মুসলিম: ৬৫৪)

উসমান ইবনে ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি ফরয নামাযের জন্য ওযু করবে এবং উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নমরতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকু’ সমাধা করবে। তাহলে তার নামায পূর্বে সংঘটিত পাপ-রাশির জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যাবে; যতক্ষণ মহাপাপে লিপ্ত না হবে। আর এ (রহমতে ইলাহির ধারা) সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।” (মুসলিম ২২৮, নাসায়ী ১৪৬, ১৪৭, ৮৫৬)

সালাত ত্যাগী অবশ্যই প্রদীপ্ত আগুন তথা জাহান্নামের সন্নিকটেই অবস্থান করছে। তাই আমাদের উচিত খুব তাড়াতাড়ি তওবা করা এবং দ্রুত সালাত প্রতিষ্ঠা করা এবং সালাতে যত্নবান হওয়া।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন, ঈমানের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!!

বিষয়: বিবিধ

৮৭৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371592
১০ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:২৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পবিত্র কুরআনে ৮২ বার সালাতের কথা এসেছে ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File