শাবান মাসের গুরুত্ব ও করণীয়

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২১ মে, ২০১৬, ০২:২৬:১১ রাত

শা'বান মাসের ফযিলাত ও করণীয়:



আরবী/ হিজরী/ চন্দ্রমাসের ৮ম মাস হচ্ছে শা'বান। বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র রজব ও শাবানে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমজানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শাবানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূল (সা.) পবিত্র শাবানের (দিন, তারিখ হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)। অনেক হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে_ হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র শাবানের চাঁদের দিন, তারিখের হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

সুতরাং পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখাটাই সুন্নত এবং মুমিনদের করণীয়। পবিত্র শাবান মাসে রাসূলুল্লাহ সা. অধিকহারে নফল রোজা রেখেছেন তাই আমাদেরও রাখা উত্তম।



এ মাসে করণীয়_

১. দুআ করা: এ মাসের আগের মাস হচ্ছে রজব মাস। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের চাঁদ উঠলে দোয়া করতেন-

আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগানা রামাদান….হে আল্লাহ পরওয়ারদিগারে আলম! তুমি আমাদের জীবনে রজব ও শাবান মাসে নানা বরকত ও প্রাচুর্য দান কর আর রহমত মাগফিরাত নাযাতের মাস রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’

এ জন্য পবিত্র রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর রমজানের চাঁদ দেখা পর্যন্ত উপরোলি্লখিত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত বা মুস্তাহাব। সুতরাং তা এ মাসেও করা যাবে ৷

২. স্বাভাবিকভাবে সকল ইবাদতই করা: যেমন এর পূর্বের মাস গুলোতে করা হয়েছে, তেমনি তা এ মাসেও করাতে শরীয়তের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই শুধুমাত্র মধ্য শা’বানের পর হতে সিয়াম পালন ব্যতীত। কারণ রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “শা’বান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা আর রোযা রেখ না। (মুসনাদ আহমাদ (২/৪৪২), আবু দাউদ)

৩. হিজরী মাসের হিসাব রাখা: এই যুগে তো হিজরী মাসের হিসাব রাখার লোকের খুবই অভাব। ইংরেজি তারিখের হিসাব সকলেই জানি। কিন্তু স্মরণ রাখা দরকার যে, ইসলামের সকল আমলই হিজরী বা চান্দ্র মাসের হিসেবে হয়ে থাকে। তাই শা’বানের দিন, তারিখ গণনা করা দরকার, যেন রমযান মাসের শুরুটা সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। এবং রমযানের বরকত হাসিল করা যায়। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমযানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শা’বানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন; রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বানের (দিন, তারিখ হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)

৪.বেশি বেশি নফল রোযা রাখা: শা’বান মাসে অধিকহারে নফল রোযা রাখা উত্তম। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। উম্মে সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; আমি নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শা’বান ও রমযান ব্যতীত দুই মাস একাধারে রোযা রাখতে দেখিনি। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন; আমি নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শা’বান মাসের মত এত অধিক (নফল) রোযা রাখতে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছুদিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে পুরো মাসটাই তিনি নফল রোযা রাখতেন। (জা‘মে তিরমিযী ১/১৫৫)।

তবে খুবই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ১৫ই শা’বান দিনে রোযা ও পূর্বের রাতকে বিশেষ গুরুত দিয়ে আমল করার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তাই যারা অন্যান্য দিন বা রাতে নফল ইবাদত করেন না, তাদের জন্য শুধু এই রাতকে নির্দিষ্ট করে ইবাদত করা বিদআত হবে। কেননা রাসূল (সা.) হতে মধ্য শা’বানের রাতের ইবাদত সম্পর্কে এবং রোযা রাখার স্বপক্ষে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কোন সহীহ বা মারফু কিংবা মুত্তাসিল হাদীস বর্ণিত হয়নি।

৫.আইয়ামে বীযের রোযা: যারা প্রতি মাসে “আইয়ামে বীয” এর তিন দিন অর্থাৎ ১৩, ১৪ ও ১৫ তারীখে নফল সিয়ামে অভ্যস্ত তারা এ মাসেও উক্ত নিয়তেই সিয়াম পালন করবেন।

৬. যারা প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল সিয়ামে অভ্যস্ত তারা এ মাসেও উক্ত দিনগুলিতে সিয়াম পালন করবেন যদিও তা কখনও ভাগ্যক্রমে ১৫ শাবান হলেও তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে না, যদি তা শবে বরাতের নিয়তে পালন না করা হয়।

৭. ক্বাযা সিয়াম আদায় করা: আবু সালামা রায়িযাল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি, আমার রমযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শা’বান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না (বুখারী, মুসলিম) ইয়াহইয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।)

৮. রাতে কিয়াম: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়া। যারা বছরের অন্যান্য সময় পড়তে পারেন না, তারাও এই মাসে নিয়মিত না হলেও পড়বেন। কেননা দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে শুধু মধ্য শাবানের রাতে নফল সালাত না পড়ে প্রতিরাতেই কিছুক্ষণ আল্লাহর জন্য দাঁড়ানো উত্তম। কেননা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মহান প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন,‘কে আছে যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে যে আমার নিকট কিছু চায় আমি তাকে দান করব এবং কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করব’।-(বোখারি : ৬৯৮৬; মুসলিম;মিশকাত,হাদীস নং-১১৫৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে বিদ’আত মুক্ত ইবাদত করার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥

বিষয়: বিবিধ

১৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File